মাদ্রাসায় দুই শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে পেটালো শিক্ষক, ভিডিও ভাইরাল

  © সংগৃহীত

ঢাকার সাভারে এক মাদ্রাসা শিক্ষকের হাতে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দুই শিশু শিক্ষার্থী। শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) আশুলিয়ার শ্রীপুরের মথনটেক এলাকার জাবালী নুর মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতিত এক শিক্ষার্থীর নাম শরিফুল ইসলাম (১৩)। এ সময় তার পাশে রাকিব হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থীকে মধ্যযুগীয় কায়দায় বেঁধে রাখতে দেখা গেছে। তাকেও মারধর করা হয়। মারধরকারী ওই শিক্ষকের নাম ইব্রাহিম। আর এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে ভাইরাল হলে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।

জানা গেছে, মাদ্রাসাটি সিসি ক্যামেরা দিয়ে সুরক্ষিত। এরকম একটি সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা তিনটি ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, সারিবেঁধে কিছু শিক্ষার্থী সুর করে আরবি পড়ছে। সামনে খালি গায়ে বসা এক শিক্ষক। তার একপাশে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে একটি শিশু। বোঝা যাচ্ছে তাকে মধ্যযুগীয় কায়দায় শাস্তি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন শরিফুল ইসলাম নামের ওই শিক্ষক। তার সামনে আরেকটি শিশু বসা। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করছেন তিনি। সম্ভবত পড়া। শিশুটি ভুল করে। শিক্ষক ধরে নেন পড়া মুখস্থ হয়নি শিশুটির। এরপর তার দুই হাত নিজের শক্ত সবল এক হাতে টেনে ধরে অপর হাতে পাশের টেবিল থেকে বেত নিয়ে ইচ্ছেমতো শিশুটিকে মারধর করতে থাকেন তিনি। শিশুটি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে নিষ্কৃতি পেতে ক্ষমা চায়। কিন্তু, শরিফুল থামেন না। ওই স্থান থেকে পেটাতে পেটাতে ক্লাসরুমের মাঝখানে নিয়ে এসে হাত যতদূর ওঠে ততদূর এবং শরীরের সব শক্তি দিয়ে শিশু শিক্ষার্থীকে পেটাতে থাকেন। আর এ ঘটনায় ভয়ে শিউরে উঠে বাকি শিশুরা জোরে জোরে চিৎকারের মতো শব্দে পড়া আওড়াতে থাকে।

আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, রাকিব হোসেন নামে কালো পাঞ্জাবী পড়া শিক্ষার্থীর কাছ থেকেও পড়া জিজ্ঞেস করছেন তিনি। এসময় সে না পারায় রশি জাতীয় কিছু দিয়ে তার হাত দুটি বাঁধে ওই শিক্ষক। একটু পর তাকে বেত নিয়ে ইচ্ছেমতো মারধর করতে থাকেন তিনি। এসময় পা দিয়েও লাথি দিতে দেখা গেছে।

প্রসঙ্গত, দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বেতের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। শিক্ষকদের মারধরও নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। করোনার সময়ে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও গত আগস্ট মাসের শেষ দিকে কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সরকার অনুমতি দিয়েছে। সাভারের আশুলিয়ার শ্রীপুরের মথনটেক এলাকার জাবালী নুর মাদ্রাসাটি একটি কওমি মাদ্রাসা হওয়ায় এটি গত মাস থেকে চালু রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

তবে এই মাদ্রাসায় শিশু শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনা লোকমুখে ও ভিডিও দেখে জানতে পারলেও এ বিষয়ে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। তারা অন্য সবকিছু পারলেও এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নিতে এখনও কোনও একজন অভিযোগকারীর অপেক্ষায় বসে আছে।  

সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল হক শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ঘটনাটি শুনে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এখনও কেউ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

স্থানীয়রা জানান, গত শুক্রবার তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নতুন নগর মথনটেক এলাকায় একটি মাদ্রাসায় শিশু শিক্ষার্থী শরিফুলকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন ওই মাদ্রাসার শিক্ষক ইব্রাহিম। এ সময় ওই শিক্ষক আরেক শিশু শিক্ষার্থী রাকিব হোসেনকে বেঁধে রেখে ভয়ভীতি দেখান।

মাদ্রাসাটির শিশু শিক্ষার্থীরা জানায়, দুজনকে মারধর করার সময় অন্য শিশুরা তাদের না মারতে অনুরোধ করেছিল তাদের শিক্ষক ইব্রাহিমকে। কিন্তু, শিশুদের অনুরোধে মন গলেনি ওই শিক্ষকের।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, শিক্ষক এক শিশুকে বেঁধে রেখে বেত দিয়ে অন্য শিশুকে মারধর করছেন। শিশুটি চিৎকার করলেও ভয়ে কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে খবর পেয়ে দুই শিশুর পরিবারের সদস্যরা তাদের উদ্ধার করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে।

এদিকে, সোমবার দুপুরের পর থেকে ফেসবুকে এসব মারধরের ভিডিও ভাইরাল হলে ঘটনাস্থলে যায় আশুলিয়া থানা পুলিশ। এলাকাবাসী মারধরকারী ওই শিক্ষককে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন। তবে করোনার সময়ে ওই মাদ্রাসা কী করে চলছে সে ব্যাপারে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ওই মাদ্রাসার শিক্ষকের সঙ্গে মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলেও তিনি প্রথমে ফোন ধরেননি। পরে আবারও ফোন করা হলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া গেছে।


সর্বশেষ সংবাদ