ছেলেধরা গুজবে স্কুলে যাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা

পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এমন গুজব ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে। ছেলেধরা এই গুজবে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে। নওগাঁয় ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে ভয় পাচ্ছেন অভিভাবকরা।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে শিশুদের মাথা লাগছে এমন গুজব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এতে করে শিশুদের সাবধানে রাখার জন্য পরামর্শমূলক বার্তাও ম্যাসেঞ্জারে পাঠানো হয়। ফলে গুজবটি দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে সেই গুজব এখন ভয়াবহ আতঙ্কে রূপ নিয়েছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী বাবা-মায়েরা বেশি আতঙ্কে আছেন। সেই সঙ্গে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে ভয় পাচ্ছে। অনেকের বাবা-মা সন্তানদের স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে।

গত শনিবার চাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায় শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১০৪ জন। কিন্তু গত এক সপ্তাহে ছেলে ধরা গুজবে উপস্থিতি ৭০ শতাংশ কমে গেছে। এছাড়া সদর উপজেলার কীত্তিপুর-১ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১১০জন হলেও উপস্থিত ছিল ৮০ জন। সাপাহার উপজেলার আইহাই ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকায় মুংলইল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জন। গত কয়েক দিনে ছেলে ধরা গুজবে এ বিদ্যালয়ে এখন উপস্থিতির সংখ্যা গড়ে ৫০ জন বলে জানাগেছে।

বদলগাছী উপজেলার চাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শামিম জানায়, পাড়ার লোকজন বাড়িতে গিয়ে গলাকাটার ভয় দেখিয়েছে। এজন্য বাবা-মা গত তিন দিন স্কুলে আসতে দেয়নি। আমারও ভয় পাচ্ছিল। যদি স্কুলে আসার পথে মাইক্রোতে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। পরে শিক্ষকরা বুঝানোর পর স্কুলে আসা শুরু করি।

চাংলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার বলেন, টেলিভিশন ও পত্রিকায় খবর দেখছি বিভিন্ন জায়গায় ছেলেধরা গুজব। এতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসতে ভয় পাচ্ছিল। আমরা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের বুঝিয়েছি ছেলেধরা একটা গুজব ও আতঙ্ক। যা মিথ্যা ও অপপ্রচার। এরপর শিক্ষার্থীরা স্কুলে আসছে।

সাপাহার উপজেলার মুংলইল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল ওয়াহাব বলেন, আমাদের গ্রামটি সীমান্তবর্তী। গত কয়েক দিন থেকে ব্যাপক আকার ধারণ করেছে ছেলেধরা গুজব আতঙ্ক। এতে করে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে ভয় পাচ্ছে। ফলে কমেছে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি।

নওগাঁ শহরের চকপ্রসাদ মহল্লার ব্যবসায়ী ইয়াছিন আলী বলেন, এ গুজব আজ থেকে না। এটা চলে আসছে ১৯৭৪ সাল থেকেই। ছেলেধরা গুজবে শুধু অভিভাবকরাই না শিশুদের মধ্যেও আতঙ্ক বিরাজ করছে। অভিভাবকরা সন্তানদের একা ছেড়ে দিতেও ভয় পাচ্ছেন। নারী ও শিশু পাচার বন্ধসহ যেসব গুজব সাময়িকভাবে উঠেছে সেগুলো স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।

নওগাঁ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ইতোমধ্যে শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গুজবে কান দেয়া ঠিক না। এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। যেহেতু উপবৃত্তির ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রয়োজন। গত কয়েক দিন থেকে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম। সেক্ষেত্রে উপবৃত্তির কোনো সমস্যা হবেনা বলে মনে করেন তিনি।

এ ব্যাপারে নওগাঁ জেলা পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এটা একটা গুজব। এ ধরনের গুজবে কাউকে কান না দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মসজিদের মোয়াজ্জিমের মাধ্যমে এ ধরনের অপপ্রচারে রোধে মুসল্লিদের কান না দেয়ার জন্য প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ