আবরারকে মুখে কাপড় দিয়ে মারে, পানি চাইলেও দেয়নি: সাদাত

নিহত বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ তার রুম থেকে ডেকে আনার নির্দেশ দেন বুয়েটের পাঁচ ছাত্রলীগ নেতা— অনিক, সকাল, মুজাহিদ, রবিন ও মনির। আসামিরা আবরারকে মুখে কাপড় দিয়ে মারে। একপর্যায়ে মৃত্যুযাত্রী আবরার পানি চাইলেও তাকে পানি খেতে দেয়া হয়নি।

বুধবার ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আল মামুন ভূঁইয়ার আদালতে আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এএসএম নাজমুস সাদাত রিমান্ড শুনানিকালে এসব তথ্য দেন। শুনানি শেষে সাদাতের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) জিজ্ঞাসাবাদেও একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন সাদাত।

নাজমুস সাদাত বলেন, আমি আবরারকে ডেকে নিয়ে আসি। কয়েকজন বড়ভাই আমাদের ডেকে আনতে বলেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে সাদাত বলেন, মারধরের এক পর্যায়ে আবরার পানি খেতে চায়। বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটের দিকে এজলাসে বিচারক এলে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। শুরুতেই রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েদ উদ্দিন খান হিরণ আসামির রিমান্ড চেয়ে শুনানি করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীসহ কয়েক সাংবাদিক আসামির সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন: জাফলং ভ্যালি বোর্ডিং স্কুল: প্রকৃতির সান্নিধ্যে পড়াশোনা

শুনানিতে তিনি বলেন, এ মামলায় ছয় আসামি আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। ওই ছয় জনই এ আসামির নাম বলেছে। আসামিরা আবরারকে মুখে কাপড় দিয়ে মেরেছে। পানি পর্যন্ত খেতে দেয়নি। সঠিক সময়ে ডাক্তারও দেখায়নি। এমনকি পুলিশও ঢুকতে দেয়নি আসামিরা। মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আসমির সর্বোচ্চ রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।

আদালতে আসামিপক্ষের কোনো আইনজীবী না থাকায় বিচারক সাদাতের কাছে তার কিছু বলার আছে কিনা তা জানতে চান। জবাবে সাদাত আদালতকে বলেন, আমি আবরারকে মারিনি। স্যার, আমি বড় ভাইদের কথায় আবরারকে তার রুম থেকে ডেকে আনি। পরে বড় ভাই অনিক, সকাল, মুজাহিদ, রবিন ও মনির রুমের মধ্যে আবরারকে দফায় দফায় মারে। এক সময় স্ট্যাম্প দিয়ে আবরারকে প্রচণ্ড পেটাতে থাকে অনিক। তখন রুমে উপস্থিত অন্যরা ভয় পেয়ে যায়। এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে আবরারকে পেটায় অনিক। তার মারের পরই আবরারের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। বমি করে। আমি আবরারকে মারিনি। আমি রাত সাড়ে ১২টার দিকে রুম থেকে চলে আসি। এরপর কী হয়েছে তা আমি জানি না। 

এ পর্যায়ে বিচারক আসামির কাছে জানতে চান, ‘বড়ভাই’ কারা? জবাবে সাদাত বলেন, অনিক, সকাল, মুজাহিদ, রবিন ও মনির। ওরাই আবরারকে মেরেছে। আমি রাত সাড়ে ১২টার দিকে সেখান থেকে চলে আসি। এরপর কী হয়েছে তা আমি জানি না।

আবরারকে যখন তার রুম থেকে ডেকে ২০১১ নম্বর কক্ষে নেয়া হয় তখন আমার সঙ্গে ছাত্রলীগের আরও কয়েকজন ছিল। আমাদের নির্যাতনের কারণেই আবরারের মৃত্যু হয়।

আসামিকে আদালতে হাজির করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান এ আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, গত ৬ অক্টোবর রাত ৮টার দিকে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারকে শেরে বাংলা হলের তার রুম (নম্বর ১০১১) থেকে হত্যার উদ্দেশ্যে ডেকে নিয়ে যায়। ৭ অক্টোবর রাত আড়াইটা পর্যন্ত ওই হলের ২০১১ ও ২০০৫ নম্বর রুমে আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে ক্রিকেট স্টাম্প ও লাঠিসোটা এবং রশি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নির্মম নির্যাতন চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই আবরার মারা যায়।

পরে আসামিরা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলার সিঁড়িতে আবরারের মৃতদেহ ফেলে রাখে। কিছু ছাত্র আবরারকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তদন্তকালে সাক্ষ্য-প্রমাণে, ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণে আসামি নাজমুস সাদাতের প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

ইতিপূর্বে আদালতে দোষ স্বীকারোক্তি দেয়া আসামিদের মধ্যে বেশ কয়েকজন আসামি নাজমুস সাদাতের নাম প্রকাশ করেছে। মামলাটি একটি চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা। এজন্য আসামিদের ব্যাপক ও নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা একান্ত জরুরি। মামলার মূল রহস্য উদ্ঘাটন, এজাহারভুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতার ও অজ্ঞাতনামা আসামিদের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করে তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে আসামিকে রিমান্ডে নেয়া প্রয়োজন।


সর্বশেষ সংবাদ