প্রধানমন্ত্রীকে জড়িয়ে অঝোরে কাঁদলেন আবরারের মা

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের হত্যায় জড়িতদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গণভবনে যান আবরার বাবা-মা এবং তার ছোটভাই। সেখানে তাদেরকে এই আশ্বাস দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দোষী যে দলেরই হোক না কেন তাদের ছাড় দেয়া হবে না।

গণভবনে আবরার ফাহাদের মা রোকেয়া খাতুনের সঙ্গে সাক্ষাতের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে সিসিটিভি ফুটেজ দেখে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আমি দেখতে চাইনি কে কার লোক। অপরাধী কে বা কোন দল করে সেটা বিবেচনা করিনি।’

তিনি বলেন, অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী আবরারের পরিবারের সদস্যদের জানান, হত্যার বিচার দ্রুত শেষ করতে ইতিমধ্যে আইনমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ সময় রোকেয়া খাতুন প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, আপনি মায়ের আসনে থেকে ঘটনার পর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে যে কঠোর ভূমিকা নিয়েছেন সেজন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা আমার নেই। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ওই সময় কিছু শিক্ষার্থী ভিডিও ফুটেজ আটকানোর চেষ্টা করেছে। সেটা তারা কেন করেছে তা এখনও আমার বোধগম্য নয়। তা না হলে হয়তো সব অপরাধী আরও আগেই গ্রেফতার হতো।’

তিনি আবরারের মায়ের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনাকে সান্ত্বনা জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। শুধু বলবো আমাকে দেখেন। স্বজন হারানোর বেদনা আমি বুঝি। আমিও এক রাতে সব হারিয়েছিলাম। আমি তখন বিচারও পাইনি।’

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ ও কুষ্টিয়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান।

গণভবন সূত্র জানায়, বিকাল পাঁচটার কিছু আগে আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ, মা রোকেয়া বেগম এবং ছোট ভাই আবরার ফাইয়াজ গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। এ সময়, তাদের সান্ত্বনা দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, অপরাধীর রাজনৈতিক পরিচয় যাই হোক না কেন, সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। আইনমন্ত্রীকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেছেন, বুয়েটের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষে নভেম্বরের শুরুর দিকে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হতে পারে। আজ সোমবার ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মনিরুল এ কথা বলেন।

মনিরুল বলেন, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে এসেছে যে, তাঁরা শিবির সন্দেহে আবরারকে ডেকে নিয়ে মারপিট করছিলেন। একপর্যায়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, আবরারকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারপিট করা হয়েছে, নাকি মারপিটের জন্য মারপিট করা হয়েছে, সে ব্যাপারে তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ শেষে জানা যাবে।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, কারও কারও জবানবন্দিতে এসেছে, কয়েক ঘণ্টা ধরে মারধর করা হয়েছে।

আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৫ জন রয়েছেন। পুলিশের তদন্তে নাম আসায় বাকি চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত ৫ অক্টোবর বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে সাতটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এসব চুক্তি নিয়ে ফেসবুকে মন্তব্য করেন বুয়েটের তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার। এরপর গত রবিবার রাতে আবরারকে শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে নিয়ে বেধড়ক পেটান বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তাকে ক্রিকেটের স্ট্যাম্প ও লাঠিসোটা দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় প্রচণ্ড মারধর করা হয়। নির্মম পিটুনিতে আবরার মারা যান।


সর্বশেষ সংবাদ