ঢাবি ভিসি হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলাম

অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল‌য়ে ভি‌সির হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের ভি‌সির ম‌তো সম্মানজনক প‌দে ম‌নোনয়ন ও পীড়া‌পি‌ড়ির প‌রেও সে পদ গ্রহণ কর‌তে অস্বীকৃ‌তি জানাই।’ 

রোববার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর মানবিক ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের (কারাস) মিলনায়তনে নিজের জন্মদিন উপলক্ষে আত্মজীবনীমূলক বক্তৃতায় এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী একথা বলেন। সমাজ-রূপান্তর অধ্যয়ন কেন্দ্র এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, আমাকে যখন ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার প্রস্তাব করা হয় তখন তা আমি তিন কারণে ফিরিয়ে দিয়েছি। কারণ আমি এরশাদের আমলে ভিসি হতে পারি না। আমার ছাত্র জিয়াউদ্দীন বাবলু তখন ডাকসুর সেক্রেটারি ছিল, সে আমার জন্য সুপারিশ করার কথা বলে। তখন আমি তাকে বলি, তুমি যদি আমার ছাত্র হয়ে থাকো তাহলে একাজ করো না। ডিজিএফআই ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের অফিসাররা বলে আমার নাম সবার উপরে দেয়া হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, আমি যখন ডিন ছিলাম তখন উপলব্ধি হয়েছে প্রশাসন আমার কাজ নয়। কাছাকা‌ছি সম‌য়ের ভি‌সি ফজলুল হা‌লিম চৌধুরীর উদাহরণ দি‌য়ে তি‌নি ব‌লেন, কারণ নানা ধরনের প্রমোশন, নিয়োগের সুপারিশ নিয়ে সবাই আসত। এজন্য তি‌নি সকা‌লে হাঁট‌তে বে‌রো‌তে পারতেন না। তি‌নি বলেন, হাঁট‌তে বের হ‌লে সবাই সুপা‌রিশ নি‌য়ে এসে ভিড় জ‌মাবে তাই তি‌নি বাসায় থাকতেন। ‌তখন আমার মনে হতো ভিসি হলে আমি এই বিচ্ছিন্নতা মেনে নিত পারব না।

তৃতীয়ত, আমার ছাত্র-ছাত্রীরা হলে গাদাগাদি করে থাকবে, তা‌দের জন্য আবাসন নি‌শ্চিত না ক‌রে আমি ভিসির বড় বাড়ি‌তে থাকব সেটা মেনে নিতে পারব না। তি‌নি বল‌লেন, আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলে- সে বলে আমি লেকচারার সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীকে বিয়ে করেছি। এ সময় উপ‌স্থিত শ্রোতারাও হাস্যর‌সে ‌ঢ‌লে প‌ড়েন। পরে তি‌নি তার সাম‌রিক বা‌হিনীর এক বন্ধু‌কে দি‌য়ে ভি‌সি না করার জন্য সুপা‌রিশ পাঠান।

বুদ্ধিজীবী হত্যার সময় বেঁচে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ঢাবির এমিরেটাস অধ্যাপক বলেন, বুদ্ধিজীবীদের তালিকায় আমারও নাম ছিল; কিন্তু ঠিকানা ছিল না। ১৪ ডিসেম্বর আমিও মারা যেতে পারতাম। তিনি বলেন, সারাজীবন অশুভ আমাকে তাড়া করেছে। এই অশুভের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন তার সাথে আমি সব সময় থাকতে চেয়েছি। তাই বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলনে সম্পৃক্ত রেখেছি।

‌নি‌জের লেখা‌লে‌খি সম্প‌র্কে প্রবীণ সা‌হি‌ত্যিক ব‌লেন, লেখা আমার ঘা‌ড়ের ওপর চা‌পে। ন্যায়-অন্যায়‌বোধ আমা‌কে লিখ‌তে বাধ্য ক‌রে। প‌রে অবশ্য লেখা‌ জী‌বিকার পর্যা‌য়ে চ‌লে গি‌য়ে‌ছিল। এ সময় সা‌হিত্যবোধ এবং জীবনবো‌ধের ম‌ধ্যে পার্থক্য কর‌তে পারতাম না- ব‌লে মন্তব্য ক‌রেন তি‌নি।

ওসমানী উদ্যান রক্ষ‌ার আন্দোল‌নের স্মৃ‌তিচারণ ক‌রে তি‌নি ব‌লেন, এজন্য অনেকেই আমা‌কে প‌রি‌বেশবাদী হিসেবে আখ্যা দি‌য়ে‌ছি‌লেন, ত‌বে আমি তা ব‌লি না। নি‌জে‌কে ম‌নে ক‌রি আমি একজন অধিকার সংরক্ষণবাদী।

এ সময় সামা‌জিকতার প্রতি গুরুত্বা‌রোপ ক‌রে তি‌নি ব‌লেন, সামা‌জিকতা না থাক‌লে বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের শিক্ষা পূর্ণ হয় না। আমার সাংস্কৃ‌তিক জীবন আমা‌কে সামা‌জিক হ‌তে সহায়তা ক‌রে‌ছে। এ সময় তি‌নি বি‌ভিন্ন সাংস্কৃ‌তিক সংগঠ‌নের সা‌থে সম্পৃক্ততার কথা তু‌লে ধ‌রেন।

এর আগে জন্ম‌দিন উপল‌ক্ষে বিভিন্ন সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট এই শিক্ষাবিদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়। দে‌শের বি‌ভিন্ন স্ত‌রের জ্ঞানীগুণীরা এতে উপ‌স্থিত ছি‌লেন।


সর্বশেষ সংবাদ