ছেলের সংসারে ঠাঁই হয়নি মায়ের, টার্মিনালে আশ্রয়

করোনা সংকটের মধ্যে বৃদ্ধা মায়ের জায়গা হয়নি ছেলে-বউয়ের সংসারে। বিভিন্নভাবে নির্যাতন চলত বৃদ্ধা মায়ের ওপর। তাই বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে বাড়ি ছেড়েছে মা। বড় আশা নিয়ে ভারতে ছোট ছেলের কাছে যাওয়ার জন্য বেনাপোলে চেকপোস্ট এসেছেন। নেই কোনো পাসপোর্ট ভিসা।

তারপরও ছোট ছেলেকে ফোন করে বিষয়টি জানানো হলেও তাকে নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ছোট ছেলে। তারপরও হাল ছাড়েনি বৃদ্ধা মা। বেনাপোল আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের বারান্দায় বিছানা পেতে বসে শুয়ে দিন পার করছেন ওই বৃদ্ধা মা। শুক্রবার (২৯ মে) বিকেলে বৃদ্ধা মা সুনতি হালদারকে বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে দেখা যায়। ১০ দিন ধরে তিনি অনাহারে-অর্ধাহারে এখানেই পড়ে আছেন।

বেনাপোল প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের নিরাপত্তা কর্মী আমিরুল ইসলাম জানান, ওই বৃদ্ধার কষ্টের কথা শুনে তিনি ভারতে তার ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু তার ছেলে জানিয়েছেন মাকে নেয়া তার পক্ষে সম্ভব না। পরে ফোন কেটে দেন। আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

মা সুনতি হালদার জানান, তার দুই ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে বাবুল হালদার থাকেন বাগেরহাটের মোড়লগঞ্জ উপজেলার হলগাপাড়া মহেশপুর গ্রামে। আর ছোট ছেলে ও দুই মেয়ে থাকেন কলকাতায়। স্বামী নরেন হালদার থাকেন ভারতে। বাংলাদেশে বড় ছেলের সঙ্গে থাকতেন তিনি। ছেলে বাবুল হালদারের সামনে তার স্ত্রী কথায় কথায় বিভিন্নভাবে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করতো। অবশেষে কষ্ট সইতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছেন ভারতে ছোট ছেলের কাছে যাবেন বলে। কিন্তু পাসপোর্ট না থাকায় আটকে পড়ে আছেন সীমান্তের প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে।

বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহাসিন হোসেন জানান, তিনি অফিস যাওয়ার পথে কদিন ধরে দেখছেন ওই বৃদ্ধা প্যাসেঞ্জার টার্মিনালে পড়ে আছেন। কয়েকবার খাবারও কিনে দিয়েছেন। বিষয়টি তিনি পোর্ট থানা পুলিশ ও বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। এছাড়া তার পরিবারের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করছেন।

ছেলের বউ নির্যাতন করলেও পুলিশে অভিযোগ দেননি কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সুনতি হালদার বলেন, এসব কথা বললে পুলিশতো আগে ছেলেকে ধরে নিয়ে যাবে। অনেক কষ্টে তাকে মানুষ করেছি। পুলিশ তাকে মারবে, আঘাত পড়বে আমার কলিজায়। সেটা আমি দেখতে পারবো না বলে কাউকে বলিনি।


সর্বশেষ সংবাদ