সোনার মানুষ গড়বার জন্য বিতর্ক খুব জরুরি মাধ্যম: শিক্ষামন্ত্রী

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু  © সংগৃহিত

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়বার স্বপ্ন দেখেছিলেন। সে সোনার বাংলার জন্য আমরা এমন মানুষ চাই, যে মানুষ হবে মানবিক, সৃজনশীল, বিজ্ঞান মনস্ক ও প্রযুক্তি বান্ধব। আর এমন মানুষ গড়বার জন্য বিতর্ক খুব জরুরি মাধ্যম। সে বিতর্কের একটি জাতীয় পর্যায়ের উৎসব আমরা এই চাঁদপুরে আয়োজন করতে পেরেছি, সে জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

শুক্রবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাসে ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মন্ত্রী বলেন, আজকে এই উৎসবে সারাদেশে থেকে অনেক সেরা বিতার্কিক এসেছেন। আমরা বলছি এটি দেশ সেরা বিতর্কাকিদের সর্ববৃহৎ মিলনমেলা। যারা এই বিতর্কের মধ্য দিয়ে যুক্তির আলো ছড়াচ্ছেন, যারা নিজেদেরকে উন্নত মনের মানুষ হিসেবে তৈরী করছেন, তাদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালোবাসা ও শুভেচ্ছা। আমার অনুরোধ ধাকবে দেশ সেরা এই বিতার্কিকরা উৎসবের সমাপনী পর্যন্ত থেকে নতুন প্রজন্মকে তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলবেন এবং বিতর্কের কৌশল গুলি শিখিয়ে দিবেন।

চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. অসিত বরণ দাশ এর সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন একুশে পদকপ্রাপ্ত ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এবং বিতার্কিক ড. শামীম রেজা, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ, বাংলাদেশ ডিবেট ফেডারেশন (বিডিএফ) সাবেক সভাপতি ও সাবেক বিতার্কিক ডা. আব্দুন নুর তুষার।

অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বিতার্কিকদের উদ্দেশ্যে করে বলেন, আমি বহুদিন থেকে বলে আসছি শ্রেনী কক্ষে যে মূল্যায়নটা হয়, তোমরা পরীক্ষা দিচ্ছ, পরীক্ষার জন্য মুখস্ত করছ, মুখস্তটা হচ্ছে তোতা পাখির মত এবং পরীক্ষা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছ। কিন্তু জ্ঞানটা তোমার মধ্যে ডুকছে কিনা, তোমাকে আলোকিত করছে কিনা, সে প্রশ্ন করার কখনো সুযোগ পাওনি। তোমার মুখস্থ বিদ্যার পরীক্ষা হয়, তোমার সক্ষমতার পরীক্ষা হয় না। এমন হত যদি আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। অর্থাৎ তোমার সক্ষমতার পরীক্ষা নেয়া হত পাঠ্যপুস্তকের পরীক্ষার সঙ্গে। আমি বিদেশে অনেক বিদ্যালয় দেখেছি, শিক্ষার্থীরা তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন করছেন এবং তার আলোকে পরীক্ষার নম্বর দেয়া হচ্ছে। আমি চাই আমাদের শিক্ষার যে সংস্কার হচ্ছে, তাতে তোমাদেরও একটি ভূমিকা থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বক্তব্যে বলেন, আমরা কেন বিতর্ক করি, বিতর্ক মানি তর্ক করা নয়। মনে রাখতে হবে বিতর্ক হচ্ছে একটি ফরমাল ব্যাপার। বিতর্ক করতে আমাদেরকে লেখা-পড়া করতে হয়। কারণ মনের যে হাসপাতাল, সে হাসপাতাল কিন্তু গ্রন্থের মাধ্যমে খোলে অর্থাৎ বই এর মাধ্যমে। বিতর্ক করার জন্য যে পড়া-লেখা করা হয় এবং সেটার মাধ্যমে যে জ্ঞান অর্জন হয়, তাতেই মাইক্রোফেনে দাঁড়াবার সাহস সঞ্চিত হয়। এই সাহস কিন্তু আমরা পরবর্তী সময়ে কাজে লাগাতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা সবাই যুক্তিকে পছন্দ করি। আমরা গণতন্ত্র মূলবোধে বিশ্বাস করি। আমরা হানাহানিতে বিশ্বাস  করিনা। আমরা অগ্রগতি ও প্রকৃত উন্নয়নে বিশ্বাস করি। আমরা মানুষের অগ্রগতিতে বিশ্বাস করি এবং আমরা যে যেখানে আছি কিংবা কাজ করছি না কেন, তার মূলে যুক্তি। আমরা যদি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই, তাহলে যুক্তির সে সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বক্তব্যে বলেন, বিতর্কের মাধ্যমে আমার বিপক্ষের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে মত প্রকাশ করতে পারি। বর্তমান সময়ে আমরা কেউ কাউকে মানতে চাই না, কথা শুনতে চাই না। ভিন্নমতকে রীতিমত পিষে পেলতে চাই। ঠিক এই মুহুর্তে আমাদের মধ্যে বিতর্ক পরমতসহিষ্ণুতা সৃষ্টি করতে পারে। বিতর্ক উৎসব সে সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছে।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) কামরুল হাসান, পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মিলন মাহমুদ, চাঁপুর জেলা আওয়ামী লীগ সহ-সভাপতি ড. জে আর ওয়াদুদ টিপু, চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র মো. জিল্লুর রহমান ও টেন মিনিট স্কুল এর প্রতিষ্ঠাতা আয়মান সাদিকসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন ভাষাবীর এম এ ওয়াদুদ স্মারক জাতীয় বিতর্ক উৎসবের চেয়ারম্যান সাব্বির আজম।

এর আগে অতিথিদেরকে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন করেন এবং সকালে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি চাঁদপুর সরকারি কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে।

তিন দিনব্যাপী এই জাতীয় বিতর্ক উৎসবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত দেড় শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহস্রাধিক বিতার্কিক অংশগ্রহন করেছেন।

শনিবার (১৫ অক্টোবর) সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, এমপি।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence