সৌদি যুবরাজ সালমানের বিরুদ্ধে কানাডায় হত্যা পরিকল্পনার অভিযোগ

২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতাদের সাথে লন্ডন সফরে সাদ আল-জাবির
২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতাদের সাথে লন্ডন সফরে সাদ আল-জাবির   © বিবিসি

সৌদি আরবের সাবেক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে কানাডায় একটি হিট স্কোয়াড বা হত্যাকারী দল পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে দায়ের করা নথিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, তুরস্কে সাংবাদিক জামাল খাসোগজি হত্যার পরপরই সাদ আল-জাবরিকে হত্যার পরিকল্পনাটি করা হয়।

জাবরি সৌদি আরব সরকারের একজন অভিজ্ঞ সাবেক কর্মকর্তা, নির্বাসিত হওয়ার পর গত তিন বছর ধরে কানাডায় থাকেন তিনি। আদালতের নথিপত্রের হিসেবে, টরেন্টো পিয়ারসন বিমানবন্দর দিয়ে হত্যাকারীরা কানাডা প্রবেশ করার সময় কানাডিয়ান সীমান্ত রক্ষীদের সন্দেহ হয় এবং তাদের বাধা দেয়। এতে হত্যার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়।

ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই-সিক্স এবং অন্যান্য পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থার সাথে সৌদি আরবের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিলেন ৬১ বছর বয়সী জাবরি। ওয়াশিংটন ডিসিতে দায়ের করা ১০৬ পৃষ্ঠার অপ্রমাণিত অভিযোগপত্রে অভিযোগ তোলা হয়, জাবরির মুখ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে তাকে হত্যা করার নির্দেশ দেন সৌদি যুবরাজ।

নথি অনুযায়ী, ‘টাইগার স্কোয়াড’ নামের পেশাদার হত্যাকারীদের একটি দল পাঠানো হয়েছিল জাবরিকে হত্যা করতে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, তার কাছে থাকা ‘সংবেদনশীল তথ্যে’র কারণে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ২০১৮ সালে ইস্তান্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাসোগজি হত্যায়ও টাইগার স্কোয়াডের সদস্যরা যুক্ত ছিলেন বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পেশ করা নথিতে।

সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অভিযুক্ত মোহাম্মদ বিন সালমান সম্পর্কে এত অপমানজনক, সংবেদনশীল এবং ভয়াবহ তথ্য ড. সাদের স্মৃতি এবং মস্তিষ্কের চেয়ে বেশি আর কোথাও সম্ভবত রক্ষিত নেই। সেই কারণেই অভিযুক্ত বিন সালমান জাবরিকে মৃত দেখতে চান এবং সেই লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন গত তিন বছর ধরে।’

মোহাম্মদ বিন সালমান তার বিরোধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করার পর তিন বছর আগে সৌদি আরব ছাড়েন সাদ আল-জাবরি। এরপর ২০১৭ সালে তুরস্ক হয়ে কানাডা পাড়ি জমান তিনি। তিনি অভিযোগ তোলেন, যুবরাজ মোহাম্মদ একাধিকবার তাকে সৌদি আরবে ফেরানোর চেষ্টা করেন - এমনকি ব্যক্তিগতভাবে মেসেজও পাঠান তাকে। সেগুলোর মধ্যে একটি মেসেজের বক্তব্য ছিল, ‘আমরা নিশ্চিতভাবে তোমার কাছে পৌঁছাবো।’

জাবরি বলেন, জামাল খাসোগজিকে হত্যা করার দুই সপ্তাহের মধ্যে টাইগার স্কোয়াডের সদস্যরা কানাডায় পৌঁছায় তাকে হত্যা করার উদ্দেশ্য নিয়ে। আদালতে পেশ করা নথিতে উল্লেখ করা হয়, জামাল খাসোগজিকে হত্যা করে লাশ খণ্ডিত করার অভিযোগ ছিল যে দলটির বিরুদ্ধে, ঐ দলের একজন সদস্য কানাডায় পাঠানো টাইগার স্কোয়াডেও ছিলেন।

তার কাছে দুই ব্যাগ ফরেনসিক উপকরণ ছিল বলেও অভিযোগে বলা হয়। নথিতে বলা হয়, কানাডার সীমান্ত রক্ষা বাহিনী ঐ দলটি সম্পর্কে ‘সন্দিহান হয়ে ওঠে’ এবং তাদের কানাডায় প্রবেশে অস্বীকৃতি জানায়। জাবরি আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে তাকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। এ সম্পর্কে সৌদি সরকারের মতামত চাওয়া হলেও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।

সাদ আল-জাবরি বহু বছর সৌদি প্রিন্স মোহাম্মদ বিন-নায়েফের ডান হাত ছিলেন। ২০০০ এর দশকের দিকে আল কায়েদাকে পরাজিত করার পেছনে মোহাম্মদ বিন-নায়েফের ভূমিকাকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। সৌদি আরবের সাথে ‘ফাইভ আইস’ এর (যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড) গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কের মূল মাধ্যম ছিলেন জাবির।

আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সে এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করা মৃদুভাষী সাদ আল-জাবির এক পর্যায়ে মন্ত্রী হন এবং অভ্যন্তরীন মন্ত্রণালয়ে মেজর জেনারেলের পদমর্যাদা লাভ করেন। কিন্তু পরিস্থিতি আমূল পাল্টে যায় ২০১৫ সালে বাদশাহ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর। বাদশাহ আবদুল্লাহ মারা যাওয়ার পর তার সৎ ভাই সালমান বিন আবদুল আজিজ সৌদি বাদশাহ হন এবং তার ছেলে মোহাম্মদ বিন সালমানকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন।

২০১৭ সালে বাদশাহ সালমান তাঁর ক্ষমতার উত্তরাধিকার হিসেবে বেশ নাটকীয় পরিবর্তন আনেন। বাবা বাদশাহ সালমানের সম্মতিতে তিনি কোনো রক্তপাত ছাড়াই এক সামরিক অভ্যুত্থান পরিচালনা করেন। সেসময় সৌদি রাজ পরিবারের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মোহাম্মদ বিন নায়েফকে সরিয়ে নিজে হয়ে যান যুবরাজ- রাজ ক্ষমতার পরবর্তী উত্তরাধিকারী।

সেসময় উত্তরাধিকার থেকে বিতারিত রাজপুত্র মোহাম্মদ বিন নায়েফ এখন কারাগারে। তার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং তার সাথে কাজ করা ব্যক্তিদের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। সেসব ঘটনা চলাকালীন সময়েই জাবরি কানাডা চলে যান। খবর: বিবিসি বাংলা।


সর্বশেষ সংবাদ