সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নিয়ে দু-পক্ষের বিরোধ শেষ হয়নি দুই যুগেও

শিক্ষার্থীসহ নবনির্মিত টিন শেড ঘরের সামনে মানববন্ধনের একাংশ
শিক্ষার্থীসহ নবনির্মিত টিন শেড ঘরের সামনে মানববন্ধনের একাংশ  © টিডিসি ফটো

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার পাইকরাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নিয়ে দীর্ঘ দুই যুগের অধিক সময় ধরে বিরোধ চলছে। একের পর এক মামলা-হামলার পরও সমাধানে পৌছাতে পারেনি এলাকাবাসী। অপরদিকে বিদ্যালয়টি স্থানান্তর করে স্থায়ী ক্যাম্পাসে হস্তান্তরের লক্ষ্যে দক্ষিণ পাড়া গ্রামবাসী সোমবার শিক্ষার্থীসহ নবনির্মিত টিন শেড ঘরের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

এদিকে সোমবার বেলা ১টায় বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ পরিচালক শাহ সুফি মোহাম্মদ আলী রাজা ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সিলেট বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ শাফায়াতুল আলম। তবে বিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে এখনও সঠিক কোন সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। এদিকে উভয় পক্ষের মত বিরোধে শিক্ষার্থীরাও পড়েছে দুশ্চিন্তায়।

১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ বিদ্যালয়টি। পাইকরাজ দক্ষিনপাড়া জামে মসজিদ, পাইকরাজ (বড়) জামে মসজিদ, মাওলানা শফিউল্লাহর বাড়ী ও প্রয়াত আমজাদ আলীর বাড়ীতে বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়টির অস্থায়ী ক্যাম্পাস শেষে বিতর্কিতভাবে ১৯৮৬ সালে পাইকরাজ উত্তর পাড়া সরকারী গোফাঠে বিদ্যালয়টির একাডেমিক টিন শেড ঘর নির্মিত হয়। এই একাডেমিক টিন শেড ঘরটি নিয়ে এলাকাবাসী ভিন্নমত পোষন করেন।

পাইকরাজ দক্ষিন পাড়ার মুক্তিযোদ্ধা ইসাদ আলীসহ অনেকে জানান, প্রয়াত সাবেক ইউপি সদস্য ইস্রাক আলী পাইকরাজ দক্ষিন পাড়া গ্রামের পূর্ব দিকে দুই বিঘা জমি বিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য হস্তান্তর করেন। এছাড়া সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম ইস্রাকের জমির পাশে বিদ্যালয়ের জন্য এক বিঘা জমি দান করেন। বিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য মোট তিন বিঘা জমি পাওয়ার পর সরকারীভাবে একটি একাডেমিক ভবন বিদ্যালয়ে প্রদান করা হয়।

তখন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ঐ জমিতে একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করে। এসময় আকস্মিক বন্যা দেখা দিলে কাজ ব্যাহত হয়। বন্যার পানি কিছুটা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে উত্তর পাড়া গ্রামের একটি গ্রুপ নৌকা দিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সকল মালামাল নিয়ে উত্তর পাড়ায় টিন শেড ঘর তৈরি করেন।

এ বিষয়ে ১৯৮৬ সালেই দক্ষিন পাড়ার প্রয়াত সাবেক মেম্বার ইস্রাক আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের মখলিছ উদ্দিনকে বিবাদী করে একটি মামলা দায়ের করেন। ২০০৫ সালে তোয়াকুল ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়াম্যান মোঃ উমর আলী উদ্যোগ নিয়ে তৎকালীন সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের হস্তক্ষেপে পাইকরাজ গ্রামবাসীর মধ্যে সমঝোতা হয়।

পাইকরাজ দক্ষিন পাড়া ও উত্তর পাড়া গ্রামের সকলের সম্মতিতে মধ্যবর্তী স্থানে বিদ্যালয়টির স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও শেষ পর্যন্ত ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। অবশেষে সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক ঘেষেঁ পুর্বপাশে পাইকরাজ দক্ষিন পাড়ায় উজ্জল কুমার দে, অনন্ত কুমার দে ও মনিদ্র কুমার দে ৩৩ শতক জমি পাইকরাজ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে দান করেন। ঐ স্থানে গ্রামবাসী শতাধিক লম্বা একটি টিন শেড ঘর নির্মাণ করেন এবং একই সাথে যুগ উপযোগী খেলার মাঠ তৈরি করেন।

বিষয়টি বিভিন্ন আদালত পেরিয়ে হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ২০১৬ সালে বিদ্যালয়টি স্থায়ী ক্যাম্পাসে স্থানান্তর বিষয়ে হাইকোর্টে দক্ষিন পাড়া অধিবাসীরা আবেদন করের। এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে স্থায়ী ক্যাম্পাসে বিদ্যালয়টি হস্তান্তরের জন্য সুপ্রিমকোর্ট আদেশ প্রদান করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়টি সরকারী গোফাটে রয়েছে বলে দক্ষিনপাড়া গ্রামবাসী দাবি করেন।

এ বিষয়ে পাইকরাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন বলেন, বর্তমানে এ বিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাসটি এক একর নিজস্ব জমিতে রয়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ