অপুর মেধা আছে, সে ভালো গান গাইতে পারে: বাবা

জনপ্রিয় ভিডিও অ্যাপ টিকটকের বিতর্কিত মুখ ‘অপু ভাই’য়ের গ্রেফতারের পর থানায় এসেছিলেন বাবা শহীদুল ইসলাম। তিনি সেখানে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘তার মেধা আছে, সে ভালো গান গাইতে পারে। যত্ন নিলে আরো ভালো করত। থানার ওসি সাহেবও বললেন সেই কথা। ওরে জামিন পাইলে আগে ওসি সাহেবের কাছে নিয়ে আসব। তিনি যে পরামর্শ দেবেন, সেটাই করব।’

সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরা থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অপুর বিরুদ্ধে সড়ক অবরুদ্ধ করে বাদীকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম, চুরি ও হুমকির অভিযোগ আনা হয়। অপুকে গ্রেফতারের পর উত্তরা পূর্ব থানায় এসেছিলেন ছেলের বিষয়ে খোঁজ নিতে অপুর বাবা শহীদুল ইসলাম।

তিনি সংবাদমাধ্যমকে আরো বলেন, ‘ওসি সাহেবের সঙ্গে আমার আলাপ হইছে। তারা ভালো রিপোর্ট দিছেন। ছেলের আসলে ঠিকমতো দেখাশোনা করি নাই, এই জন্য এই রকম হইছে। এখন আমি জজকোর্টে যাচ্ছি, ওর জামিন হলে ওর প্রতি খেয়াল নিবো।’

শহিদুল ইসলাম আরও বলেন, ‘অপু যে ঢাকায় ছিল সেটা তিনি জানতেন না। কারণ অপু সোনাইমুড়িতে নানাবাড়িতে থাকত। অপুর মায়ের সঙ্গে তাঁর তালাক হয়ে গেছে ১৩ বছর আগে। সে ঘরে অপু (২০) ও অন্তর (১৬) নামে দুই সন্তান রয়েছে। পরে অপুর মা শহীদুল ইসলামকে তালাক দিলে তিনি ফের বিয়ে করেন। তবে সোনাইমুড়ির সোনাপুরে নানাবাড়িতে অপু ও অন্তরের জন্য খরচ পাঠাতেন শহীদুল ইসলাম।

শহীদুল ইসলামের মিটফোর্ডসহ ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসার ক্ষেত্র ছিল। এখন ব্যবসা বাদ দিয়ে নোয়াখালীর মাইজদীতে থাকেন।

এদিকে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার টিকটকের ‘অপু ভাই’য়ের রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর একটি মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করেছেন ইয়াছিন আরাফাত অপু। অন্য দশজন ছাত্রের মতো অপুও মন দিয়েছিল পড়াশোনায়। ভালো ছাত্র হিসেবে নামডাকও বেশ ছিল। কিন্তু সংসারের অভাবের কারণে পড়াশোনা করতে পারেনি বেশী দূর। এরপর চাকরি নেন একটি সেলুনে।

সেখান থেকে শুরু। সেলুনে আড্ডা দিতে আসা এলাকার কিছু উঠতি তরুণের কাছ থেকে জানতে পারেন টিকটিক-লাইকের মতো অ্যাপসের বিষয়ে। আরও জানতে পারে খুব সহজে এখান থেকে জনপ্রিয় ও প্রচুর টাকা আয় করা যায়। এরপর কয়েকজন বন্ধুর মাধ্যমে শুরু করেন মোবাইলভিত্তিক অ্যাপস টিকটক ও লাইকিতে ভিডিও বানানো। তবে ভিডিও বানাতে গিয়ে ভিনদেশি তরুণদের অনুসরণে চুলে বিভিন্ন রং ও উদ্ভট স্টাইল করে অপুর দল। সেলুনের অভিজ্ঞতা কাজে চুলে বাহারি রং লাগিয়ে খুব সহজে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর পিছনে থাকাতে হয়নি।

এরপর টিকটক ও লাইকিতে নানা ভিডিও তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড করে অল্প দিনেই অর্জন করেন জনপ্রিয়তা। গড়ে তোলেন অনুসারীদের বিরাট বাহিনী। ২ মাসেই আয় করেন ৫০ হাজার টাকা। নতুন ভিডিও বানাতে ২ আগস্ট অনুসারীদের নিয়ে ঢাকায় আসেন অপু।

পুলিশ বলছে, উশৃঙ্খল আচরণে কিশোর গ্যাং সংস্কৃতিকে উৎসাহ দিচ্ছিলো তারা। উত্তরা উপ-কমিশনার নাবিদ কামাল শৈবাল বলেন, তার সঙ্গীরা কিশোর গ্যাং হিসেবে নিজেদেরকে প্রকাশ করার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। মাদকের সাথে তারা জড়িত কিনা খতিয়ে দেখছি।

টিকটকের মতো অ্যাপে রাতারাতি খ্যাতি পাচ্ছেন উঠতি বয়সীরা। গড়ে উঠছে কিশোর অনুসারীদের বিশাল বাহিনী। ধীরে ধীরে গ্যাং সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছেন তারা, বাড়ছে অপরাধ প্রবণতা। রাজধানীর সড়কে গোলমালের অভিযোগে টিকটক তারকা অপু গ্রেফতারের পর এমনই বলছে পুলিশ। বিশেষজ্ঞরাও একমত।

নজরুল নামে একজন জানিয়েছেন, ‘নোয়াখালীর বার্বার শপে কাজ করা অপু তুমুল জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন লাইকি ও টিকটকে। অপুর উইয়ার্ড হাসি, ক্রিপি হেয়ারস্টাইল ও অদ্ভুত সব ডায়ালগের জন্য এই তরুণকে মূলত রোস্ট করতে করতে বিখ্যাত বানিয়েছে ইউটিউবাররা।


সর্বশেষ সংবাদ