তুবার কান্না থামাতেই যত চেষ্টা ভাই মাহিরের

  © সংগৃহীত

রাজধানীতে  নিষ্ঠুর গণপিটুনিতে নিহত তাসলিমা বেগম রেনুর চার বছরের মেয়ে তাসনিম তুবা। মায়ের মৃত্যুর বিষয়টি এখনও তার কাছে অনেকটা অজানা। সেজন্য মায়ের কথা মনে পড়লেই মোবাইল ফোনে কথা বলার আবদার তার।

তুবা জানে, তার মা স্বল্প সময়ের জন্য নিচে গেছে, শিগগিরই চলে আসবে। কিন্তু তার জানা নেই তার মা আর কখনো ফিরে আসবে না। আর তাই তার মাকে খুঁজে ফিরছে সে। মাঝেমধ্যেই এখনও কেন আসছে না- এমন প্রশ্নও বারবার ছুড়ে দিচ্ছে ফুটফুটে তুবা। কখনও কান্না শুরু করলে থামছেই না। আর তার কান্না থামাতে মায়ের মৃত্যুর শোক ভুলে যত চেষ্টা এখন ছোট ভাই মাহিরের।

মায়ের কথা ভুলিয়ে রাখতে অন্যদের পাশাপাশি তুবার ভাই ১১ বছরের তাহসিন আল মাহিরও চেষ্টা করছে। তাদের মহাখালীর বাসায় গিয়ে এটাই এখন নিয়মিত দৃশ্য।

মহাখালী ওয়্যারলেস গেটের ‘জ’ ব্লকে একটি ভবনের তৃতীয় তলায় মা ও বড় বোনের সঙ্গে থাকতেন রেনু। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, তুবা একটি খেলনা গাড়ি নিয়ে খেলছে। পাশের খাটে বসে আছে মাহির। বোনের খেলা দেখছে সে। বেশ হাসিখুশি তুবা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই খেলনা গাড়িটির চাকায় ত্রুটি দেখা দেওয়ায় চলা বন্ধ হয়ে যায়। এতে মন খারাপ তুবার। বোনের এ অবস্থা দেখে মাহির দ্রুত খাট থেকে নেমে গাড়িটি হাতে নেয়। চাকা ঠিক করে আবার ঘরের মেঝেতে গাড়িটি চালিয়ে দেখায় বোনকে।

তুবার খালা নাজমুন নাহার জানান, ‘তুবা এখনও বোঝে না- তার মা মারা গেছে। ঘটনার দিন তুবাকে রেনু বলে গিয়েছিল, সে নিচে যাচ্ছে; চলে আসবে। তাই তুবা এখনও সেটিই জানে। কেন তার মা আসছে না? এমন কথা বলতে চাচ্ছে। মোবাইল ফোন নিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে চায়। এছাড়া রাতে বেশি কান্নাকাটি করে।

তিনি জানান, তখন বোঝানো মুশকিল হয়ে যায় তখন তাকে। এসময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রেনু আমার ছোট। ঘটনার আগের দিন সাভারে আমার ভাসুরের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল ওর। যদি সেদিন আমার সঙ্গে অনুষ্ঠানে যেত, তাহলে হয়তো এ ঘটনা ঘটত না।

তুবার ভাই মাহির বলে, ‘তুবা আমার একমাত্র বোন। আমার মাকে ওরা বিনাদোষে মেরে ফেলেছে। তুবা জানে না। খুব কষ্ট হচ্ছে। সারাজীবন এই কষ্ট থাকবে।’

এদিকে রেনু হত্যায় বৃহস্পতিবার আরও পাঁচজনকে তিন দিনের রিমান্ড নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- সোহেল রানা, মুরাদ মিয়া, আসাদুল ইসলাম, বিল্লাল ও রাজু। বুধবার তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পাঁচজনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।’ এর আগে আরও ছয় জনকে রিমান্ডে নেয় পুলিশ।


সর্বশেষ সংবাদ