নিবন্ধন ছাড়াই চলছে আট বছর

গাজীপুর সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান

  © ফাইল ফটো

নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগের পর গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অভিযান শুরু করে টাস্কফোর্স। আর এতে দেখা যায়, দীর্ঘ আট বছর ধরে হাসপাতালটি চলছে নিবন্ধন ছাড়াই। সেই সাথে নিবন্ধন ছাড়াই ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং রক্তপরিসঞ্চালন কেন্দ্র পরিচালনা করে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি।

প্রতিষ্ঠানটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরের মালিকানাধীন যেটি কিনা কোনো নিয়মনীতির ধার ধারত না। এর আগে গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত টাস্কফোর্স হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে এসব অনিয়ম পেয়েছে।

এসব অনিয়ম ও নানা বিষয়ে অসঙ্গতির কারণে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়ে ৭ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একই দিন সেবা হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়। এখানেও নানা বিষয়ে অনিয়ম-অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

অভিযানে হাসপাতালে মেয়াদোত্তীর্ণ বিপুল পরিমাণ রিএজেন্ট এবং সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট পাওয়া গেছে। এছাড়া হাসপাতালের অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্রগুলোও মেয়াদোত্তীর্ণ। আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে সব ধরনের নিবন্ধন করিয়ে নিতেও নির্দেশনা দেন অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তারা।

টাস্কফোর্সের অন্যতম সদস্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (হাসপাতাল) উম্মে সালমা তানজিয়া অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এসময় র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম, গাজীপুর র‌্যাব-১ ক্যাম্পের কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের হাসপাতাল শাখার কর্মকর্তা ডা. দেওয়ান মেহেদী হাসান অংশগ্রহণ করেন।

অভিযান শেষে র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার আলম বলেন, সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি একটি বড় হাসপাতাল। বড় হাসপাতাল হিসেবে আমরা এর কাছে ভালো আশা করেছিলাম। কিন্তু এ প্রতিষ্ঠানটির কোনো লাইসেন্সই নেই এবং সেবা জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স মেয়াদোত্তীর্ণ। এছাড়া হাসপাতাল দুটির ল্যাবের অনুমোদন নেই, অপারেশন থিয়েটার থেকে মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া অপারেশন থিয়েটারে ব্যবহৃত মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল সামগ্রী ব্যবহারসহ নানা অভিযোগে সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং সেবা জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

তিনি হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা বিষয়ে বলেন, আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে অনুমোদনহীন হাসপাতালগুলো লাইসেন্স নিতে ব্যর্থ হলে সেই প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। কারণ স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে প্রতারণা বা ছিনিমিনি করা হোক, তা কোনোভাবেই বরদাশত করা যাবে না। এ সময় সিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. রাফায়েত উল্লাহ শরীফ ও সেবা জেনারেল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক হারুন-অর রশীদ বাদল ও মা. মোবারক হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

সিটি হাসপাতালটির করোনা ইউনিট চালুর অনুমতি না থাকলেও সেখানে রয়েছে ১০০ শয্যার করোনা আইসোলেশন ইউনিট। পিসিআর ল্যাব না থাকলেও নিয়মিত করা হচ্ছে করোনা পরীক্ষা-এমন অভিযোগ থাকলেও টাস্কফোর্সের সদস্যরা তার কোনো প্রমাণ পাননি।

এই সময়ে পার্শ্ববর্তী সেবা হাসপাতালেও অভিযান পরিচালনা করে টাস্কফোর্স। সেখানে গিয়েও পর্যাপ্ত পরিমাণ রিএজেন্ট ও সার্জিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট পাওয়া গেছে। এই হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন থাকলেও তাদের রক্তপরিসঞ্চালন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অনিবন্ধিতভাবে। এসব কারণে এই হাসপাতালকেও সাড়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

এর আগে গত ৮ জুলাই শনিবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের সম্মেলনকক্ষে টাস্কফোর্সের দ্বিতীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বা নিবন্ধন নবায়ন করার বাধ্যবাধকতা জানানো হয়। ওই সময়ের মধ্যে যারা নবায়নে ব্যর্থ হবে, তাদের হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হবে বলেও জানানো হয়। সভায় জানানো হয়, বর্তমানে নিবন্ধন ছাড়াই কার্যক্রম চলিয়ে যাচ্ছে ১১ হাজারের বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক। সভায় উপস্থিত থেকে টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বলেন, যত বড় হাসপাতালই হোক, ২৩ আগস্টের পর কোনো ছাড় পাবে না। এ ছাড়া এখন থেকে স্বাস্থ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সমন্বিত ভাবে বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় অভিযান পরিচালনা করবে। তারই ধারাবাহিকতায় টাস্কফোর্স এই অভিযান পরিচালনা করে।

 


সর্বশেষ সংবাদ