ধর্ষণের আসামিদের বাঁচাতে কলেজ ছাত্রীকে দেহ ব্যবসার অপবাদ

টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার ধুবড়িয়া গ্রামে ধর্ষণ মামলার আসামীদের বাঁচাতে নির্যাতিতা কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে দেহ ব্যবসার অপবাদ দিয়ে প্রতিবেদন দাখিলের অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যানের ওই প্রতিবেদনে কলেজছাত্রীর নিরীহ কৃষক বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দেয়া হয়েছে।

চলতি মাসের ৫ তারিখে ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান তার পরিষদের প্যাডে এমন  প্রতিবেদন দাখিলের পর ওই  কলেজছাত্রী বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। তার পড়াশুনাও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন ধর্ষণের বিচার হবে কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন তার পরিবার।

জানা যায়, সারুটিয়াগাজি গ্রামের জয়ধর শেখের ছেলে জুয়েল রানা ওই কলেজছাত্রীকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত । বিয়ের প্রস্তাবও দেয় জুয়েল। কিন্তু মেয়ের বাবা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে জুয়েল রানা গত বছরের ১২ জুলাই ওই ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে।

পরে গ্রামের মাতব্বরদের ধর্ষণের বিষয়টি জানালে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য প্রভাবশালী মাতব্বররা বিভিন্ন সময়ে টালবাহানা করেন। ফলে ঐ ছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে গত বছর নভেম্বরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঁচ জনকে আসামি করে মামলা করেন।  অন্য আসামিরা হলেন, ধুবড়িয়া গ্রামের হায়েদ আলীর ছেলে মো. শিপন, মো. রিপন, উফাজ ও একই গ্রামের মো. বাবুল মিয়ার ছেলে মো. রিয়াজ মিয়া। সিআইডি তদন্ত রিপোর্ট দাখিলের পর আসামিরা আরো ভয়ংকর হয়ে ওঠে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে কথা বলছেন না। আসামিরা চেয়ারম্যানকে ম্যানেজ করে কলেজছাত্রীকে দেহ ব্যবসায়ী ও বাবাকে মাদক ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে একটি প্রতিবেদন দেয়।

সিআইডি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ মামলার কলেজছাত্রীর বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। জুয়েল ঐ ছাত্রীকে ভালোবাসার প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে জুয়েল রানা এ ঘটনা ঘটায়। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তারা ঐ কৃষকের পরিবারের বিরুদ্ধে মাদক ও দেহ ব্যবসার কোনো অভিযোগ পাননি। কলেজছাত্রীর বাবা জানান, চেয়ারম্যান ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী আমাকে গ্রাম থেকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছি।

এ ব্যাপারে ধুবড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, এলাকার লোকজন বলেছে তাই আমি এ প্রতিবেদন দিয়েছি। 

থানার ওসি আলম চাঁদ জানান, চেয়ারম্যান কলেজছাত্রীর বিরুদ্ধে যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা সঠিক নয়। এ পরিবারের নামে থানায় কোনো অভিযোগ নেই। আসামিরা মেয়ের পরিবারকে হুমকি প্রদান করে আসছে। তারা পলাতক। মেয়েটির পরিবারের নিরাপত্তার প্রতি বিশেষ নজর রাখা হচ্ছে।

এ বিষয়ে পিপি এস আকবর খান বলেন, মাদক ও দেহ ব্যবসায়ী বলে কাউকে আক্রান্ত করার এখতিয়ার কারো নেই। এক্ষেত্রে চেয়ারম্যানের শাস্তি হওয়া উচিত।


সর্বশেষ সংবাদ