ভুল হলেই নিজ কক্ষে কর্মচারীদেরকে অমানবিক নির্যাতন করতেন সাহেদ

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় পলাতক সাহেদ করিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে আসছেন ভুক্তভোগীরা। রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপর নিপীড়ন চালাতেন বলে সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) আরিফুর রহমান সোহাগ জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, সাহেদের হয়রানি-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি চাকরি ছাড়তে চাইলে সাহেদ তাকে থানায় নিয়ে আটকে রাখেন। পরে কৌশলে কর্মস্থল ছেড়ে দিলে চুরির মিথ্যা অভিযোগে তার পুরো পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করেন সাহেদ।

সোহাগ ২০১৪ থেকে ২০১৭ সালের অগাস্ট পর্যন্ত সাহেদের পিআরওর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বলেন, চাকরি ছাড়ায় মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে তাকে। তার বাবা-মা ও তিন বোনকে আসামি করা হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা জামিন পেলেও হাজিরা দিতে নিয়মিত চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় যেতে হয় তাকে।

সোহাগ ২০১৪ সালে রিজেন্ট গ্রুপের পত্রিকা দৈনিক নতুন কাগজে যোগ দিলে পরে তাকে সাহেদের পিআরও হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, নতুন কাগজ পত্রিকার অনলাইন ভার্সন চালু ছিল। সেসময় তার ব্যক্তিগত পিআরও হতে বলে আমাকে। পিআরও হিসেবে ব্যক্তিগত কর্মসূচি রক্ষা, টক শো’র বক্তব্য, হাসপাতালের বিভিন্ন বিষয় দেখাশোনাসহ সাহেদের ঘরের কাজও সোহাগ করতেন বলে জানান।

তিনি বলেন, সাহেদ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করতেন; অবিশ্বাস করতেন। কর্মচারীরা অত্যাচারে তটস্থ থাকতেন। পছন্দমতো কাজ না হলে নিজ কক্ষে কর্মচারীদের ডেকে নির্যাতন করতেন। এসব দেখে ২০১৭ সালে চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এ কথা শুনেই উত্তেজিত হয়ে হুমকি দেন সাহেদ।

সোহাগ বলেন, কয়েকদিন পরে পুলিশ দিয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় নিয়ে গিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। পরের দিন চেয়ারম্যানকে স্যরি বলে কাজে যোগ দেন তিনি। এর কয়েকদিন পর সাহেদের অজ্ঞাতে মালয়েশিয়া চলে যান। ওই সময়ে দৈনিক নতুন কাগজ পত্রিকার অনলাইনে রিজেন্ট গ্রুপের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই মর্মে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। কিছুদিন পর রিজেন্ট গ্রুপের ২০ লাখ টাকা চুরির মামলা করেন সাহেদ। হয়রানির জন্য মিথ্যা মামলাটি করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।

করোনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া সনদ দেওয়াসহ নানা অভিযোগে গত ৬ জুলাই উত্তরা ও মিরপুরে সাহেদের রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র‌্যাব। পরদিন রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালা করে দেওয়া হয়। এরপর ৭ জুলাই সাহেদকে এক নম্বর আসামি করে আরও ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র‌্যাব। ওই মামলায় সাহেদসহ ৯ জন পলাতক রয়েছেন। তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।

সোহাগ বলেন, সাহেদ প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয় দিয়ে দাপট দেখাতেন। এতদিন পর্যন্ত তার ক্ষমতার কারণে ভয়ে কোনো অভিযোগ করতে পারিনি। তিনি কর্মচারীদের মারধর করতেন। অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতেন। ছূটি দিতেন না, অমান্য করলে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি পেতে হত।


সর্বশেষ সংবাদ