থানায় গিয়ে ঠ্যাং ভাঙার হুমকি দিল, জিডিও নিল না পুলিশ

গতকাল ইফতারের ১০-১৫ মিনিট পূর্বে আমি ও আমার স্ত্রী ইফতার করার জন্য ঝিনাইদহ সদর থানার সামনে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকি। আমি এলাকায় আসছি এমন খবর শুনে আমার বন্ধু শিমুল ও ঝিনাইদহের কয়েকজন ছোট ভাই আমার সাথে দেখা করতে আসে। তারা আগে থেকেই আমাকে বলেছিল, ভাই, আপনি আসলে একটু দেখা কইরেন। আপনার সাথে অনেকদিন দেখা হয় না।

আমি বাড়িতে গেলে পরিচিত বন্ধু ও ছোট ভাইদের সাথে এমন দেখা সাক্ষাৎ হওয়া কি অস্বাভাবিক? নাকি আমি রোহিঙ্গা (নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে যেতে পারেনা) যে, আমার এলাকার ভাই- ব্রাদার বন্ধু- বান্ধব নিয়ে আড্ডা দিতে পারবো না? আমি যখন তাদের সাথে ইফতার করতে বসি, বসার পরপরই স্থানীয় আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন দলবল নিয়ে হাজির। আমাকে এসেই বলে, এই তুই এদিক আয়। আমি বলি, কি হয়েছে ভাই? বলে, এখানে তোর কি? এই বলে কলার ধরে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। আমাকে বলে বাইরে চল৷ বাইরে এনে মোটর সাইকেল তুললে চাইলে আমার বউ বাধা দেয় । বউকেও তারা হুমকি দিয়ে কথা বলে এবং ধমক দেয়। পরবর্তীতে তারা আমাকে নিয়ে কলার ধরে ধাক্কাতে ধাক্কাতে আর গালমন্দ করতে করতে থানায় নিয়ে আসে। থানায় ওসি মিজান সাহেবের রুমে আমাকে ঢোকায়। ওসি আমাকে বসতে বলেন।
কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো থানা আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজনে ভর্তি হয়ে যায়৷ তারা এসে ওসিকে বলে, ওকে বাইরে ছেড়ে দেন। বাইরে গেলে আমরা দেখবো।কেউ কেউ বলে, ওরে বাইরে নিয়ে চল। ওর ঠ্যাং চ্যুং ভেঙে রাজনীতি করার স্বাদ মিটিয়ে দিবো। এই বলে তারা আমাকে থানার বাইরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।

এরপর উপর থেকে ওসির নাম্বারে একের পর এক কল আসে। আমাকে মামলা দিবে নাকি ছেড়ে দিবে এমন কথাবার্তা চলতে থাকে। আস্তে আস্তে যখন বিষয়টা জানাজানি হয় তখন ঝিনাইদহের ২০-২৫ জন সাংবাদিক সেখানে এসে হাজির হয়ে যায়। সাংবাদিক আসা শুরু করলে আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগের লোকজন ওসির রুমের বাইরে চলে যায়।।

এরপর আমার বাসা থেকে বাবা -মা, বোন ও চাচাতো ভাই আসে। আমি তখন পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চাই। তাদের বলি, আমি বাসায় এসেছি, পরিবারের লোকের সাথে ঈদ করতে চাই। আমাকে প্রটেকশন দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। আপনার সামনে তারা আমাকে ঠ্যাং ঠ্যুং ভাঙার হুমকি দিয়ে গেলো। তাহলে আমি বাড়িতে কিভাবে নিরাপদ? বাড়িতে তো আমার উপর হামলা করতে পারে৷ ওসি বলেন, আমরা বাড়িতে নিরাপত্তা দিতে পারবোনা। এই রিক্স( ঝুঁকি) আমাদের দ্বারা নেওয়া সম্ভব নয়। আপনি সিদ্ধান্ত নিন, বাড়ি থাকবেন নাকি ঢাকায় যাবেন। আমি বলি, এতো হুমকি ধামমির পরেও নিরাপত্তা না দিলে তো বাসায় পরিবারের সাথে ঈদ করা অসম্ভব হয়ে যাবে। এরপর আমি বলি, নিরাপত্তা না দিতে পারলে, আমাকে ঢাকায় পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। এরপর পুলিশ প্রটোকলে আমি ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল পর্যন্ত আসি। সেখানে আমার কাছে খবর আসে, এখানেও হামলা করতে তারা প্রস্তুত।
পুলিশকে বিষয়টা জানালে, আমাকে তারা মাগুরা পর্যন্ত তাদের গাড়িতে পৌঁছে দেয়। সেখান থেকে আরেকটা মাইক্রো ভাড়া করে ঢাকায় চলে আসি। দুঃখের বিষয় গত পরশু রাত ৩ টায় বাড়িতে গিয়ে, আবার গতরাত ৩ টায় আমাকে ঢাকায় ফিরতে হয়!! বাবার মায়ের সাথে ঈদ করতে গিয়ে আবার ফিরে আসা কতোটা বেদনাদায়ক তা একমাত্র তারাই ভাল বুঝবে, যাদের জীবনে এমন ঘটনা ঘটেছে৷ আর একমাত্র ছেলে সন্তানকে রেখে ঈদ করাটা কতোটা দুঃখজনক, তা অবশ্যই সকলের বোঝার কথা। এই হচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র ব্যবস্থা। যেখানে আমরা নির্বিঘ্নে, নিরাপদে পরিবারের সাথে ঈদ করা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।।

সবচেয়ে ভয়ানক লেগেছে, থানায় এসে পুলিশের সামনে ঠ্যাং ভাঙার হুমকিটা। পুলিশের কোন ক্ষমতা নাই, তাদের সামনে কথা বলার। এমনকি আমি তাদের নামে জিডি করতে চেয়েছিলাম। পুলিশ জিডি নেওয়ার সাহসও করতে পারলো না। কেন করতে পারলো না, তা আমি আপনি সকলেই জানি। আমার জিডি নিলে হয়তো একটু পরেই ওসির বদলির আদেশ আসতো!! বাংলাদেশে এটা সামান্য একটি বিষয়। যেখানে আড়ংয়ের পণ্য বেশি দামে বিক্রির অপরাধে জরিমানা করলে বদলির আদেশ আসে, সেখানে / কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের জিডি নিলে কি হবে তা অনুমেয়। বগুড়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে যেখানে ডাকসু ভিপির উপর হামলা হওয়ার পরেও বিচার হয়না, সেখানে ধরেই নিতে হবে এগুলো উচ্চ মহলের ঈশারাতেই হচ্ছে।। জিডি, বিচার এগুলো এখন আইনের শব্দ মাত্র!! জিডি করতে আর বিচার চেয়ে পুলিশ, প্রশাসন ও সরকারকে লজ্জা না দেওয়া উত্তম।

মিডিয়াতে পুলিশের বক্তব্য এসেছে, রেস্টুরেন্ট আমি নাকি আওয়ামী লীগের লোকজনের সাথে তর্কাতর্কি করলে, সেখানে থেকে তারা আমাকে ধরে নিয়ে থানায় দেয়। এই বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা। তাদের সাথে তর্কাতর্তি দূরে থাক, আগে কোনদিন দেখা হয়েছে কি তাও বলতে পারবো না। আর রেস্টুরেন্টে ইফতারি করতে গিয়ে কি মানুষ তর্কাতর্কি করে? আমরা তো অনেক জেলাতে ইফতার মাহফিল করলাম, কোথাও দেখেছেন আমরা ইফতার খাওয়া নিয়ে মারামারি, কথা-কাটাকাটি করেছি?

তাদের পরিকল্পনা ছিলো, তারা আসবে, আমাকে হেনস্তা করে থানায় দিয়ে বলবে আমাদের সাথে কথা-কাটাকাটি হয়েছে!! এরপর একটা মামলা, তারপর জেলের ভাত খাওয়াবে!! আজকাল মামলা করতে তো আওয়ামি লীগ ও ছাত্রলীগ হওয়াই যথেষ্ট। কেউ অন্যায় করুক আর না করুক, তাকে দমন করতে হলে মিথ্যা মামলা-ই যথেষ্ট।।

আচ্ছা, বুঝলাম কথা কাটাকাটি হয়েছে, তাহলে কি ঘটনা নিয়ে কথা কাটাকাটি হলো? ইফতার কমবেশি নিয়ে? রেস্টুরেন্টে কি ইফতার ফ্রী দেয় যে, এটা কাড়াকাড়ি নিয়ে ঝামেলা বাধবে, কথা কাটাকাটি হবে??

উদ্ভট একটা রাষ্ট্র।। আমার কথা বলার স্বাধীনতা নাই, চলাফেরার স্বাধীনতা নাই, নিরাপত্তা নাই, আইনের শাসন নাই। কিন্তু আর কতকাল? এভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চলতে পারেনা।।

মিস করবো, মা তোমাকে, তোমার সাথে ঈদ করাটা হলো না!!

মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন’র টাইমলাইন থেকে


সর্বশেষ সংবাদ