একটি ওয়েস্টবিন কিনতে ব্যয় দেড় লাখ টাকা!

  © প্রতিকী ছবি

ইউরোপ অথবা জাপান থেকে রাজধানী ঢাকার ময়লা-আবর্জনা ফেলার জন্য ওয়েস্টবিন আনার পরিকল্পনা ও প্রস্তাব করেছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। সে অনুযায়ী, প্রতিটির দাম ধরা হয় এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু এ দামে ৩৬০টি ওয়েস্টবিন আমদানির প্রস্তাব ধোপে টিকেনি পরিকল্পনা কমিশনে।

বিদেশ থেকে আমদানির পরিবর্তে দেশে প্রস্তুতকৃত ওয়েস্টবিন ব্যবহার করতে বলেছে কমিশন। এ ছাড়া প্রতিটি এসটিএস নির্মাণ খরচ ধরা হয়েছে সাত কোটি টাকা। সবমিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশ সফর, প্রশিক্ষণ এবং বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করা বাতিক হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রস্তাবিত ব্যয় পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ১৮টি ওয়ার্ডের জন্য ৩৬০টি ওয়েস্টবিন কেনার জন্য মোট ব্যয় ধরা হয় পাঁচ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ফলে প্রতিটির দাম হচ্ছে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রস্তাবিত দাম অনেক বেশি বলে কমিশন আপত্তি জানিয়েছে।

এসটিএস নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৬ কোটি টাকা। প্রতিটি এসটিএসের আকার হলো ৫০ ফুট গুণ ৩০ ফুট। ফলে প্রতিটির দাম পড়বে সাত কোটি টাকা। এটাও যুক্তিযুক্ত নয় বলে কমিশন মনে করছে।

পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগ বলেছে, ওয়েস্টবিনের জন্য এত টাকা ব্যয় করা যৌক্তিক হবে না। এ বিষয়ে দেশীয় বিভিন্ন কোম্পানি রয়েছে যাদের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ওয়েস্টবিন সংগ্রহ করা সম্ভব। ব্যয়ও কম হবে। তাই দেশেই এসব তৈরি করতে হবে। বিদেশ থেকে আমদানির প্রয়োজন নেই।

প্রকল্প প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, সর্বশেষ জনশুমারি অনুযায়ী ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে মোট জনসংখ্যা ৪৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬২৮ জন।পাঁচটি জোনে মোট ৭৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। নতুন অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের রাস্তার ড্রেন পরিষ্কার করার মতো জনবল করপোরেশনে নেই। বর্জ্য সংগ্রহ করে ল্যান্ডফিলে পরিবহনের জন্যও প্রয়োজনীয় ট্রাক বা যানবাহন নেই।

গাড়ি প্রয়োজনীয় সংখ্যক না থাকায় বর্জ্য অপসারণ সম্ভব হচ্ছে না। সেজন্য নতুন ট্রাক ও আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের জন্য ৬১৯ কোটি ৩৬ লাখ ৫৬ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৮টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়। চার বছরে বাস্তবায়ন করার কথা বলা হয়েছে এটি।

সংস্থাটি জানিয়েছে, বহু বছর ধরে শত শত টন বর্জ্য বিভিন্ন ডোবা-নালা ও রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে। ফলে এলাকার মাটি, পানি ও বাতাস দূষিত হচ্ছে। যত্রতত্র বর্জ্য ফেলার কারণে পানি দূষিত হচ্ছে। এতে মানুষ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৩৬০টি ওয়েস্টবিন আমদানি করার পরিকল্পনা নেয়া হয়। এ ছাড়া ১৮টি ওয়ার্ডে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন বা এসটিএস নির্মাণের কাজ চলমান আছে।

প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পদে এক হাজার ২১৪ জন জনবলের বেতন প্রস্তাব করা হয়েছে ৮৮ কোটি ৭২ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। কিন্তু এ ব্যাপারে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো সুপারিশ ডিপিপিতে দেয়া হয়নি।

সিটি করপোরেশন বলছে, প্রস্তাবিত ওয়েস্টবিনগুলো ফাইবার গ্লাস বা এসএস দিয়ে তৈরি। এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হবে। সেভাবে এ খাতের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাহী প্রকৌশলী আ হ ম আবদুল্লাহ হারুন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিদেশ থেকে বিশেষ করে জাপান অথবা থেকে ইউরোপ থেকে আমদানির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল বিনগুলো। এগুলো স্টিলের তৈরি ও উন্নত মানের। প্রাথমিক পরিকল্পনায় ছিল এটি। তবে পিইসি সভা বিষয়টি অনুমোদন না করে দেশেই তৈরি করতে বলেছে।’

এসটিএসের ব্যাপারে কমিশন বলছে, ৩৬ কোটি টাকা ধরা হয়েছে এসটিএস নির্মাণে। প্রতিটির জন্য খরচ হবে সাত কোটি টাকা যা যুক্তিযুক্ত নয়। স্থানীয় সরকার বিভাগ দর পুনঃযাচাই করে ব্যয়কে যুক্তিযুক্ত হারে কমিয়ে আনবে।


সর্বশেষ সংবাদ