বাবার দেশ বাংলাদেশে এসে ধর্ষিত হলেন পাকিস্তানি ছাত্রী

  © সংগৃহীত

অসুস্থ দাদিকে দেখতে এসে বাবার দেশ বাংলাদেশে অপহরণ ও ধর্ষণের স্বীকার হলেন পাকিস্তানি ছাত্রী। সখ করে দেখতে আসছিলেন বাবার মাতৃভূমি টাঙ্গাইলের উত্তর গোপালপুর। মাকে নিয়ে ছয় মাসের ভিসায় আসেন ওই কিশোরী। কিন্তু এরই মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয় ওই ছাত্রী। ধর্ষণের শিকার মেয়ের সুচিকিৎসা আর নিরাপত্তা নিয়ে মায়ের উদ্বেগের শেষ নেই পাকিস্তানি মায়ের।

ধর্ষিতা হুমেরা বাবু (১৭) বাংলাদেশি বংশোদ্ভত। পাকিস্তানের করাচীর সরকারি এক স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। বাবা হুমায়ুন কবীর বাংলাদেশের পোশাক ব্যবসায়ী। আর মা নীলুফার বেগম পাকিস্তানি নাগরিক। তাদের বাসা নিউ করাচীর সুপার হাইওয়েজ রোড়ে।

গোপালপুর থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, উপজেলার উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা হুমায়ুন কবীর আনুমানিক পঁচিশ বছর আগে পাকিস্তানের নিউ করাচীতে গিয়ে থিতু হন। সেখানে পাকিস্তানি নাগরিক নীলুফার বেগমকে সাদী করে গামের্ন্টস ব্যবসা শুরু করেন। পাঁচ মাস আগে পাকিস্তানী নাগরিক নীলুফার বেগম ছয় মাসের ভিসায় কন্যা হুমেরাকে সঙ্গে নিয়ে স্বামীর বাড়ি বেড়াতে আসেন। ওঠেন উত্তর গোপালপুর গ্রামের ভাসুর আব্দুল ওয়াদুদের বাড়িতে।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা বলেন, ২০ বছর আগে টাঙ্গাইলের উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা পোশাক ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। বেশ কয়েক বছর একাই কাটে আমাদের সংসার। পরে আমাদের সংসারে এক কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। 

তিনি বলেন, গত বছর খবর পাই বাংলাদেশে বসবাসকারী আমার শাশুড়ি খুবই অসুস্থ। মেয়েরও খুব ইচ্ছা ছিল দাদিকে দেখার। তাই ছয় মাসের ভিসা করে মেয়েকে নিয়ে শাশুড়িকে দেখতে স্বামীর বাড়ি বেড়াতে আসি। বাংলাদেশে এসে টাঙ্গাইলের উত্তর গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা ভাসুর আব্দুল ওয়াদুদের বাড়িতে উঠি। এখানে ওঠার পর থেকে আরেক ভাসুর আবুল হোসেনের বখাটে ছেলে আল-আমিন আমার মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে। বেশ কয়েকবার শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। এ ঘটনার পরপরই পারিবারিকভাবে বিষয়টির মীমাংসা করা হয়। তবে আমাদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে আসার খবর পেয়ে বখাটে আল-আমিন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৬ এপ্রিল রাতে একদল সন্ত্রাসীর সহযোগিতায় আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে যায় আল-আমিন। পরে মেয়েকে আটকে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এরপরও মেয়েকে ফিরে পেতে নানাভাবে চেষ্টা চালাই আমি।

পুলিশ জানায়, ১৭ এপ্রিল আল-আমিনসহ তিনজনকে আসামি করে গোপালপুর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন পাকিস্তানি কিশোরীর মা। মামলার পরপরই অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত প্রধান আসামির মা আনোয়ারা বেগমকে (৪৭) গ্রেফতার করা হয়। আসামির মায়ের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার ভোরে জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার মহিষাকান্দি মোড়ের একটি বাসা থেকে ধর্ষণের শিকার কিশোরীকে উদ্ধার করা হয়। পরে কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর মা বলেন, মেয়েকে ধর্ষণের আলামত সংগ্রহের পরীক্ষা বা হাসপাতালে ভর্তি-সংক্রান্ত কোনো তথ্য আমি এখনো জানি না। ধর্ষণের ঘটনার পাঁচদিন পেরিয়ে গেলেও ধর্ষক গ্রেফতার না হওয়ায় বিচার প্রাপ্তি নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি আমাদের ভিসার মেয়াদ প্রায় শেষ হওয়ার পথে। কিন্তু এখনো মেয়ের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা না হওয়ায় পুনরায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি আমরা। পাকিস্তান গিয়ে মেয়ের বাবাকে কী জবাব দেব আমি। এমন জানলে বাংলাদেশে আসতাম না আমরা।

কিশোরীর চিকিৎসা প্রাপ্তির বিষয়ে সহায়তাকারী মর্জিনা বলেন, আমার চাচাতো বোনকে ধর্ষণ করেছে আল-আমিন। আল-আমিনকে না পেয়ে তার মা আনোয়ারা বেগমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু তাকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। চাচাতো বোনকে চিকিৎসায় সহায়তা করায় আমার বাবা এবং পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে ধর্ষক আল-আমিন ও তার পরিবারের লোকজন।

গোপালপুর থানা পুলিশের ওসি হাসান আল মামুন বলেন, ধর্ষক আল-আমিনকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন পাকিস্তানি কিশোরী ও তার পরিবারের নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে পুলিশ।

টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, কিশোরীর ধর্ষণের আলামত নেয়া পরীক্ষার ফলাফল এখনো আমরা পাইনি। ধর্ষণের শিকার কিশোরীর সুচিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

ধর্ষিতার মাতা নীলুফার বেগম জানান, হুমেরা নিউ করাচীর সরকারি সাদিকাটুল হাইস্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। তিনি ও তার মেয়ে বাংলা ঠিকমতো বলতে পারেন না। বাবার দেশ সখ করে দেখতে এসে নিজের পরিজনের হাতেই সর্বনাশের শিকার হলো তার কিশোরী কন্যা। নির্যাতনে হুমায়রা মুষড়ে পড়েছেন বলে জানান তিনি। তিনি এর কঠিন শাস্তি দাবি করেন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা আসলাম হোসেন জানান, টাঙ্গাইল শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ধর্ষিতার মেডিক্যাল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু ধর্ষিতা বাংলা বলতে না পারায় এবং দোভাষী না পাওয়ায় বৃহস্পতিবার আদালতে ধর্ষিতার ২২ ধারায় জবানবন্দী নেওয়া যায়নি। আসামি গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।


সর্বশেষ সংবাদ