সুন্দরী পাপিয়ার ভয়ংকর দুই ব্ল্যাকমেইলিং

  © ফাইল ফটো

রাজধানীর হোটেলে তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ চালিয়ে প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেইলিং, তদবির বাণিজ্য, অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগে পাওয়া যাচ্ছে মহিলা ‍যুব লীগ থেকে বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়ার বিরুদ্ধে। প্রতিদিনই এমনই কোনো না কোনো নতুন তথ্য পাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাঁর বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগ পেয়ে সেসব যাচাই-বাছাই করে এরই মধ্যে অনেক সত্যতাও মিলেছে।

এর মধ্যে যুব মহিলা লীগের তিন শীর্ষ নেত্রী, ১১ জন মন্ত্রী, ক্যাসিনো কারবারে জড়িত যুবলীগের সাবেক নেতাসহ নরসিংদীর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা রয়েছেন। তাঁদের প্রশ্রয়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পাপিয়া কোটি কোটি টাকা অবৈধভাবে অর্জন করেছেন। বিদেশে লোক পাঠানোর নামে অনেক পরিবারকে পথে বসিয়েছেন।

নরসিংদীর জনৈক ব্যবসায়ী পরিবার নিয়ে বসবাস করেন রাজধানীর একটি অভিজাত এলাকায়। পূর্বপরিচিত পাপিয়ার অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি তখনো অবহিত নন। এ অবস্থায় তাঁর আমন্ত্রণে সরল বিশ্বাসে একদিন গিয়েছিলেন নরসিংদীতে পাপিয়ার বাসায়। ওই সময় পাপিয়ার বসার ঘরে চলছিল জম্পেশ আড্ডা। কিছু সময় পর পাপিয়া উঠে অন্য ঘরে চলে গেলে সেখানে আসেন দুই তরুণী। তখনই হঠাৎ চলে যায় বিদ্যুৎ। দুই তরুণী জোর করে জড়িয়ে ধরেন ওই ব্যবসায়ীকে। এ অবস্থায় ফিরে আসে বিদ্যুৎ। চকিতে তিনি দেখতে পান এক ব্যক্তি তাঁর ছবি তুলছে। ওই অবস্থায় স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরীকে নিয়ে সেখানে আসেন পাপিয়া। এসে হুমকি দেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও ছড়িয়ে দেবেন। এভাবে ভয় দেখিয়ে ওই ব্যবসায়ীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেন পাঁচ লাখ টাকা। পরে বিভিন্ন সময় তাঁকে জিম্মি করে এই দম্পতি হাতিয়ে নেন আরো কয়েক লাখ টাকা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ব্যবসায়ীর মতো পাপিয়া দম্পতির প্রতারণার শিকার হন ব্যবসায়ী তপন তালুকদার টুকু। তিনি বলেন, পাঁচ মাস আগে নরসিংদীতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে পরিচয়ের সূত্র ধরে বাড়িতে নিয়ে কম বয়সী চার জন তরুণীকে দিয়ে জোর করে তাঁর অশ্লীল ভিডিও ধারণ করেন পাপিয়া। ওই সময় পাপিয়ার স্বামী মফিজুরও পাশে ছিলেন। এরপর তাঁরা হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা দাবি করেন। তা না হলে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে মান-সম্মানের ভয়ে তিনি তাত্ক্ষণিক পাপিয়াকে ২০ হাজার টাকা দেন। এরপর তাঁকে পাপিয়াদের বাড়ির ছাদে তিন দিন আটকে রেখে চেকের মাধ্যমে দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়ে ছেড়ে দেন।

তদন্তসংশ্লিষ্টরা বহিষ্কৃত যুব মহিলা লীগ নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার প্রতারণার শিকার এমন অনেক অভিযোগ পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করছেন। সে সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়াকে এসব অপকর্মে যেসব প্রভাবশালী সহযোগিতা করেছে তাদের সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।

এদিকে পাপিয়ার অপরাধকর্মে যারাই জড়িত, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল শুক্রবার সাভারের আশুলিয়ায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।

যুবলীগ নেত্রী পাপিয়ার কার্যকলাপ নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে পাপিয়ার সঙ্গে কারা জড়িত, কারা ইন্ধনদাতা, তাঁর অর্থের উৎস কী, এত বেপরোয়া হয়ে ওঠার পেছনে শক্তির উৎস কী, তার সবই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া পাপিয়ার ব্যাপারে কোনো ভুক্তভোগী অভিযোগ করলে সেই অভিযোগগুলোও তদন্ত করা হবে। তবে তদন্তসংশ্লিষ্টরা এরই মধ্যে পাপিয়া ও তাঁর স্বামী মফিজুরের প্রতারণার শিকার ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ ও অনৈতিক কাজে বাধ্য হওয়া তরুণীদের তথ্য পেয়েছে।

রাজধানীর হোটেলে তরুণীদের দিয়ে অনৈতিক কাজ চালিয়ে প্রভাবশালীদের ব্ল্যাকমেইলিং, তদবির বাণিজ্য, অবৈধ অস্ত্র রাখাসহ নানা অভিযোগে গত শনিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় পাপিয়া ও তাঁর স্বামী সুমনসহ চারজনকে।


সর্বশেষ সংবাদ