ফের প্রতারকের থাবা এটিএম বুথে (ভিডিও)

  © টিডিসি ফটো

আবারও এটিএম বুথে ভয়াবহ জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে। কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে এবার প্রতারক চক্রের থাবা পড়েছে। গত শনিবার ও রবিবার কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামে পূবালী ব্যাংকের তিনটি বুথ থেকে তুলে নিয়েছে ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তিনটি বুথের ফুটেজে দুইজন ব্যক্তির চেহারা দেখা গেছে। তাদের পরিচয় জানার জন্য সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। 

এর আগে চলতি বছরের ১ জুন ইউক্রেনের ৭ নাগরিকের ভয়াবহ এটিএম জালিয়াতির ঘটনার কোন কূলকিনারা না করতে পারলেও মাত্র ৫ মাসের মাথায় আবারও এমন ঘটনার পূণরাবৃত্তির পর চোখ কপালে উঠেছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের।

ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত শনিবার কুমিল্লা সদরের মেইন ব্রাঞ্চের এটিএম বুথ থেকে ৬টা ৫ মিনিট থেকে শুরু হয় প্রতারক চক্রের অপারেশন। চলে ৬টা ১৯ মিনিট পর্যন্ত। কিছু সময় বিরতি দিয়ে পূণরায় ৬ টা ৩৫ মিনিট থেকে ৬ টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত দুই দফায় মোট তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা তুলে নেয় প্রতারক চক্র। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাত্র ১১ সেকেন্ডের মধ্যে অনেকটা চোখের পলকে এটিএম মেশিন খুলে 'ডংগল ডিভাইস' সংযোগ করে কালো-লাশ রংয়ের ফুল হাতা শার্ট এবং কালো ফ্রেমের চশমা পরিহিত ওই প্রতারক যুবক। মেইন সার্ভার থেকে মুহূর্তেই বিচ্ছিন্ন করে দেয় ওই এটিএম বুথকে। ‘এন্টার’ বাটন টিপে শুরু করে টাকা উত্তোলন। প্রতিটি ট্রানজেকশনে ২০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেয়। নিজের নিরাপত্তার স্বার্থে একবার ৩-৪ মিনিটের জন্য বাইরে আসে ওই প্রতারক। পরে আবারও শুরু হয় টাকা উত্তোলন। দুই দফায় মিলিয়ে মোট ২৫ মিনিট চলে তার অপারেশন। 

পরদিন রবিবার চট্টগ্রাম ডবলমুড়িং থানা এলাকার কলেজ রোডের পূবালী ব্যাংকের ব্রাঞ্চের এটিএম বুথে ৬টা ৩৯ থেকে ৬টা ৪৫ পর্যন্ত চলে দুই প্রতারকের টাকা উত্তোলন অভিযান। এবার আগের যুবকের সঙ্গে অংশ নেয় আকাশী রংয়ের শার্ট ও বাদামী রংয়ের প্যান্ট এবং চশমা পরিহিত মধ্য বয়স্ক এক ব্যক্তি। ছয় মিনিটের অপারেশনে ওরা হাতিয়ে নেয় ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা। এরপর মুজিব রোডের ব্রাঞ্চে রাত ৮টা ৪৪ মিনিট থেকে ৯টা ৩ মিনিট পর্যন্ত ১৯ মিনিটের অভিযানে হাতিয়ে নেয়া হয় ৩ লাখ ১০ হাজার টাকা। এখানেও অংশ নেয় দু'জন। 

জানা গেছে, ২০১২ সালের ডিসেম্বরে এটিএম সেবা শুরু করে পূবালী ব্যাংক। কারিগরি সেবা নিশ্চিত করছে টেকনো মিডিয়া লি.। যুক্তরাষ্ট্রের এনসিআর ব্রান্ডের বাংলাদেশি এজেন্ট টেকনো মিডিয়া লি.। মেশিনগুলো ভারতে রি-এসেম্বলড করা। বর্তমানে দেশের প্রায় বিভিন্ন এলাকায় ১৭৩টি এটিএম বুথের মাধ্যমে এটিএম সেবা দিচ্ছে। 

এ ব্যাপারে পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল হালিম চৌধুরী বলেন, “সাড়ে ছয় লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের দুই বুথ থেকে। বাকিটা কুমিল্লার বুথ থেকে।” ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় থানায় আলাদাভাবে অভিযোগ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ কে কে চুরি করছে আমাদের কাছে তার স্পষ্ট ছবি আছে। আমরা তা পুলিশকে দিয়েছি।”

বুধবার পত্রিকায় সেই ছবি প্রকাশ করে ‘এদের ধরিয়ে দিন’ শিরোনামে বিজ্ঞাপনও দেওয়া হবে বলে জানান হালিম। তিনি বলেন, “আশা করছি শিগগিরই অপরাধীদের ধরা সম্ভব হবে এবং টাকা উদ্ধার করা হবে।”

এর আগে চলতি বছরের ১ জুন সন্ধ্যায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলা এলাকার ডাচবাংলা ব্যাংকের একটি বুথ থেকে অভিনব পদ্ধতিতে জালিয়াতি করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় ইউক্রেনের এক নাগরিককে আটক করে পুলিশ। পরে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওইদিন রাতেই পান্থপথের হোটেল ওলিও ড্রিম হ্যাভেনে অভিযান চালিয়ে ইউক্রেনের আরও পাঁচ নাগরিককে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো ভ্যালেনটাইন (পাসপোর্ট নম্বর ইওয়াই ০৫১৫৬২), ওলেগ (পাসপোর্ট নম্বর ইএক্স ০৮৯৯৬৩), ডেনিস (পাসপোর্ট নম্বর এফএল ০১৯৮৩৪), নাজেরি (পাসপোর্ট নম্বর এফটি ৫০০৫০১), সারগি (পাসপোর্ট নম্বর এফএইচ ৪২৪৩৯৪) ও ভোলোবিহাইন (পাসপোর্ট এফটি ৩৭৯৯৮৩)। অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে ভিতালি (পাসপোর্ট নম্বর এফই ৮০৪৪৪৮) নামে এক ইউক্রেনিয়ান পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ডাচ-বাংলা ব্যাংকের পক্ষ থেকে একটি জালিয়াতির মামলা ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর পক্ষ থেকে একটি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে একটি মামলা করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্রে জানা গেছে, ১ জুনের ঘটনায় পালিয়ে যাওয়া ইউক্রেনের নাগরিক ভিতালিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আরিফুর রহমান জানান, কেবল ভিতালিকেই গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে জালিয়াত চক্রের কাছ থেকে উদ্ধার করা এটিএম কার্ডের আদলে তৈরি কার্ডগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে জালিয়াতির কৌশলও জানার চেষ্টা চলছে। 


সর্বশেষ সংবাদ