৯৩ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে : টিআইবি

দক্ষিণ এশিয়ায় দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন টিআইবির প্রধান নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখছেন টিআইবির প্রধান নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান   © টিডিসি ফটো

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রধান নির্বাহী ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, জনগণকে দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেতন করা। জনগণকে বাদ দিয়ে কখনও কোনো দেশে দুর্নীতিকে রোধ করা যায় না। এ কারণে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

বিশ্বব্যাপী দুর্নীতি বিষয়ক জরীপের বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্বের ৬৩ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ মানুষ দুর্নীতির বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে আমরা এখনো ব্যর্থ। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দুর্নীতিতে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় সর্বনিম্ন। আমাদের আগে রয়েছে শুধু আফগানিস্তান। বাকি দেশগুলো দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের চেয়ে এগিয়ে। এছাড়া দেশের প্রশাসনের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা দুর্নীতির সাথে জড়িত। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাই, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসিতে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস ২০১৮’ উপলক্ষে টিআইবি কর্তৃক আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।

ঢাবির টিএসসিতে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে টিআইবির মানববন্ধন

 

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা ব্যাংক লুট করেন, যারা উচ্চ পর্যায়ের দুর্নীতিবাজ, তাদের বিরুদ্ধে দুদকের তেমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করার দৃষ্টান্ত নেই। এ কারণে আমরা উদ্বিগ্ন। এছাড়াও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দুর্নীতির সহায়ক পরিবেশ রয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনেও দেখা গেছে একজন শ্রমিক নেতা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে রয়েছেন। এই সমস্যা সমাধানের জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও তা পালন করা হয়নি।

বাংলাদেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতা খর্ব করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫৭ ধারা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে দেশের মানুষের বাক-স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি এসব কালো আইন বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দুর্নীতি প্রতিরোধে ১০ দফা সুপারিশ করে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো- আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলো কর্তৃক গণতন্ত্র ও সুশাসনের বিদ্যমান ঘাটটিতে পূরণে সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার থাকতে হবে এবং কিভাবে বাস্তবায়িত হবে তার সুনির্দিষ্ট রূপরেখাও থাকতে হবে; নির্বাচনে কালো টাকার প্রভাব কমাতে প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসেব পর্যবেক্ষণ করতে হবে; সরকারি খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধে ‘সরকারি চাকরি আইন ২০১৮’ এর বিতর্কিত ধারাসমূহ বাতিল করা; ঋণ খেলাপিতে জর্জরিত রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও জালিয়াতি এবং বেসরকারি ব্যাংকের নজিরবিহীন আর্থিক কেলেঙ্কারির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিবর্গের বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা; বিচার ব্যবস্থা, প্রশাসন ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় পেশাদারি উৎকর্ষ ও কার্যকারিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত ও পরিপূরক কৌশল গ্রহণ করা।

এছাড়া সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ও সদস্যদের নিয়োগে যোগ্যতার মাপকাঠি নির্ধারণ এবং স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে; তথ্য অধিকার আইনে ব্যবসায়িক, রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যমকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে এবং আইনের বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তথ্য প্রকাশকারী এবং তথ্য চাহিদাকারী উভয় ক্ষেত্রে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে; দুর্নীতি প্রতিরোধে দুদককে শক্তিশালী করতে রাজনৈতিক সদিচ্ছার কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।


সর্বশেষ সংবাদ