অধ্যাপক ফারুকের পক্ষে ৬৬ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের বিবৃতি

  © ফাইল ফটো

দুধ নিয়ে গবেষণার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের সদ্য সাবেক পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ৬৬ জন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বিবৃতি দিয়েছেন।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের ৬৬ জন শিক্ষকের পক্ষে গণমাধ্যমে এই বিবৃতি পাঠায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হক। বিবৃতি প্রদানকারী শিক্ষকরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক গীতি আরা নাসরীন, সামিনা লুৎফা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, মোহাম্মদ মজিবুর রহমান, কাবেরী গায়েন, অর্পিতা শামস মিজান, জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ, রায়হান রাইন, স্বাধীন সেন, সাহিদ সুমন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শেহরীন আতাউর খান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌভিক রেজা, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোবাশ্বার হাসান প্রমুখ।

বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করেছি যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টারের ‘সদ্য-সাবেক’ পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি গবেষণা কার্যক্রমকে ঘিরে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি এবং অন্যায়ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অধ্যাপক ফারুক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং গবেষক। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত অনুদানের সাহায্যে অধ্যাপক ফারুক বিভিন্ন কোম্পানির বাজারজাতকৃত দুধে অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়ার দাবি করেছেন।

জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগজনক এই ঘটনাটি প্রচারে আসা মাত্রই সংশ্লিষ্ট কোম্পানি এবং সরকারি আমলাদের কেউ কেউ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ভাষায় অধ্যাপক ফারুককে আক্রমণ করছেন এবং চাপ প্রয়োগকরছেন বলে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্নসূত্রে আমরা জানতে পেরেছি। ইতিমধ্যেই ফার্মেসী অনুষদভুক্ত চারটি বিভাগের চেয়ারম্যান এই গবেষণার দায়ভার থেকে নিজেদের মুক্ত করতে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়েছেন। এই অবস্থায় অধ্যাপক ফারুকের মতো আমরাও বিপন্ন বোধ করছি।

এই পরিস্থিতির মুখেও অধ্যাপক ফারুক দ্বিতীয় দফা পরীক্ষায় আবারো দুধের নমুনায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন। জনস্বার্থের কথা বিবেচনায় পরীক্ষার এই ফলটি তিনি প্রকাশ করেছেন, এবং এই পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে তিনি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে তিনি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ, সেই দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে এই গবেষণারফলাফল প্রকাশ করে তিনি নীতিনৈতিকতাবিরোধী কোন কাজ তো করেননি, বরং তার দায়িত্ব পালন করেছেন।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এই গবেষণার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, বিএসটিআই দুধের মাননির্ণয়ে ১৭ বছর আগে যে মানদ- নির্ধারন করেছিলো তা দুধের মান নির্ণয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। দুধে এন্টিবায়োটিকের উপস্থিতি নির্ণয়ের মতো কোনো পদ্ধতি বিএসটিআই-এর নেই। অধ্যাপকফারুক কর্তৃক এই গবেষণাটি প্রচারে না এলে জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত এই বিষয়টি অজানাই থেকে যেত। এই ধরনের গবেষণাকে উৎসাহিত করা যেখানে কাম্য ছিল, তা না করে উল্টো অধ্যাপকফারুককেই দোষী সাব্যস্ত করা হচ্ছে, তাকে বিভিন্ন অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা বলেন, অধ্যাপক ফারুকের গবেষণার ফলাফল নিয়ে সন্দেহ থাকলে সরকারি কর্তৃপক্ষ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে আরো গবেষণা ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দুধের মান নিয়ে জনমনে সন্দেহের অবসানঘটাতে পারতেন। তা না করে অধ্যাপক ফারুককে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে জনপ্রতিনিধি, সরকারি আমলা ও বিভিন্ন কোম্পানির দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা যে আচরণ করছেন তা বিশ্ববিদ্যালয়েরজ্ঞানচর্চা ও গবেষণার পরিবেশের জন্য এক বিরাট হুমকি। এই ধরনের আচরণ অব্যাহত থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও গবেষকেরা গবেষণার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন এবংবিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তচিন্তা ও নতুন জ্ঞান সৃজনের ক্ষেত্রটি আরো সংকুচিত হয়ে পড়বে।

তারা হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বায়ত্তশাসিত’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন এখানে অধ্যাপক ফারুককে কোনো সুরক্ষা ও সমর্থন তো দিচ্ছেই না, বরং নানাভাবে তার উপর আরো চাপ তৈরি করা হচ্ছে।

শিক্ষকরা অধ্যাপক ফারুকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মহলের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে জনস্বাস্থ্যের সাথে সম্পৃক্ত এইসব বিষয়ে আরো গবেষণাকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যেযথাযথ পদক্ষেপ নিতে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।


সর্বশেষ সংবাদ