করোনায় দ্বিগুণ হচ্ছে উচ্চশিক্ষিত বেকার, সুখবর নেই চাকরিপ্রার্থীদের

  © ফাইল ফটো

করোনাভাইরাসের কারণে কয়েকমাস ধরে স্থগিত বিসিএসসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা। গত ফেব্রুয়ারি-মার্চ থেকে নতুন তেমন চাকরির বিজ্ঞপ্তিও নেই। এ অবস্থা শেষ হবে কবে, জানা নেই কারোর। সামনে কর্মসংস্থানের সুযোগ আরও কমবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। ফলে হতাশায় ভোগা চাকরিপ্রার্থীদের দুর্দশা শিগগিরই লাঘব হচ্ছে না।

জানা গেছে, করোনার কারণে গত চার মাসে সরকারি ও বেসরকারি শতাধিক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। ব্যান্সডক, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, তুলা উন্নয়ন বোর্ড, খাদ্য অধিদপ্তরসহ দুদকের বিভিন্ন পদের পরীক্ষা আটকে আছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হলেও তা স্থগিত হয়ে গেছে। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়োগও বন্ধ।

১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা স্থগিত করেছে এনটিআরসিএ। এতে ১১ লাখ ৭২ হাজার প্রার্থী আবেদন করেছিলেন। সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুটি বিসিএস এবং ১০টি নন-ক্যাডারসহ ১২টি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। এসব পরীক্ষা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আয়োজনের সুযোগ নেই।

পিএসসি চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেছেন, ‘স্কুল-কলেজগুলোয় এসব চাকরির পরীক্ষা নিতে হয়। কিন্তু বর্তমানে পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে করোনার মধ্যেও কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। যেসব ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব তা প্রকাশ করে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে বাংলাদেশে চাকরির বাজারে ধস নেমেছে, বিজ্ঞাপন ব্যাপকভাবে কমেছে। গত বছরের মার্চের তুলনায় চলতি বছরের মার্চে বিজ্ঞাপন ৩৫ শতাংশ কম ছিল। আর এপ্রিলে কমেছে ৮৭ শতাংশ। এ মাসে পোশাক ও শিক্ষা খাতে চাকরির বিজ্ঞাপন ৯৫ শতাংশ কম দেখা গেছে।

আর উৎপাদনমুখী শিল্পে ৯২ শতাংশ কম বিজ্ঞাপন এসেছে। স্বাস্থ্য খাতে কমেছে ৮১ শতাংশ। এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি খাতকে সম্ভাবনাময় ধরা হলেও চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে ৮২ শতাংশ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায়ও বিজ্ঞাপন কমেছে ৬৪ শতাংশ।

ইউজিসির তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে দেশের ৪০টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণের সংখ্যা সাত লাখ। আর ১০৩ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণের সংখ্যা ৬৮ হাজার। সেই হিসাবে বছরে চাকরিতে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ প্রার্থী। চলতি বছর তারা চাকরিতে ঢুকতে না পারলে বছর শেষে উচ্চশিক্ষিত বেকার দ্বিগুণ হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও দেশের চাকরির বাজার আগের অবস্থায় ফিরবে না। কারণ করোনাভাইরাস অল্প লোক দিয়ে বেশি কাজ করা শিখিয়েছে। এছাড়া প্রযুক্তির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। ফলে যাঁরা তথ্য-প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন কাজে দক্ষ, তাঁদের চাকরি পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না।

বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী এ কে এম ফাহিম মাশরুর জানান, বিডিজবসে এপ্রিলে প্রায় ৮০ শতাংশ, মে’তে ৭০ শতাংশ এবং জুনে ৫০ শতাংশ চাকরির বিজ্ঞাপন কমেছে। চলতি বছরটা বেশি ভালো যাবে না বলে মনে হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠানই নিয়োগ দিচ্ছে না; উল্টো জনবল কমাচ্ছে। ফলে চাকরিপ্রার্থীদের সুযোগ কমে আসছে।

তিনি বলেন, ‘করোনা-পরবর্তী সময়ে ই-কমার্স, ফুড প্রডাকশন, লজিস্টিক, অ্যাগ্রিকালচারের মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ বাড়বে। উচ্চশিক্ষিতরাই বেশি সমস্যার সৃষ্টি করছেন। সবাই এসি রুমে চাকরি করতে চান। ব্যাংক বা সরকারি চাকরিতে আগ্রহ থাকলেও সেখানে পদ কম। আগামী দিনে চাকরি করতে হলে দক্ষতার সঙ্গে মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। নিজেদের উদ্যোক্তা হিসেবে তৈরি করতে পারলে সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাবে।’

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এরমধ্যে শিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত বেকার ২৩ লাখ ৭৭ হাজার। আর অশিক্ষিত বেকার তিন লাখ। বেকারদের মধ্যে ১০ লাখ ৪৩ হাজার উচ্চ মাধ্যমিক, স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস। উচ্চশিক্ষা শেষ করা বেকারের সংখ্যা চার লাখ পাঁচ হাজার। যদিও বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে মত অনেকের।


সর্বশেষ সংবাদ