দুই কোটি টাকার বিলে ২২ লাখই ঘুষ!

  © ফাইল ফটো

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় চারটি সড়ক নির্মাণের জন্য দুই কোটি ১৯ লাখ টাকা বিল তুলতে ঠিকাদারদের ঘুষ দিতে হয়েছে ২২ লাখ টাকারও বেশি। এদিকে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মিজানুর রহমান খান চূড়ান্ত বিলের ফাইল আটকে রেখে এ ঘুষ আদায় করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এর আগে উপজেলা চেয়ারম্যান আক্তারুজ্জামান মিঠুর কাছে ঠিকাদাররা পিআইওর দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করে দ্রুত বিল ছাড়ের জন্য অনুরোধও জানিয়েছিলেন।

জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে গ্রামীণ মাটির রাস্তা টেকসই করার লক্ষ্যে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) করণ (২য়) প্রকল্পের আওতায় ভেড়ামারা উপজেলায় চারটি সড়ক নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতিটি সড়কের দৈর্ঘ্য এক কিলোমিটার। যার মোট ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ১৯ লাখ নয় হাজার টাকা।

এ চারটি কাজের মধ্যে ছিল- চাঁদগ্রাম জিকে ক্যানেলের ২নং ব্রিজের কাছ থেকে হঠাৎপাড়ার দিকে আনোয়ারের বাড়ি পর্যন্ত এক হাজার মিটার রাস্তায় এসবিবিকরণ, যার ব্যয় ধরা হয় ৫৪ লাখ ৯১ হাজার টাকা; বাহাদুরপুর ৮নং ওয়ার্ডের কুচিয়ামোড়া আমিরের বাড়ি থেকে হাচুর বাড়ি পর্যন্ত এক হাজার মিটার সড়ক নির্মাণ, যার জন্য অর্থ বরাদ্দ ছিল ৫৪ লাখ ৫৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া অন্য দুটি কাজে ব্যয় বরাদ্দ এক কোটি নয় লাখ টাকারও বেশি।

গত মার্চ-এপ্রিল মাসে টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে কাজ পায় কুষ্টিয়া ও মিরপুর উপজেলার চারটি ঠিকাদারি ফার্ম। কুষ্টিয়া শহরের দুই ঠিকাদার রেজাউল ও রাকিব এবং মিরপুর উপজেলার হাবিবসহ অন্য একজন এসব কাজ করেন। ভেড়ামারা উপজেলা পিআইও মিজানুর রহমান খান কার্যাদেশ দেওয়ার পর টেন্ডারের সব শর্ত মেনে তারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করেন। জুন মাসে চূড়ান্ত বিলের জন্য আবেদন করেন তারা।

নাম প্রকাশ না করা একজন ঠিকাদার বলেন, সব শর্ত মেনেই সড়কের কাজ শেষ করেছি। কাজে কোনো ত্রুটি কিংবা অনিয়মও পাননি উপজেলা পিআইও। তার পরও বিভিন্ন সময় তিনি অর্থ নিয়েছেন। এরপর চূড়ান্ত বিলের জন্য আবেদন জানালে তিনি ফাইল ও চেকে স্বাক্ষর না দিয়ে আটকে রাখেন। তিনি সরাসরি শতকরা ১০ পার্সেন্ট টাকা দাবি করেন। সেই হিসাবে তাকে প্রতিটি কাজের বিপরীতে পাঁচ লাখ টাকার ওপরে ঘুষ দিতে হয়েছে। টাকা হাতে পাওয়ার পর গত সপ্তাহের শেষ দিকে তিনি ফাইলে স্বাক্ষর দেন।

তিনি অভিযোগ করেন, ৫০ লাখ টাকার কাজে পিআইও যদি পাঁচ লাখ টাকা জোর করে নেন, তাহলে লাভ আর কী থাকে! বিষয়টি নিয়ে কাউকে জানালে বা বাড়াবাড়ি করলে জামানতের অর্থ পেতে ভোগান্তি হবে বলেও হুমকি দেন পিআইও মিজানুর।

এদিকে এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে উপজেলা পিআইও মিজানুর রহমান বলেন, ঠিকাদাররা মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। কাজের মান ঠিক রেখে করতে বলায় তারা হয়তো এ ধরনের অভিযোগ করতে পারেন। কাজে কোনো অনিয়ম পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'না, কাজে কোনো অনিয়ম হয়নি। কাজ ভালো হয়েছে।

তার পরও চাপ দিয়ে অর্থ নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি নানা কথা বলে বিষয়টি পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজি আক্তারুজ্জামান মিঠু বলেন, পিআইও দপ্তরে চূড়ান্ত বিল জমা দিয়েও টাকা তুলতে না পেরে ঠিকাদাররা আমাকে এ নিয়ে অনুরোধ করেছিলেন। উপজেলা চেয়ারম্যানের ক্ষমতা কম। অভিযোগ পেলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। তার পরও আমি ফোন করে তাড়াতাড়ি বিল দেওয়ার জন্য পিআইওকে অনুরোধ করেছিলাম।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল মারুফ বলেন, বিষয়টি নিয়ে এখনও আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। এলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো অনিয়ম পেলে ছাড় দেওয়া হবে না।