মারধরের ঘটনাকে ‘হইচই’ বললেন ঢাবি প্রভোস্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হলে চার শিক্ষার্থীকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে ছাত্রলীগের মারধরের ঘটনাকে ‘হইচই’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রভোস্ট। বুধবার রাতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে এমন মন্তব্য করেন শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন।

এদিকে মারধরের বিচার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে অবস্থান করছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মুকিম চৌধুরী। রাতে তাকে দেখতে আসেন হল প্রভোস্ট। সেখানে সাংবাদিকরা হলে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন ও মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হলের আবাসিক শিক্ষকের বক্তব্য আপনাদের বক্তব্যের বিপরীত। সেখানে গন্ডগোল বা হইচই হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। পরে তা সমাধানের জন্য আবাসিক শিক্ষক সেখানে যান।

এছাড়া ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, গতকালের ঘটনার সুষ্ঠ তদন্তের জন্য আবাসিক শিক্ষক ড. মুহাম্মদ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এর আগে বিকেল তিনটার দিকে ‘শিবির সন্দেহে’ মারধরের শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যোলয়ে (ঢাবি) চার শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। দুপুরে ওই শিক্ষার্থীদের ছাড়াতে থানায় যান ডাকসু ভিপি নুরুল হক।

আর থানা থেকে ছাড়া পেয়ে ওই ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ছাত্রলীগের নির্যাতনের নির্মম বর্ণনা দেন। তিনি জানান,  ছত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাকে ‘শিবির’ আখ্যা দিয়ে হাতুড়ি, তার ও স্যান্ডেল দ্বারা মারধর করেছে। 

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, শিবির সন্দেহে মারা হোক কিংবা যেভাবেই মারা হোক ছাত্রলীগ কারো গায়ে হাত তোলাকে সমর্থন করে না। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত আছে তা জানতে আমরা সবাই নিয়ে বসবো। আমাদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জড়িতদের অপরাধের মাত্রার উপর ভিত্তি করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর আগে মঙ্গলবার রাতে নির্যাতনের পরে ওই শিক্ষার্থীদের পুলিশ হেফাজতে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। রাত ১১টার দিকে জুহুরুল হক হলের গেস্টরুম শেষে এ ঘটনা ঘটে। জানা গেছে, মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের নিয়মিত গেস্টরুম চলছিল। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. মুকিম চৌধুরীকে শিবির সন্দেহে গেস্টরুমে ডাকা হয়।

সেখানে হল শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আমির হামজা তাদের অনুসারীদের দিয়ে মুকিমকে প্রথমে মানসিক চাপ দেয়। এতে স্বীকার না করায় তাকে লাঠি, স্টাম্প ও রড দিয়ে বেধড়ক মারধর করতে থাকে।

পরে তার ফোনের চ্যাটলিস্ট দেখে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সানওয়ার হোসেনকে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে তাকেও বেধড়ক মারধর করে ছাত্রলীগের নেতারা। মারধর সহ্য করতে না পেরে তারা উভয়েই মেঝেতে বসে ও শুয়ে পড়ে।

এর কিছুক্ষণ পরে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দীন ও একই বর্ষের আরবী বিভাগের শিক্ষার্থী আফসার উদ্দীনকে ধরে গেস্টরুমে আনা হয়। সেখানে রাত ২টা পর্যন্ত তাদের ওপর বিভিন্ন নির্যাতন করতে থাকে ছাত্রলীগ নেতারা। পরে তাদেরকে প্রক্টরিয়াল টিমের মাধ্যমে শাহবাগ থানায় হস্তান্তর করা হয়।


সর্বশেষ সংবাদ