১২০০ হাঁসের মৃত্যুতে স্বপ্ন ভঙ্গ বেকার পাঁচ বন্ধুর

  © টিডিসি ফটো

নড়াইল শহরের মহিষখোলা এলাকার পাঁচ বন্ধু মোস্তফা, মঞ্জুর, সেন্টু, ইমরান ও মিন্টু। সবার বয়স ২২ থেকে ২৮ বছর। এদের মধ্যে মোস্তফা চার বছর ওমান ছিলেন। সেখান থেকে বাড়ি এসে তিনিও বেকার হয়ে পড়েন। বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে এই পাঁচ বন্ধু হাঁসের খামার করার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক খামার শুরুও করেন।

কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত খামারের দুই হাজার হাঁসের বাচ্চার মধ্যে ১২০০ মারা গেছে। আর এ জন্য চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসাকেই দায়ী করছেন তারা। অবশ্য চিকিৎসক জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তা দাবি করছেন, প্রশিক্ষণ ছাড়া ওই যুবকরা খামার করায় এমনটা হয়েছে।

মঞ্জুরুল হক ও শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেন, ‘আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে খামারের নাম দিয়েছি ‘ফ্রেন্ডস ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন’। নড়াইল পৌরসভার মহিষখোলায় বন্ধু মোস্তফার পতিত জমিতে খামারটি গড়ে তুলেছি। আর অর্থের যোগান পেয়েছি পরিবার ও লোন নিয়ে। হাঁসের খামার পুরোপুরি প্রস্তুত হওয়ার পর গত ৬ মে নেত্রকোনা হতে দুই হাজার হাঁসের বাচ্চা আনা হয়।’

তারা বলেন, যথারীতি হাসের বাচ্চার যত্ন ও খাওয়ানোর পর বেশ বড় হয়ে ওঠে। বাচ্চার বয়স ২৬ দিন হওয়ার পর ২/১টি বাচ্চা অসুস্থ হয়ে পড়লে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মারুফ হোসেনের কাছে যাই। তিনি একটি অসুস্থ বাচ্চার পোস্টমর্টেম করে প্রেসক্রিপশন দেন। সেই মোতাবেক ওষুধ খাওয়ানোর পরই খামারজুড়ে মড়ক শুরু হয়। হাঁসগুলো মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে আস্তে আস্তে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে লাগলো। ফের ডাক্তারের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওষুধ পাল্টিয়ে দেন। পরে ওষুধ খাওয়ানোর পর কিছু হাস সুস্থ হতে লাগলো।

হাঁস খামারী ইমরান শেখ ও মিন্টু অভিযোগ করে বলেন, ‘চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসার জন্য খামারের এক হাজার দুইশ’ হাঁস মারা গেছে। এ ঘটনার পর ওই চিকিৎসককে ফোন দিলে আর ফোন রিসিভ করেননি। এমনকি আমাদের খামার হতে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার হলেও তিনি কখনোই আমাদের খামার দেখতে আসেননি।’

তারা বলেন, ‘আমাদের এতো বড় ক্ষতিতে এখন যেন আকাশ ভেঙে মাথার ওপর পড়েছে। আমরা বেকাররা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য খামার গড়ে তুললেও প্রাণিসম্পদ বিভাগের কেউ কোনো খোঁজ-খবর নেয়নি। আমাদের অন্তত পাঁচ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। এই ক্ষতির জন্য জেলা প্রাণিসম্পদক কর্মকর্তাই দায়ি।’

এ ব্যাপারে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মারুফ হোসেন দাবি করেন, ‘নতুন খামার গড়ে তুললেও তাদের প্রশিক্ষণের অভাব থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। আমার কাছে আসার পর একটি হাঁস ময়নাতদন্ত করে ওষুধ দেয়া হয়। পরে মোবাইলের মাধ্যমে ওষুধ পাল্টিয়ে দেই। এরপর ছুটিতে বাড়িতে চলে যাই। বাড়িতে থাকার কারণে ফোন হয়তো ধরা সম্ভব হয়নি। ছুটি শেষে কর্মস্থলে ফিরে আসলেও ওই খামারের কেউ আর যোগাযোগ করেনি।’

নড়াইল পৌসভার ৩নং ওয়ার্ডের (মহিষখোলা) কাউন্সিলর কাজী জহিরুল হক বলেন, ‘পাঁচ বেকার যুবক হাঁসের খামারটি করায় আমার পক্ষ থেকে তাদের সহযোগিতা করেছি। মাঝে-মধ্যে গিয়ে খোঁজ-খবর নিয়েছি। কিন্তু হাঁসের মড়ক লাগলে প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসকদের দায়িত্বহীনতার কারণে প্রায় দেড় হাজার হাঁস মারা গেছে। আমি মনে করি এ জন্য চিকিৎসকের শাস্তি হওয়া উচিৎ। কেননা আমাদের জনগণের টাকায় সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন হয়। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মারুফ হোসেন সব সময় এসি রুমে বসে থাকেন। তিনি কাজে-কর্মে আন্তরিক নন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজর দেবে বলে আমি আশা করি।’


সর্বশেষ সংবাদ