আরেফিন সিদ্দিকের পথেই ভিসি আখতারুজ্জামান!

২ বছরে উপাচার্য প্যানেল না করে ঢাবি সিনেট অধিবেশন কাল

সাময়িকভাবে উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার প্রায় দুই বছর হতে চললেও উপাচার্য প্যানেল না করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এর অধ্যাদেশ ভঙ্গ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলছেন সিনেট সদস্যরা। সিনেট সদস্যদের দাবি এর মাধ্যমে ৬ মাসের মধ্যে সিনেট পূর্ণ করে উপাচার্য প্যানেল মনোনীত করার হাইকোর্টের আদেশও অমান্য হচ্ছে।

আগামীকাল ২৬ জুন ঢাবি সিনেটের বার্ষিক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। বার্ষিক অধিবেশনে আহ্বানকৃত লিখিত প্রশ্নে দুইজন সিনেট সদস্য উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন কবে হবে তা জানতে চেয়ে সুনির্দিষ্ট উত্তর পাননি।

১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের কাজ উপাচার্য নির্বাচন, ও বার্ষিক বাজেট অধিবেশন করা। সিনেট তিন সদস্যের উপাচার্যের প্যানেল নির্বাচন করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। রাষ্ট্রপতি এর মধ্যে থেকে একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।

কিন্তু আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবে সিনেট গঠিত হওয়ার পরও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের আগামীকালকের অধিবেশনে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের এজেন্ডা রাখেনি কর্তৃপক্ষ।

২০১৭ সালের ২৯ জুলাই সিনেট বৈঠকে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক উপাচার্য নির্বাচনে তিন সদস্যের প্যানেল মনোনীত করেন। কিন্তু এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৭ সালের ১০ অক্টোবর সেই বিশেষ সভা ও তিন সদস্যের উপাচার্য প্যানেলকে অবৈধ ঘোষণা করে। কোর্ট ছয় মাসের মধ্যে যথাযথভাবে সিনেট গঠন করে উপাচার্য প্যানেল মনোনীত করতে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়।

এর মধ্যেই ২০১৭ সালের ৪ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামানকে সম্পূর্ণ অস্থায়ীভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের আদেশ জারি করেন। ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, ৫ জন অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষ, পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধিসহ ১০৫ জন সদস্য নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট গঠিত। সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের আমলে সিনেটের ৫০টি পদ শূন্য ছিল। কিন্তু ২০১৮ সালের ২১ জানুয়ারি রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচন, ২০১৯ সালের ১১ মার্চ ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বর্তমান উপাচার্যের আমলে সিনেট পূর্ণ হয়েছে।

পূর্ণাঙ্গ সিনেট নিয়ে আগামীকাল বুধবার (২৬ জুন) বিকেল তিনটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এই অধিবেশনের কার্যসূচিতে ৬টি বিষয় রাখা হয়েছে। এগুলো হলো- উপাচার্যের অভিভাষণ, কোষাধ্যক্ষের বাজেট উপস্থাপন, পূর্ববর্তী অধিবেশনের কার্য-বিবরণী অনুমোদন, ২০১৭-১৮ সালের বার্ষিক বিবরণী বিবেচনা, জগন্নাথ হল ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য মনোনয়ন এবং ট্রাইব্যুনাল গঠনের জন্য ছয়জনের একটি প্যানেল অনুমোদন।

২৬ জুনের সিনেট অধিবেশনের জন্য ছাপানো লিখিত প্রশ্নোত্তরে দেখা গেছে, সিনেটের দুই জন সদস্য সিনেট কর্তৃক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করে অনুষ্ঠিত হবে জানতে চেয়েছেন। সিনেট সদস্য রামেন্দু (কৃষ্ণ) মজুমদার জানতে চেয়েছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের প্রধান দুটি দায়িত্ব হচ্ছে বার্ষিক বাজেট পাস ও উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা। আমরা রেজিস্ট্রার্ড গ্র্যাজুয়েট কর্তৃক নির্বাচিত সিনেট সদস্যরা দীর্ঘদিন যাবৎ উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হয়ে চলেছি। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ ১৯৭৩ অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট কর্তৃক নির্বাচিত উপাচার্য নেই। মহামান্য হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ সিনেট গঠিত হয়েছে। আমরা মনে করি, এই একাডেমিক বর্ষের শুরুতে অর্থাৎ ২০১৯ সালের জুলাই মাসেই সিনেট কর্তৃক উপাচার্য প্যানেল নির্বাচিত হওয়া আইনগত ও নৈতিক দিক থেকে আবশ্যক। উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের জন্য সিনেট অধিবেশন কবে দেওয়া হবে?’

এই প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, “বিষয়টি কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় রয়েছে; পূর্ণাঙ্গ সিনেট গঠিত হয়েছে। যথাশীঘ্র সম্ভব ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” লিখিত প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে একইভাবে বিষয়টি জানতে চেয়েছেন সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পূর্বের উত্তর দেখতে বলেছেন।

সিনেটে উপাচার্য প্যানেলের এজেন্ডা না থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল নীলদলের আহ্বায়ক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘সিনেটের বার্ষিক অধিবেশনে বাজেট নিয়ে আলোচনা হয় ও অন্যান্য কমিটি গঠন করা হয়। আর সিনেট প্যানেল নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন হয় একটি বিশেষ অধিবেশনের। মাননীয় উপাচার্য একজন প্রতিনিধির প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন তিনি যথাশীঘ্র সিনেট প্যানেল দিবেন। আমরা আশা করি, উপাচার্য এই সিনেট অধিবেশন থেকে যথাশীঘ্র সিনেট অধিবেশনটির আয়োজন করবেন।’

সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমান বলেন, ‘মহামান্য আদালতের নির্দেশনা আছে ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ সিনেট করে প্যানেল দেওয়ার। আমরা আশা করি, সেই সময়ের মধ্যে তিনি করবেন। বার্ষিক সিনেটের এজেন্ডাতে প্যানেলের বিষয়টি নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, নিশ্চয় পরবর্তী কোনো সভায় এটি হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘৭৩ এর অধ্যাদেশ অনুযায়ী একজন উপাচার্যকে নির্বাচিত হয়ে থাকতে হবে। পূর্ণাঙ্গ সিনেট থাকতে হবে। আমরা রিট করেছিলাম। এখন সিনেট পূর্ণাঙ্গ। আমি মনে করি সকল কিছু অনুকূলে আছে একটি উপাচার্য প্যানেল হওয়ার জন্য। আমরা মনে করি, একটি বিশেষ বৈঠক ডেকে প্যানেল করা হবে।

সিনেট সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বাহলুল মজনুন চুন্নু বলেন, ভিসি নির্বাচন করতে হলে ১৩ দিন আগে নোটিশ দিতে হয়। এটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। শীঘ্রই হয়ে যাবে। খুব বেশি সময় লাগবে না।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএনপিপন্থি সাদা দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা আগামীকালের অধিবেশনে ভিসি প্যানেল কেন করা হয়নি তার জবাব চাইব। আমরা ভিসিকে অ্যাকিউজড করব। পূর্ণাঙ্গ সিনেট হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি ভিসি প্যানেল দিচ্ছেন না, তিনি কি চান?

সিনেটে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন কবে নাগাদ হতে পারে এ প্রশ্নের জবাবে ঢাকা বিশবিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘এটি হবে শীঘ্রই। ৬ মাসের মধ্যে সিনেট পূর্ণ করে উপাচার্য প্যানেল করার আদেশ আছে অবহিত করলে তিনি বলেন, তাই নাকি, সেটি তো জানি না, দেখতে হবে।’

পড়ুন:ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি: সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়ে পড়ি, এবার কি জীবনটাও দিব?


সর্বশেষ সংবাদ