ফল পেয়ে ১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

  © প্রতীকী ছবি

চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল রবিবার (৩১ মে) প্রকাশিত হয়েছে। এবার ৮২ দশমিক ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যাদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৯৮ জন। কাঙ্ক্ষিত এ ফল পেয়ে অনেকে খুশিতে আত্মহারা হয়েছে। পরিবার-পরিজনদের নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করছেন তারা। পাশাপাশি অকৃতকার্য কিংবা কাঙ্ক্ষিত গ্রেড না পাওয়ায় স্বপ্ন ভঙ্গও হয়েছে অনেকের।

সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পরীক্ষায় অকৃতকার্য এবং জিপিএ-৫ না পাওয়ায় শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, লালমনিরহাট, গাজীপুর, ঝিনাইদহ, হবিগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও, ফরিদপুর, দিনাজপুর এবং জয়পুরহাটে মোট ১০ জন কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। 

জিপিএ-৫ না পেয়ে মোতাসির রহমান বর্ষা নামের এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলা ইদুলপুর ইউনিনের বটনা গ্রামের মতিউর রহমান সরকারের মেয়ে। সে এবার ইদুলপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অংশগ্রহণ করে। রবিবার (৩১ মে) দুপুর ১টার দিকে নিজ ঘরের ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক এমদাদুল হক বলেন, বর্ষা পড়ালেখায় বেশ ভালো ছিল। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সে। রবিবার প্রকাশিত এসএসসি ফলাফলে দেখা যায়, বর্ষা তিনটি বিষয়ে ৭৮ নম্বর পায়। আর সবগুলো বিষয়ে ৮০ ওপর নম্বর পেয়েছে। অল্পের জন্য জিপিএ-৫ পায়নি সে। তাই শুনলাম আত্মহত্যা করেছে।

পরীক্ষায় ফেল করায় অভিমান করে গলায় রশি পেঁচিয়ে মাফিয়া খাতুন (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। রবিবার (৩১ মে) সকালে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়ের পুঠিয়া গ্রামে এ ঘটনা। পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়নের ফলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে এ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে সে। ওই ছাত্রী উপজেলার পূর্নিমাগাঁতী ইউনিয়নের পুঠিয়া গ্রামের ময়নাল হোসেনের মেয়ে। দুই বোনের মধ্যে মাফিয়া ছিল ছোট।

পরীক্ষায় ফেল করায় বিষপানে লাইজু আক্তার নামে এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। রবিবার (৩১ মে) ফল প্রকাশের পর লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে। তার পিতার নাম জেল হক। সে পারুলিয়া তফসীল হাইস্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে মানছুরা (১৬) নামের এক স্কুলছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। রবিবার (৩১ মে) বেলা ১২টার দিকে নিজ ঘরের ধর্নার সাথে ঝুলে সে আত্মহত্যা করে। গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলার গোসিঙ্গা ইউনিয়নের নারায়নপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই গ্রামের সৌদি প্রবাসী হান্নান মিয়ার মেয়ে তিনি।

শ্রীপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আলাউদ্দিন জানান, লতিফপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় মানছুরা। আজ রবিবার ফলাফল ঘোষিত ফলাফলে তিনি অকৃতকার্য হন।  ফল ঘোষণার পরই তিনি খালি ঘরে ধর্ণার সাথে ওড়নায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

পরীক্ষায় ‘সি’ গ্রেড পাওয়ায় পিয়ারুল ইসলাম (১৭) নামের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। রবিবার (৩১ মে) দুপুরে ২টার দিকে ঝিনাইদহের মহেশপুরের শাহাবাজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত পিয়ারুলের বাবার নাম ঝন্টু মন্ডল। সে স্থানীয় খালিশপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।

মহেশপুর থানার ওসি তদন্ত রাশেদুল আলম জানান, পিয়ারুল ইসলাম যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে খালিশপুর বহুমুখী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল। আজ ফলাফল প্রকাশের পর সে জানতে পারে ‘সি’ গ্রেড (২.৭৮ পেয়ে) কৃতকার্য হয়েছে।

পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় হবিগঞ্জের এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। নিহত পরশ মনি লাখাই উপজেলার বেগুনাই গ্রামের জামাল উদ্দিনের মেয়ে। সে মাদনা এসইএসডি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল।

লাখাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম পারিবারিক উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, আজ এসএসসির ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর অকৃতকার্য হলে সকলের অগোচরে বিষপান করে পরশমনি। তাকে হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এসএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুরে লিমা আক্তার (১৬) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মংলা।

মৃত লিমা আক্তার হরিপুর উপজেলার ৫নং হরিপুর সদর ইউনিয়নের তিনুয়া গ্রামে জহিরুল ইসলামের মেয়ে এবং হরিপুর দ্বিমুখী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে লিমা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিলেন।

লিমার বাবা জহিরুল ইসলাম জানান, ধান কাটার জন্য রবিবার সকালে স্ত্রীকে নিয়ে মাঠে যান। এরপর দুপুর ১টার দিকে বাড়ি থেকে খবর আসে লিমা গলায় ফাঁস দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে মাঠ থেকে বাসায় যান। এরপর লিমাকে উদ্ধার করে হরিপুর হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক লিমাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পরীক্ষায় ফেল করায় ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলায় সামান্তা (১৭) নামের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। রবিবার (৩১ মে) দুপুর দেড়টায় পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। সামান্তা পৌরসভার কাপুড়িয়া সদরদী গ্রামের শাওন সিকদারের মেয়ে ও ভাঙ্গা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিল। 

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, গত বছর এসএসসি পরীক্ষায় সামান্তা ফেল করে। এ বছর ফের পরীক্ষা দেয় সামান্তা। সকালে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হলে,  সে জানতে পারে এ বছরও  সে ফেল করেছে। বাড়িতে তার শোবার ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস দেয়। পরিবারের সদস্যরা সামান্তার ঘরের দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে তার ঘরে ঢুকে তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়। তাকে দ্রুত ভাঙ্গা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করে। ভাঙ্গা থানার ওসি মো. শফিকুর রহমান জানান, পুলিশ মরদেহটির সুরতহাল রিপোর্ট সংগ্রহ করেছে। তদন্ত সাপেক্ষে যাবাতীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পরীক্ষায় ফেল করায় দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে পাতা রায় (১৬) নামে এক কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। সে চিরিরবন্দর উপজেলার ৭নং আউলিয়াপুকুর ইউনিয়নের ভাদ্রা গ্রামের দিলিপ রায়ের মেয়ে। সে শাশরপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, ঘোষিত এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে পাতা রায় তার রোল নম্বর খুঁজে পায়নি। অকৃতকার্য হওয়ায় সন্ধ্যায় সকলের অজান্তে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। চিরিরবন্দর থানা পুলিশের ওসি সুব্রত সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

গণিতে ফেল করায় জয়পুরহাট সদর উপজেলার পুরানাপৈল দস্তপুর গ্রামে আবু সাঈদ (১৭) নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। রবিবার (৩১ মে) সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে। আবু সাঈদ পুরানাপৈল দস্তপুর গ্রামের সরোয়ার হোসেনের ছেলে এবং শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্র।

এলাকাবাসী ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হবার পর উত্তীর্ণ হতে না পেরে অভিমান করে বাড়ির সবার অগোচরে কীটনাশক খায়। এক পর্যায়ে বিষয়টি পরিবারের লোকজন বুঝতে পেরে তাকে দ্রুত জয়পুরহাট আধুনিক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করায়। এরপর সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তার মৃত্যু হয়।

শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুর রহমান বলেন, সাঈদ আমাকে মোবাইল করে বলে স্যার আমার রেজাল্ট পাওয়া যাচ্ছে না। শুধু জিপিএ আসছে পয়েন্ট আসছে না, তখন আমি তাকে বলি রেজাল্ট আমি তোমাকে জানাচ্ছি, পরে শুনি এ ঘটনা, শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। জয়পুরহাট সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহরিয়ার খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


সর্বশেষ সংবাদ