বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতির শুরুতে যা করণীয়

স্বপ্নচারী শিক্ষার্থীদের সামনে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। এই যুদ্ধে জিততে তাঁদের নতুন রণকৌশল সাজাতে হবে। স্বপ্নের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে এখনই সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একাগ্রতা ও কঠোর পরিশ্রমই নিয়ে আসতে পারে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য।

ভর্তিযুদ্ধের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে প্রথমেই দরকার একটি সুন্দর পরিকল্পনা। যথার্থ পরিকল্পনার অভাবে অনেকের ভালো প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও শেষমেশ হতাশ হতে হয়। কয়েকটি বিষয়ে ভর্তি-ইচ্ছুকদের লক্ষ রাখা জরুরি।

* যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী, প্রথমেই সেগুলোর একটি তালিকা করে ফেলা দরকার।

* প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় স্বতন্ত্র কিছু নিয়ম মেনে চলে। কাজেই বিশ্ববিদ্যালয়ভেদে প্রস্তুতি খানিকটা আলাদা হওয়া বাঞ্ছনীয়।

* ভর্তির ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত সবচেয়ে আগে। অনেককেই দেখা যায় নিজের ইচ্ছার চেয়ে বাবা-মা-আত্মীয়-স্বজনদের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেয়। মনের বিরুদ্ধে প্রস্তুতি নিলে তাতে সাফল্য নাও আসতে পারে।

* বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বেশি দোটানায় ভোগেন। পরিবারের কেউ হয়তো তাঁকে ভবিষ্যতে চিকিৎসক হিসেবে দেখতে চান। কেউবা আবার ইঞ্জিনিয়ার। তাঁদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের বিষয়গুলোতেও পড়ার সুযোগ থাকে। অনেককে দেখা যায় একই সঙ্গে একাধিক বিষয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে। এতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

* আমাদের সামনে সব সময় একটি প্রশ্ন আসে—ভর্তির জন্য কোচিং করা উচিত কি না? এর উত্তর ‘হ্যাঁ’ ‘না’ উভয়ই হতে পারে। এটি মূলত নির্ভর করে শিক্ষার্থীর পড়াশোনার ওপর। গতানুগতিক পড়াশোনার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি আলাদা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে কোচিং করে বা প্রাইভেট টিউটরদের কাছে পড়েন। অনেকে কোচিং না করেও ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পান। তবে সবচেয়ে বড় কথা, ভর্তি পরীক্ষায় সফল হতে একটি ভালো গাইডলাইন অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। তা না হলে প্রস্তুতিতে বড় রকমের ঘাটতি থেকে যায়।

* অনুকরণপ্রিয়তা একেবারেই পরিহার করতে হবে। বন্ধুরা সবাই এক জায়গায় কোচিং বা প্রাইভেট পড়ছে—এই যুক্তিতে তাঁদের সঙ্গে গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দেওয়া মোটেই উচিত হবে না।

* নিজের সামর্থ্যের যাচাই করে লক্ষ্য ঠিক করা উচিত। লক্ষ্য অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়ে অগ্রসর হলে সাফল্য অর্জনের পথ সহজ হয়।

* ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে অনেকে দূরদূরান্ত থেকে ঢাকায় এসে কোচিং করেন। তাঁরা বিভিন্ন মেসে ওঠেন। তাঁদের কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখা উচিত। পরিবেশ ও নিরাপত্তা যাচাই করে মেসে ওঠা উচিত। সব সময় স্বাস্থ্যসম্মত খাবার ও বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। তা না হলে রোগে আক্রান্ত হয়ে স্বপ্ন ধূলিসাৎ হতে পারে। সদস্যরা সমমনা কি না, তা খোঁজ নিয়ে মেসে ওঠা উচিত।

*পড়ালেখার জন্য অনেকেই ‘দৈনন্দিন রুটিন’ করে নেন। রুটিন করার সময় খুব ভালোমতো খেয়াল রাখবেন একটি কথা—আপনি কত ঘণ্টা পড়ালেখা করছেন, তার চেয়েও বড় কথা হলো আপনি ‘কীভাবে’ পড়ালেখা করছেন। আপনাকে অনেক বেশি কৌশলী হতে হবে। সারা দিন শুধু বই নিয়ে বসে থাকলেই যে পড়ালেখা ভালো হবে, এমন কিন্তু কোনো কথা নেই। রুটিনে বিশ্রামের জন্যও যথেষ্ট সুযোগ রাখতেই হবে।

* অনেকেই মনে করেন, এই সময়ে প্রতিদিন ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতেই হবে। এ ব্যাপারে আমি খানিকটা ভিন্নমত পোষণ করি। আপনি প্রতিদিন কত ঘণ্টা করে পড়াশোনা করবেন, তা নির্ভর করবে সম্পূর্ণভাবে আপনার ব্যক্তিগত সামর্থ্যের ওপর। আপনি যদি অনুভব করেন, সাত থেকে ঘণ্টা পড়ালেখা করে খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে পারছেন, তাহলে আপনার জন্য সেটাই যথেষ্ট।

* আপনি যে বিশ্ববিদ্যালয়কে টার্গেট করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ইউনিট অনুযায়ী সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত ১০ থেকে ১৫ বছরের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নসংবলিত প্রশ্নব্যাংক বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। কালবিলম্ব না করে এ রকম একটি প্রশ্নব্যাংক দ্রুত সংগ্রহ করে খুব ভালোমতো পড়ে ফেলুন। এতে করে কোন ভার্সিটিতে কীভাবে প্রশ্ন আসে, সে সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা হয়ে যাবে। প্রশ্নের ধরন বোঝাটাই কিন্তু সবচেয়ে বড় পরীক্ষা—এই বিষয় মাথায় রাখতে হবে। তা ছাড়া অতীত নজির থেকে দেখা যায়, প্রতিবছরই বিগত বছরের প্রশ্নাবলি থেকে দুই-তিনটা প্রশ্ন চলে আসে।

* অনেক সময় দেখা যায়, একই বিষয়ের ওপর অনেকগুলো বই কিনেছেন, কিন্তু দিন শেষে কোনোটাই ঠিকমতো রপ্ত করতে পারলেন না। এতে করে লাভের চেয়ে ক্ষতির শঙ্কাই কিন্তু বেশি থাকে। কোনো বিষয়ের ওপর মানসম্মত একটি বা দুটি বইই যথেষ্ট।

* বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন ফরম পূরণ করার সময় নিজের পছন্দের পাশাপাশি বিকল্প আরও কয়েকটি ফরম তুলে রাখুন। হয়তো আপনি ভেবেই রেখেছেন যে আপনি কোনো নির্দিষ্ট ভার্সিটিতে চান্স পাবেনই। কিন্তু দেখা গেল পরীক্ষার দিন অসুস্থতার কারণে খুব বাজে পরীক্ষা হলো। তখন বিকল্প বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম আগে থেকেই না পূরণ করা থাকলে হাহুতাশ করা ছাড়া কোনোই উপায় থাকবে না।

* পড়ার টেবিলে আজ থেকে ‘দিন গণনা’ শুরু করতে পারেন। 
যেমন ধরুন, আপনার কাঙ্ক্ষিত ভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার এক মাস সময় বাকি আছে। একটি সাদা কাগজে সিরিয়াল মতো উল্টো দিক থেকে ৩০ থেকে ১ পর্যন্ত লিখে টাঙিয়ে রাখুন এবং প্রতিদিন একটি করে দিন কাটুন। এক দিন করে যখন কমতে থাকবে, আপনি আরও বেশি করে পড়ার তাগিদ অনুভব করবেন। দেখবেন, এই কাজ আপনাকে পড়ালেখার দিকে সব সময় আকর্ষিত করবে।

সূত্র: প্রথম আলো


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence