রিমান্ডে মিন্নি, পানি চাইলে ইয়াবা মিশিয়ে দেয় পুলিশ

  © ফাইল ফটো

বরগুনায় আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় প্রধান সাক্ষী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে প্রচণ্ডভাবে শারীরিক নির্যাতন করেই আসামি হিসেবে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। পুলিশ লাইনে একটি কক্ষে এএসআই রিতার নেতৃত্বে ৪-৫ জন পুলিশ তাকে শারীরিক নির্যাতন করেছে, মারধর করেছে। গণমাধ্যমের কাছে এমনই অভিযোগ করলেন মিন্নির মাজিনাত জাহান মনি।

মা ও বোনসহ পরিবারের সদস্যরা কারাগারে সাক্ষাৎ করতে গেলে মিন্নি তাদের কাছে এমন অভিযোগ করেন বলে জানান তিনি। এছাড়া মিন্নিকে গ্রেফতার দেখানোর পরে রাতে পানির সঙ্গে ইয়াবা ট্যাবলেট মিশিয়ে তাকে পানি খেতে দেওয়া হয় বলে মেয়ের বরাত দিয়ে সাংবাদিকদের জানান জিনাত জাহান। এবং রিমান্ডে পানি চাইলেও তাকে পানিও পান করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করে মিন্নি।

মেয়ের মুখ থেকে শোনা নির্যাতনের ঘটনা সাংবাদিকদের বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিন্নির মা জিনাত জাহান। এ সময় মিন্নির মা জানান, মিন্নির বাবাকে আত্মীয় স্বজনদের বাড়ি গিয়ে পুলিশ খুঁজছে। নিজেদের নিরাপত্তাহীনতার কথাও সাংবাদিকদের জানান মিন্নির মা।

মিন্নির সঙ্গে সাক্ষাতের পর তার পরিবারের সদস্যরা জেল গেটে সাংবাদিকদের জানান, রবিবার কারাগারে পরিদর্শনে এসে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ মিন্নির খোঁজখবর নেন। পুলিশ কীভাবে নির্যাতন চালিয়েছে, জেলা প্রশাসকের কাছে মিন্নি তা তুলে ধরেছেন।

মিন্নির মা জিনাত জাহান মনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার মেয়ে আমাকে বলেছে, ১৬ জুলাই পুলিশ মিন্নিকে বাড়ি থেকে নিয়ে এসে ১২-১৩ ঘণ্টা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।

পরিবারের সদস্যদের কাছে এএসআই রিতার নেতৃত্বে নির্যাতন চালানোর বর্ণনাও দিয়েছেন নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী মিন্নি। মেয়ের বরাত দিয়ে তার মা জানায়, একটি সাদা কাগজে লিখিত বক্তব্য দিয়ে তাকে মুখস্থ করতে পুলিশ বার বার চাপ দিয়েছে। যতক্ষণ মুখস্থ বলতে না পেরেছে ততক্ষণ পর্যন্ত রিতা ও তার সহযোগীরা তাকে নির্যাতন করে। পুলিশ মিন্নিকে ভয় দেখিয়ে বলে লিখিত বক্তব্য আদালতে না বললে তার বাবা-মা ও চাচাদের ধরে আনা হবে।

পড়ুন: স্বামী বিদেশে, ডেঙ্গুর কথা জানাতে নিষেধ করেছিলেন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী

প্রসঙ্গত, বরগুনায় গত ২৬ জুন রিফাতকে প্রকাশ্য সড়কে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে যে মামলাটি করেন, তাতে মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল।

সম্প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকান্ডে পত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়। শ্বশুর অভিযোগ তোলার পর মিন্নি তা অস্বীকার করে বলেছিলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায় পড়ে তাকে জড়িয়ে বানোয়াট কথা বলা হচ্ছে।

এরপর গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের কথা বলে। দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর রাতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করলেও, নির্যাতন করে সেই জবানবন্দি দিতে পুলিশ বাধ্য করেছে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহার চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন মিন্নি।

পড়ুন: ধর্ষণের পর চিকিৎসারও দায়িত্ব পেলেন সেই ওসি


সর্বশেষ সংবাদ