১২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত কর্মকর্তাদের মারধরে নিহত হয় ৩ কিশোর

  © ফাইল ফটো

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে সংঘর্ষ নয়, বরং কর্মকর্তা ও আনসার সদস্যদের বেধড়ক মারধরে বন্দিদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কিশোর বন্দিরা এমনটিই দাবি করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরের এ ঘটনায় যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন বন্দি নিহত ও ১৪ জন আহত হয়।

হাসপাতালে ভর্তি বন্দি কিশোররা জানায়, ঘটনার সূত্রপাত ৩ আগস্ট, ঈদের দুই দিন পর। শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের আনসার সদস্য নূর ইসলাম কয়েকজন কিশোরের চুল কেটে দিতে চান। কিন্তু কিশোররা চুল কাটতে রাজি না হওয়ায় তিনি কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগ করেন- ওই কিশোররা নেশা করে। এর প্রতিবাদে ওই দিন কয়েকজন কিশোর তাকে মারপিট করে।

আহত কিশোরদের দাবি, ওই ঘটনার সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে ১৮ জন বন্দিকে রুম থেকে বাইরে বের করে আনা হয়। এরপর বিকাল ৩টা পর্যন্ত পালাক্রমে তাদের লাঠিসোটা, রড ইত্যাদি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করা হয়। পালাক্রমে এভাবে মারপিটের পর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের ফেলে রাখা হয়। পরে কয়েকজন মারা গেলে সন্ধ্যার দিকে তাদের লাশ যশোর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পুলিশের খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি নাহিদুল ইসলাম জানান, এখানে আসলে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি। আজকের ঘটনাটি একপক্ষীয়। ঘটনাটির প্রায় ছয় ঘণ্টা পর জানা গেছে। স্থানীয় সংবাদকর্মীরাও ঘটনা জেনেছেন সন্ধ্যার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে।

তিনি জানান, তিনি নিজেও রাত ১০টার পর ঘটনা জেনে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে এসেছেন। এখানে কী হয়েছে এবং কেন হয়েছে তা পুলিশ তদন্ত করবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও তদন্ত হবে। আর ক্ষতিগ্রস্ত কিশোরদের স্বজনরা মামলা করলে পুলিশ মামলা নেবে। তদন্তাধীন ঘটনা হওয়ায় এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে তিনি রাজি হননি।

শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ঘটনায় তদন্ত কমিটি

যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন বন্দি কিশোর নিহত ও অন্তত ১৪ জন আহত হওয়ার ঘটনায় দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। আজ শুক্রবার দুপুরে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক শেখ রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই কমিটি গঠন করা হয়।

পুলিশ হেফাজতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের ১০ কর্মকর্তা

এ ঘটনায় কেন্দ্রের সহকারী পরিচালকসহ ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাদের শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সহকারী পরিচারক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্ববধায়ক মাসুম বিল্লাহ, সাইকো সোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমানসহ ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন।