টেলিভিশন দেখতে পারেন না আবরারের মা

ঘড়ির কাঁটায় বেলা ১টার দিকে। বেসরকারি একটি চ্যানেলে সংবাদের শুরুতেই যখন বুয়েটের আবরার হত্যার সংবাদ প্রচার হতে থাকে। তখন মা রোকেয়া খাতুন দুহাতে বুকে চাপড়ে কাঁদতে থাকেন। কাছের দুজন স্বজন সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা পাচ্ছিলেন না। দুচোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে রোকেয়া খাতুনের। থেমে থেমে বিলাপ করছিলেন। পাশেই বসে থাকা আবরারের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ স্তব্ধ। এ সময় আবরারের বাবা বরকতউল্লাহ কর্মস্থলে ছিলেন।

আজ বুধবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। দুপুরে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।

আবরারের মা রোকেয়া খাতুন ছেলের নৃশংস হত্যার ঘটনার পর টিভির সামনে যান না। ছেলের নিথর দেহ তুলে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখলে তিনি নিজেকে ঠিক রাখতে পারেন না। তবু আজ বুধবার দুপুরে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই সড়কের বাড়িতে ছেলে হত্যার মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার খবর দেখতে ছোট ছেলেকে নিয়ে টিভির সামনে বসে ছিলেন তিনি। 

মেধাবী সন্তান আবরার হত্যায় ১১ জন খুনি সরাসরি অংশ নেওয়ার বিষয়টি জানার পর মায়ের বুক ফেঁটে যাচ্ছিল। তাঁর আকুতি— ‘আহারে, আমি ভালো ছেলেকে নিজে হাতে বুয়েটে রেখে এসেছিলাম। ওরা এগারজন (হত্যা অংশ নেওয়া আসামি) মিলে বাইড়ে (পিটানো) মারইলো। আমারে বললে, ছেলেকে না পড়িয়ে বাড়িতে নিয়ে আসতাম। জমি চাষ, ব্যবসা করিয়ে ছেলেকে কাছে আগলে রাখতাম। ওরা কেন মাইরলো?’

হত্যার ঘটনায় ২৫ জনের নামে আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়ার বিষয়ে আবরারের মা রোকেয়া খাতুন একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকাকে বলেন, যারা সরাসরি এবং বাইরে থেকে ছেলেকে মেরেছে তাদের প্রত্যেকের শাস্তি ফাঁসি নিশ্চিত করতে হবে।

আবরারের ছোট ভাই আবরার ফায়াজ দ্রুত অভিযোগপত্র দেওয়ায় পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আহবান জানিয়ে সে বলে, ‘যে আসামি পলাতক, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। আর বুয়েট প্রশাসনের গাফিলতির কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ যে মন্তব্য করেছে, সে ব্যাপারে আশা করব, ভবিষ্যতে যাতে বুয়েটে এ রকম ঘটনা না ঘটে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’

এসময় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলার বিচার কার্য সম্পন্ন করার বিষয়ে ফায়াজ বলে, ‘যত দ্রুত সম্ভব বিচার কাজ শেষ করতে হবে এবং শাস্তি যেন দ্রুত কার্যকর হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর কথামতো মামলাটি যেন দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার হয়।’

চার্জশিটভুক্ত আসামি হচ্ছেন যারা : মেহেদী হাসান রাসেল, মুহতাসিম ফুয়াদ, অনিক সরকার, মেহেদী হাসান রবিন, ইফতি মোশররফ সকাল, মনিরুজ্জামান মনির, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অমিত সাহা, মাজেদুল ইসলাম, মো. মুজাহিদুল, মো. তানভীর আহমেদ, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. জিসান, মো. আকাশ, শামীম বিল্লাহ, মো. সাদাত, মো. তানিম, মো. মোর্শেদ, মোয়াজ আবু হুরায়রা, মুনতাসির আল জেমি, মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, ইশতিয়াক আহমেদ মুন্না, এস এম মাহমুদ সেতু প্রমুখ। তাদের মধ্যে মুন্না, অমিত সাহা, মিজান, রাফাত ও সেতুর নাম এজাহারে ছিল না। আসামিদের মধ্যে রাসেল ছিলেন বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক, ফুয়াদ সহসভাপতি, অনিক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, রবিন সাংগঠনিক সম্পাদক, সকাল উপসমাজসেবা সম্পাদক, মনির সাহিত্য সম্পাদক, জিয়ন ক্রীড়া সম্পাদক, রাফিদ উপদপ্তর সম্পাদক, অমিত সাহা উপ-আইনবিষয়ক সম্পাদক এবং তানিম, মুজাহিদুর ও জেমি সদস্য। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, মামলার এজাহারভুক্ত তিন আসামি মো. জিসান, মোর্শেদ ও এহতেশামুল তানিম এখনো পলাতক। এ মামলায় এজাহারভুক্ত আট আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা হলেন—নাজমুস সাদাত, ইফতি মোশাররফ, মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, অনিক সরকার, মুজাহিদুর রহমান, মেহেদি হাসান রবিন, তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর ও মনিরুজ্জামান মনির।

চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে ছাত্রলীগের ২৫ নেতার সম্পৃক্ততা পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাদের সবাইকেই চার্জশিটভুক্ত করা হয়েছে। সাক্ষী হয়েছেন ৩০ জন। এক মাসের মধ্যে এ মামলার তদন্ত শেষ করল ডিবি পুলিশ।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ, আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি ও তদন্তে পাওয়া তথ্যানুযায়ী চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিবিরকর্মী সন্দেহে আবরারকে খুন করা হয়েছে। আসামিরা ওই হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। চার্জশিটে যে ২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে ২১ আসামি কারাগারে রয়েছেন। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৬ জন এবং এজাহারের বাইরে পাঁচজন আসামি রয়েছেন। এজাহারভুক্ত তিন আসামি এখনো পলাতক।

 


সর্বশেষ সংবাদ

×
  • Application Deadline
  • December 17, 2025
  • Admission Test
  • December 19, 2025
APPLY
NOW!
GRADUATE ADMISSION
SPRING 2026!
NORTH SOUTH UNIVERSITY
Center of Excellence