একে একে সাবাড় ১০ হাজার আমগাছ, কাঁদছে পুরো গ্রামবাসী

  © সংগৃহীত

নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় রাতের আঁধারে প্রায় ৬৩ বিঘা জমির ১০ হাজার আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। গ্রামের শতাধিক আমচাষি চার বছর ধরে লালন করে বড় করে তুলেছে বাগানগুলোর আম গাছ। হঠাৎ এক কর্মকাণ্ডে পথে বসার উপক্রম হয়েছেন ১২ জন আমচাষী।

১১ বিঘা জমির ওপর চার বছর আগে আমবাগান গড়ে তোলেন গ্রামের মুক্তার হোসেন। তিনি জানান, গত মৌসুমে আমগাছগুলোতে ভালো ফল ধরেছিল। আগামী মৌসুমে পরিপূর্ণভাবে গাছে আম আসতো। তাদের গাছগুলো এভাবে কেটে ফেলার ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

৬৩ বিঘা জমির প্রায় ১০ হাজার আমগাছ থেকে ১২ জন আমচাষী আগামী মৌসুমে প্রায় কোটি টাকার আম বিক্রির স্বপ্ন দেখছিলেন। একই কথা বলেছেন, ক্ষতিগ্রস্ত আমচাষী ফিরোজ হোসেন, সুবল কুমার, আফজাল হোসেন ও হাফিজ উদ্দিন।

এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের জামালপুর গ্রামে চার শতাধিক বিঘা জমির ওপর গড়ে উঠেছে আমবাগান। যতদূর চোখ যায় শুধুই আমের বাগান। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তের দল গ্রামের পশ্চিম-দক্ষিণ পাশে বিশাল মাঠে রোপিত ১২ জন কৃষকের ৬৩ বিঘা জমির আম বাগান কেটে তছনছ করে দিয়েছে। খবর পেয়ে সকালে কৃষকেরা বাগান এলাকায় গিয়ে বিঘার পর বিঘা জমির কাটা গাছের দৃশ্য দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে যান। তাদের আর্তনাদে গ্রামবাসীরাও কেঁদে ফেলেন।

এদিকে গাছ কাটার সংবাদ জানাজানি হলে শত শত উৎসুক জনতা ওই বাগান এলাকায় ভিড় জমায়। কে বা কারা এসব গাছ কেটে ফেলেছে এ বিষয়ে বাগান মালিকদের সাথে কথা হলে কিছুই অনুমান করতে পারছেন না বলে জানান তারা।

জানান, তাদের কারো সাথে বিরোধ নেই, বিবাদও নেই। হঠাৎ করে বিশাল ক্ষতি সাধন হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। রাতের আঁধারে বাগান হতে অসংখ্য আমগাছ কেটে ফেলার ঘটনায় উপজেলার আমচাষীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। উপজেলার শত শত আমচাষীরা জড়িতদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

বুধবার দুপুরে সাপাহার উপজেলা চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কল্যান চৌধুরী ও সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

সাপাহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘কে বা কারা রাতের আঁধারে গাছ কেটে রেখে গেছে তা খুঁজে বের করার জন্য পুলিশ মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছে, জমি সংক্রান্ত বিবাদ বা পারিবারিক কোনো ঘটনা থেকে গাছ কাটার ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘মূলত এখানে দুর্বৃত্তদের টার্গেট ছিল একজন। দুর্বৃত্তদের যাতে সহজে চিহ্নিত করা না যায় সেজন্য তারা ১২ জনের বাগান কেটে রেখে গেছে। এ ব্যাপারে সাপাহার থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে।’

এদিকে দুর্বৃত্তদের এমন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার ঝড় বইছে ফেসবুকে। সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্তদের কৃষকদের দাড়ানোর পাশাপাশি তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে।

মাহমুদুল হাসান নামে একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘মনে আছে সাভারের ঐ নারীর ঘটনার কথা? যেই নারী ১০/১২টা গাছ কাটায় তাকে আপনারা বেশ্যা, নটি থেকে শুরু করে এমন কোন গালি নাই দিতে বাকি রাখেননি। এক রাতের মধ্যে সেই ভিডিও মহা ভাইরাল করে সকালের মধ্যে তার বাসায় পুলিশ পাঠিয়ে ছিলেন। সেই ভিডিও নিয়ে আবার মহা উল্লাস করেছিলেন? একের পর এক ট্রল করেছিলেন? মনে থাকারই কথা।

আমি তখন মহিলার পক্ষে না, তবে আপনাদের কর্মকাণ্ডের বিপক্ষে ছিলাম। বেশ কিছু কড়া পোস্টও দিয়েছিলাম এবং এজন্য আপনারা আমাকেও গালি শুনেয়েছিলেন।

কিন্তু আমি সেদিন কেন বিপক্ষে ছিলাম শুনবেন?

কারণ আমি আপনাদের মাইন্ড রিড করতে পারি ভালো। আমি জানতাম, এই অজায়গায় আপনাদের চেতনা খাড়া হবে ঠিকই, কিন্তু জায়গা মত খাড়া হবে না। আমার কথাই সত্য প্রমানীত। জায়াগা মত চেতেন নাই আপানারা। নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় রাতের অন্ধকারে প্রায় ৬৩ বিঘা জমির ১০ হাজার আমগাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। সকাল থেকে কয়েকটা পোর্টাল নিউজটা দেখছি, কিন্তু কারো ওয়ালে এটা নিয়ে কোন আওয়াজ দেখিনি। নিউজ ভাইরাল করেননি। অপরাধীকে দ্রুত ধরতে পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে বাধ্যও করেননি। কারণ আপ্নাদের কাছে ১০ হাজার গাছের চেয়ে ১০টা গাছ বড়। ধন্যবাদ। আবার আসবেন। আবার আসবেন নতুন কোন ইস্যু নিয়ে। এই ১০০০০ গাছ তো মামুলি ব্যাপার। চুপ থাকাই ভালো।’


সর্বশেষ সংবাদ