ঢাবির প্রশ্নফাঁসে জড়িত আরো ৫৫ শিক্ষার্থী!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) প্রশ্নফাঁস মামলার অভিযোগপত্রে (চার্জশিট) ১২৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থী রয়েছে বলে এর আগে জানানো হয়েছিল। তবে এর জালিয়াতিতেই আরো ৫৫ জনের নাম পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তাদের বেশির ভাগই ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে এবং ছাপাখানা থেকে প্রশ্ন ফাঁস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। 

সিআইডি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালে ধরা পড়ার পর স্বীকারোক্তিসহ প্রমাণ পাওয়ায় গত বছর ১৫ জনকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নাম, পরিচয় ও ভূমিকা শনাক্ত হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীর নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করছে সিআইডি। জালিয়াতিতে জড়িত বলে প্রমাণিত অন্য ৭২ জনকে শিগগিরই বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত জানাবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আরো ৫৫ জনের নাম পাওয়া গেছে, যারা জালিয়াতি করে ভর্তি হয়েছে। তবে তাদের এখনো শনাক্ত করে প্রমাণ সংগ্রহ করতে পারেনি সিআইডি। তাদের বিরুদ্ধে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘আগে অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে ১৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এবারও তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিআইডির বিশেষ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের তথ্য বিনিময় হচ্ছে। আমরা তদন্ত সম্পর্কে জানিয়েছি। এখনো যাদের পরিচয় ও সম্পৃক্ততার পুরো প্রমাণ মেলেনি তাদের ব্যাপারেও কাজ চলছে। প্রমাণ পেলে সম্পূরক চার্জশিট দেব।’

জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৯ অক্টোবর মধ্যরাতে গণমাধ্যমকর্মীর দেওয়া কিছু তথ্যের সূত্র ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি আবাসিক হলে অভিযান চালায় সিআইডি। প্রথমে মামুন ও রানা নামে দুই শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন পরীক্ষার হল থেকে রাফি নামে ভর্তিচ্ছু এক শিক্ষার্থীকে। ওইদিনই শাহবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়।

পরে তদন্তে উঠে আসে প্রশ্নফাঁস চক্রটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো। চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিল নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ আরও কয়েকজন। সে সময় অভিযান চালিয়ে মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে একজন বাদে সবাই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আদালতে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চক্রের সদস্যরা প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষার আগের রাতে তার সমাধান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করাতো। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সমাধান সরবরাহ করা হতো।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশ্নফাঁস চক্রের মূলহোতাদের অঢেল অবৈধ অর্থ-সম্পদের সন্ধান পাওয়া গছে। প্রায় ২০ কোটি টাকার নগদ অর্থ ও সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে। এ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং আইনে একটি মামলা করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ