একসঙ্গে দুজনের সংসার করেছে মিন্নি: রিফাতের বাবা

  © টিডিসি ফটো

গতকাল রিফাত হত্যা মামলায় আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে হাইকোর্ট জামিন দেয়ার পর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। তিনি বলেন, মিন্নিকে জামিন দেয়া ঠিক হয়নি। কারণ মিন্নির জন্যই তরতাজা দুটি ছেলে রিফাত ও নয়ন অকালে ঝরে গেল। শুধু তাই নয়, মিন্নি একই সঙ্গে দুটি ছেলেকে বিয়ে করে একই সঙ্গে দুজনের সঙ্গে সংসার করেছে।

রিফাত হত্যাকাণ্ডে মিন্নিকে দায়ী করে তিনি আরও বলেন, মিন্নির ষড়যন্ত্রেই ২৬ জুন নয়ন বন্ড, রিফাত ও রিশান ফরাজীদের হাতে আমার ছেলে রিফাত খুন হয়েছে। তিনি বলেন, মিন্নির কারণেই ২০টি পরিবার মামলায় জড়িয়ে গেছে।

মিন্নিকে জামিন দেয়ায় হাইকোর্টের উপর আস্থা হারাননি দাবি করে দুলাল শরীফ বলেন, আমি আদালতের উপর আস্থা হারাইনি। তবে মিন্নির মতো একজন নারীকে জামিন দেয়া ঠিক হয়নি। ‘মিন্নিকে আদালত জামিন দিয়েছেন। আদালত যা করেছেন তার উপর আমার কোনো মন্তব্য নেই। আদালত একজন নারীকে জামিন দিতেই পারেন’- যোগ করেন দুলাল শরীফ।

রিফাতের মা ডেইজি বেগমও রিফাত হত্যায় মিন্নিকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, ‘এই মিন্নির জন্য আমার ছেলে খুন হইছে। হে আল্লাহ আমার ছেলেকে যারা খুন করল তাদের বিচার করিও।’ এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

২৬ জুন সকালে বরগুনা সরকারি কলেজগেটের সামনে নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী গ্রুপসহ ধারালো চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে রক্তাক্ত জখম করে। এতে দেখা যায়, স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়।

পর দিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এতে প্রধান সাক্ষী করা হয় মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন।

পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেন। এ ঘটনা নতুন মোড় নেয়। ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে পুলিশ দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করে।

এর পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হুমায়ূন কবির ১৭ জুলাই মিন্নিকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে দেন ম্যাজিস্ট্রেট।

মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ১৯ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পুলিশ। মিন্নির আইনজীবী ২১ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জামিনের আবেদন করলে তা নামঞ্জুর হয়।

২৩ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিনের আবেদন করা হলে ওই আবেদন ৩০ জুলাই শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর হয়।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মিন্নিকে দুই শর্তে জামিন দেন। সেগুলো হচ্ছে- ১. জামিনে থাকাবস্থায় মিন্নি তার বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরের জিম্মায় থাকবেন; ২. জামিনে থাকাবস্থায় তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। এই দুই শর্তের ব্যত্যয় ঘটলে মিন্নির জামিন বাতিল হবে বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।

মেয়ের জামিন হওয়ায় আদালতে উপস্থিত মোজাম্মেল হোসেন কিশোর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ‘ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, চক্রান্তেরও অবসান হবে।’


সর্বশেষ সংবাদ