বাসের কেনা জুস কেড়ে নিল কলেজ ছাত্রী সুস্মিতার জীবন

সুস্মিতা হোম চৌধুরী
সুস্মিতা হোম চৌধুরী  © টিডিসি ফটো

বাসে হকারের কাছ থেকে কেনা জুস পান করে ‘প্রথম শ্রেণি থেকে মাস্টার্সেও প্রথম হওয়া এক অধম্য মেধাবী ছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। ১৩দিন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। জানা গেছে, জুসের তরল পানীয়ের সঙ্গে মেশানো চেতনানাশক এক প্রকার ওষুধের কারণে তার এমন মৃত্যু হয়েছে।

নিহত ওই ছাত্রীর নাম সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি)। সে মুমিনুন্নেসা সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। তিনি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের ডৌহাখলা ইউনিয়নের ডৌহাখলা গ্রামের কাঞ্চন কুমার হোম চৌধূরীর কন্যা।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, সুস্মিতা হোম চৌধুরী (মন্টি) গত ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বোনের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার পথে ময়মনসিংহ ব্রীজের মোড়ে দুই শিশু হকারের নিকট থেকে একটি কোম্পানির জুস কেনেন। কিন্তু জুসটি তখন না খেয়ে বোতলটি ব্যাগে রেখে দেন পরে খাবেন কিংবা তার ছোট ভাগ্নেকে দেবেন বলে। কিন্তু ঢাকায় গিয়ে জুসের কথা ভুলে যান তিনি। জুসটি ভাগ্নেকে আর খাওয়ানো হলো না।

এরপর গত ১৬ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে ব্যাগের কাপড় সরাতে গিয়ে জুসের বোতলটি চোখে পড়ে। এরপর তিনি মাকে বলেন, আজ রাতে ভাত খাব না, শুধু একটু দুধ আর এই জুস খেয়ে নেব। তার মা আর জোর না করলে জুস খেয়েই ঘুমাতে যান তিনি। পরদিন সকালে আর ঘুম ভাঙেনি সুম্মিতার। যে মেয়েটি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে ওঠে, কিন্তু সেদিন সকাল ১০টায়ও ঘুম না ভাঙায় পরিবারের লোকজন জোর করে তার ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে কোনোরকমে ঘুম ভাঙলেও তিনি আর মাথা তুলে বসতে পারছিলেন না।

এরপর স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হলেও অবস্থার পরিবর্তন না হওয়ায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চারদিন চিকিৎসা শেষে গত ২৩ সেপ্টেম্বর তিনি বাড়িতে চলে আসেন। বাড়িতে আসার পর সেদিন রাত থেকেই আবারো ডায়রিয়া শুরু হয় সুস্মিতার। পরে ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে পুনরায় তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এরপর টানা ৮দিন চিকিৎসার পর সুম্মিতার অবস্থার আরো অবনতি ঘটলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বুধবার বিকেলে ডাক্তর তাকে ঢাকায় রেফার করেন। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সুম্মিতাকে নিয়ে ত্রিশাল থেকে পুনরায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিরে আসেন তারা। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সুস্মিতা আর বেঁচে নেই।

মন্টির বাবা সুবীল হোম চৌধুরী বলেন, ময়মনসিংহ হাসপাতালের ডাক্তারের অবহেলাও মৃত্যু জন্য দায়ী। ২১ সেপ্টেম্বর তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ‘রোগী ভালো’ বলে ২৩ সেপ্টেম্বর হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়। বাড়িতে আসার পর আবারও শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে।

এ বিষয়ে হাসপাতালের তথ্য প্রদানকারী কর্মকর্তা ও ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মো. হিবরুল বারীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি মোবাইল ফোনের লাইন কেটে দেন।


সর্বশেষ সংবাদ