ছাত্রীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যা

  © সংগৃহীত

ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা শেষে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে। শুধু তাই নয় ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যদের দিয়ে অপমৃত্যুর মামলায় বাধ্য করা হয়েছে। অবশেষে ভিসেরা রিপোর্টে ওই ছাত্রীকের ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। এমনকি ধর্ষণের পর তাকে শ্বাসরোধে হত্যার আলামতও মিলেছে।

জানা যায়, গত ১০ সেপ্টেম্বর জেলা শহরের কলেজপাড়ায় ভাড়া বাসা থেকে কলেজছাত্রী শরীফার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শরীফা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট ইউনিয়নে বিদ্যাকুট গ্রামের মো. মজিবুর রহমানের মেয়ে। ওই ঘটনায় পুলিশ শুরু থেকে বলে আসছে, গলায় ফাঁস দিয়ে শরীফা আত্মহত্যা করেছে।

তবে পরিবারের দাবি, তাকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ৩ নভেম্বর দেয়া মেডিকেল প্রতিবেদনে ভিসেরা রিপোর্ট ও ময়নাতদন্তে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে। ঘটনার পর পুলিশ মামলার বাদী শরিফার পিতা মজিবুর রহমানকে দিয়ে আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করিয়েছেন। এমনকি দুটি তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরও পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেফতার না করে উল্টো বাদীকে হয়রানি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

আরও জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওই ছাত্রী শরীফা আক্তারের লাশ উদ্ধারের পর থেকেই মামলা নিতে গড়িমসি শুরু করে পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে হত্যা মামলা নিয়ে থানায় গেলেও পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনার এজহার লিখে তাতে স্বাক্ষর করাতে বাধ্য করে। কিন্তু ভিসেরা রিপোর্টে শরীফাকে ধর্ষণ শেষে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে আলামত পাওয়া গেছে। যদিও ওই ঘটনার প্রায় ৩ মাস হলেও মামলার কোনো অগ্রগতি নেই।

পরিবারের সদস্যরা জানান, জেলার নবীনগর উপজেলার বিদ্যাকুট গ্রামের সোহেল নামের এক বখাটে যুবক ২০১২ সাল থেকেই শরীফাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। তার সঙ্গে শরীফাকে বিয়ে দেয়ার জন্যে বারবার পরিবারকে চাপ দেয়। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় রাস্তাঘাটে সোহেল তাকে মারধরও করে। পরে শরীফা সোহেলের ভয়ে কলেজ পাড়ার ওই বাসায় চলে আসে। সেখানেও সোহেল তাকে এখানে উত্ত্যক্ত করতো। স্নাতকোত্তর শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। তবুও শান্তি মেলেনি। শেষতক তাকে ধর্ষণের পর আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানো হয়েছে। ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরা পুলিশের কোন সহযোগিতা পাচ্ছে না। ধর্ষণ শেষে হত্যার বিষয়টি প্রকাশ করায় পরিবারের সদস্যরা অনেকটা নিরাপত্তাহীনতার মাঝে আছেন।

শরীফার বোন জোনাকী জান্নাত জানান, পুলিশের কাছে গেলে মনে হয় আমরাই আসামি। মামলার বাদী ও নিহত শরীফার পিতা মজিবুর রহমান বলেন, পুলিশের চাপাচাপির কারণেই আত্মহত্যার প্ররোচণার মামলা করি। ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট পেয়ে পুলিশকে জানালেও কর্ণপাত করেননি। আসামিকে না ধরে উল্টো আমাকে হয়রানি করেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহ আলম জানান, ময়না তদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্টে শরীফাকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায়। তাকে যে হত্যা করা হয়েছে সেটি স্পষ্ট।

এই ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, আসামি গ্রেফতার করার জন্য আমরা চেষ্টা করেছি।


সর্বশেষ সংবাদ