অবশেষে সিনেটে ৫ ছাত্র প্রতিনিধি, উচ্ছ্বসিত সাধারণ শিক্ষার্থীরাও

  © ফাইল ফটো

প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তবে এবারের সিনেট অধিবেশন একটু অন্যরকম হয়ে এসেছে। কারণ প্রায় তিন দশক পর আজ সিনেট অধিবেশনে তাদের পক্ষে কথা বলার জন্য প্রতিনিধি থাকছেন।

জানা গেছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতের প্রতিফলনে পাঁচজন নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি রাখার বিধান রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে। তবে গত ২8 বছর ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই সিনেট সভা আয়োজনের মাধ্যমে নতুন উপাচার্য মনোনীত হয়েছেন।

তবে এবার স্বপ্ন দেখেছিল সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ধারণা ছিল- বিতর্ক থাকলেও যেহেতু ডাকসু নির্বাচন হয়েছে, তাই তাদের মধ্য থেকেই পাঁচ সদস্য সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করবেন। যাদের দ্বারা প্রতিফলিত হবে ছাত্রদের মত-অভিমতের। অবশ্য হঠাৎ করেই সেই সদস্য মনোনীত হওয়ায় অনেকে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।

ডাকসুতে আলোচনা ছাড়াই সিনেট সদস্য হিসেবে এসেছেন ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। অন্যদিকে বাদ পড়েছেন সর্বাধিক ভোট পেয়ে ডাকসুর এজিএস নির্বাচিত হওয়া সাদ্দাম হোসেন। কমিটিতে আছেন ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর, জিএস গোলাম রাব্বানী এবং সদস্য তিলোত্তমা সিকদার।

সিনেট অধিবেশনে ছাত্র প্রতিনিধি থাকার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সৈয়দ সাদাত বলেন, ‘দীর্ঘদিন সেখানে ছাত্র প্রতিনিধি ছিল না। এবার থাকছে, এটা ভালো দিক। তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার ও সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলবেন বলে আশা করছি।’ তবে এ প্রতিনিধি বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

অপর শিক্ষার্থী ইমন বলেন, ‘এটা ভালো দিক। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এথন সমস্যার সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের।’

জানা গেছে, আজকের অধিবেশনের কার্যসূচিতে ৬টি বিষয় রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- উপাচার্যের অভিভাষণ, কোষাধ্যক্ষের বাজেট উপস্থাপন, পূর্ববর্তী অধিবেশনের কার্য-বিবরণী অনুমোদন, ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক বিবরণী বিবেচনা, জগন্নাথ হল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন এবং ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ছয়জনের একটি প্যানেল অনুমোদন।

অধিবেশনের জন্য ছাপানো লিখিত প্রশ্নোত্তরে দেখা গেছে, সিনেটের দুই জন সদস্য সিনেট কর্তৃক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করে অনুষ্ঠিত হবে জানতে চেয়েছেন। সিনেট সদস্য রামেন্দু (কৃষ্ণ) মজুমদার জানতে চেয়েছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের প্রধান দুটি দায়িত্ব হচ্ছে বার্ষিক বাজেট পাস ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা। আমরা রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট কর্তৃক নির্বাচিত সিনেট সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত উপাচার্য নেই। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ সিনেট গঠিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই একাডেমিক বর্ষের শুরুতে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই মাসেই সিনেট কর্তৃক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচিত হওয়া আইনগত ও নৈতিক দিক থেকে আবশ্যক। উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেট অধিবেশন কবে দেওয়া হবে?’

এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রয়েছে; পূর্ণাঙ্গ সিনেট গঠিত হয়েছে। যথাশীঘ্র সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ লিখিত প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে একইভাবে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পূর্বের উত্তর দেখতে বলেছেন।

এদিকে ডাকসুর সদস্য না হয়েও শোভন-সঞ্জিত সিনেট প্রতিনিধি হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে কয়েকদিন ধরেই সরগরম ফেসবুক দুনিয়া। তবে তথ্য ঘেঁটে দেখা গেছে, তাদের সিনেট সদস্য হওয়ায় আইনগত কোনো বাধা নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশের ২০ (১) (এম) ধারায় বলা হয়েছে, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদই (ডাকসু) ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল মনোনীত করবেন।’ মূলত তারাই সিনেট সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।

উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান এ বিষয়ে বলেছিলেন, ডাকসু বহির্ভূত সদস্য সিনেট মেম্বার হতে পারে। ডাকসুর যারা প্রতিনিধি আছেন; তারা চেয়েছেন বলেই এটা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আইনগত কোনো সমস্যা নেই বলেও মত দেন তিনি।

তবে ডাকসু নেতারা বলছেন, আইনগত বাধা না থাকলেও বিষয়টি নিয়ে ডাকসুতে সিদ্ধান্ত হওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু সেটি হয়নি। সুতরাং তাদের সিনেট মেম্বার হওয়ার বিষয়টি বৈধ নয়।

ভিপি নুরুল হক নুর বলেছিলেন, ‘আমাদের মধ্যে সিনেট প্রতিনিধি মনোনয়েনের ক্ষেত্রে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছিল, তবে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা চেয়েছিলাম পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধি পাঠাতে। কিন্তু ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রিত অংশ তড়িঘড়ি করে প্রশাসনের সহায়তায় এটা করেছে। ডাকসুর ফোরামে এমন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’

অন্যদিকে ডাকসুর ছাত্রলীগ অংশের নেতারা জানান, বিষয়টি নিয়ে ডাকসুতে আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশ সদস্য চাওয়ার ফলেই ওই ৫ জনকে মনোনীত করা হয়েছে। অন্যভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।


সর্বশেষ সংবাদ