মাদকাসক্ত লুপা বিয়ে করেছেন চারটি, বাবা ছিলেন রাজাকার!

  © সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে পথশিশু জিনিয়াকে অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন লুপা তালুকদার। এরপরই তার বিরুদ্ধে নানা অপকর্মের অভিযোগ সামনে আসছে। এমনকি নাজমা আক্তার ওরফে লুপা তালুকদারের বাবা রাজাকার ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

তবে পরো সিনিয়র সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুরো পরিবারই হয়ে গেছেন আওয়ামী লীগ পরিবার। গৃহকর্মী ধর্ষণ ও হত্যার মামলায় সংশ্লিষ্টতা প্রমাণিত হলেও ‘রাজনৈতিক বিবেচনায়’ মামলা থেকে পার পেয়ে যান তিনি। পটুয়াখালী জেলার মুক্তিযোদ্ধারা সাংবাদিকদেরকে নিকট এমন দাবি করেছেন।

জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে লুপার পরিচিতি বড় সাংবাদিক হিসেবে। স্থানীয়দের ধারণা, এসএসসি পাস লুপার ক্ষমতা অনেক। অনেক ক্ষমতাধরের সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর। চাকরি, বদলি বা ঠিকাদারি পাইয়ে দিতেন লুপা। এজন্য সুপারিশ করে বিনিময়ে নিতেন টাকা।

জানা গেছে, গলাচিপায় ২০০৩ সালে লুপা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শাহিনুর নামে এক গৃহকর্মীকে তার সাবেক স্বামী রফিকুল ইসলাম বাদল ধর্ষণ করেন। এতে সে অন্তঃসত্ত্বা হলে লুপা ও তাঁর স্বামী সন্তানসহ তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে লাশ নদীতে ফেলে দেন।

এ ঘটনার মামলার তদন্তে লুপা, তাঁর বাবা, দুই ভাই, সাবেক স্বামী বাদল ও তাদের কয়েকজন সহযোগীসহ আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। ২০০৮ সালে মহাজোট ক্ষমতায় এলে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে নিজেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রচার শুরু করেন লুপা।

পরে ২০১৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন অধিশাখা-১-এর উপসচিব মো. মিজানুর রহমান তাদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন না চালানোর সিদ্ধান্ত জানান পটুয়াখালী জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে। ফলে মামলায় অন্য আসামিরা সাজা পেলেও লুপা ও তাঁর স্বজনরা অব্যাহতি পান।

তবে লুপাকে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার কথা অস্বীকার করে গত শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের তখনকার সভাপতি হারুন অর রশীদ গলাচিপা থানায় জিডি করেছেন বলে জানা গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রত্যয়নপত্র দিইনি লুপাকে। সে প্রতারণা করতে পারে। গলাচিপার স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের মধ্যে তাদের পরিবার একটি।’

লুপার ফেসবুক প্রোফাইলে অগ্নি টিভির এমডি, আওয়ামী পেশাজীবী লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, নবচেতনার সিনিয়র রিপোর্টার, মোহনা টিভির সিনিয়র রিপোর্টার ও সিনিয়র ক্রাইম রিপোর্টার, শীর্ষ টিভির ডিরেক্টর, সাপ্তাহিক শীর্ষ সমাচারের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও কবি পরিষদের সদস্য হিসেবে নিজেকে উল্লেখ করেছেন।

এছাড়া গ্রেপ্তারের পর মোহনা টিভির বিজনেস কার্ড দেখিয়েছেন। তবে তদন্তকারী ও স্থানীয়রা জানান, লুপা ঢাকায় সাংবাদিক পরিচয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছিলেন। অবৈধ কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই জিনিয়াকে অপহরণ করেন বলে তাকে সন্দেহ তদন্তকারীদের। চাকরি দেওয়ার নামে পটুয়াখালীর দুই ব্যক্তির নিকট থেকে ১৩ লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগে লুপার বিরুদ্ধে জিডি।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম গণমাধ্যমকে বলেন, লুপার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। রিমান্ড শেষে শুক্রবার জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে তাঁকে।

জানা গেছে, মাদকাসক্তসহ বেপরোয়াভাবে চলা লুপার চারটি বিয়ে তথ্য মিলেছে। রাজধানীর ‘মোতালেব প্লাজার’ পেছনের একটি ফ্ল্যাটে তিনি থাকেন। গত বছর ওই বাসা থেকিই তাঁর ছেলের লাশ উদ্ধার হয়। তিনি এটি আত্মহত্যা বলে জানান।

তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা নিয়ে সংবাদ করায় আরটিভির পটুয়াখালী প্রতিনিধি মুফতি সালাহ উদ্দিনের বাবার বিরুদ্ধেও গুমের মামলা দিয়ে হয়রানি করেন তিনি।

ডিবির রমনা অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মিশু বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘লুপার জীবন যাপন নিয়ে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকা থেকে গত ১ সেপ্টেম্বর জিনিয়াকে অপহরণ করা হয়। পরে গত রোববার নারায়ণগঞ্জ থেকে জিনিয়াকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ফতুল্লার আমতলা এলাকার একটি বাসা থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence