যেকোনো মুহূর্তে ওসি মোয়াজ্জেম গ্রেফতার: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

  © সংগৃহীত

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন দেশেই আছেন বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি বলেছেন, তার দেশত্যাগের সব পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে তিনি গ্রেফতার হবেন। 

আজ বুধবার রাজধানীর বকশীবাজারে কারা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ‘কারা অধিদফতরের উদ্ভাবনী মেলা ও শোকেসিং-২০১৯’ অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে ধরা যাচ্ছে না, বিষয়টি ঠিক নয়। তবে যেকোনো সময় তাকে গ্রেফতার করা হবে। এসময় দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে ডিআইজি মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, মিজান ঘুষ কেন দিয়েছেন, নিশ্চয়ই তার কোনো দুর্বলতা আছে। সেই দুর্বলতা ঢাকতেই তিনি ঘুষ দিয়েছেন। না হয় ঘুষ দেবেন কেন? ঘুষ দেয়া-নেয়া দুটোই অপরাধ। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে এর আগের বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার এখনও প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে আবার ঘুষ কেলেঙ্কারি। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সাইয়েদুল হক। তিনি বলেছেন, মামলাটির সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে পুলিশ মহাপরিদর্শক নিজেই ব্যবস্থা নিতে পারতেন। এখন যেহেতু পরোয়ানা ফেনী ও রংপুর দুই জায়গাতেই পৌঁছেছে বলে পুলিশ স্বীকার করেছে, দেখা যাক তারা এখন কী করে।

গত ২৭ মার্চ রাফিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদদৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছিলেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই ‘মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এও বলেন, ‘এমন কিছু হয়নি যে এখনও তোমাকে কাঁদতে হবে।’

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।

সঙ্গত, গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। বোরকা পরিহিত কয়েকজন কৌশলে তাকে ছাদে ডেকে নিয়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।

এ ঘটনায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলা, পৌর কাউন্সিলর মাকসুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন রাফির বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ রাফি।

এর আগে ২৭ মার্চ রাফিকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরদিন তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এ পর্যন্ত রাফি হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার ২২ জনের মধ্যে সিরাজ উদ্দৌলাসহ ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।


সর্বশেষ সংবাদ