করোনাকালে আরও জোরালো ‘৩৫ চাই’ দাবি, আসছে কর্মসূচি

  © ফাইল ফটো

সব ধরনের চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। নানা সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে। তা নিয়ে আশাবাদী হয়ে ওঠেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে গত বছরের মে মাসে জাতীয় সংসদে তাদের এ দাবি নাকচ করে দেওয়ার কথা সাফ জানিয়ে দেয় সরকার। ফলে দীর্ঘদিনের দাবি আলোর মুখ না দেখায় হতাশ হয়ে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা।

এখন করোনা মহামারিকালে আবারও চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, করোনার কারণে সরকারি ও বেসরকারি সব ধরনের চাকরির বিজ্ঞপ্তি বন্ধ হয়ে গেছে। তারা আশঙ্কা করছেন, করোনার কারণে তারা কমপক্ষে দেড় থেকে দুই বছর হারাতে পারেন। এরমধ্যে অনেক চাকরিপ্রার্থীর বয়স শেষ হয়ে যাবে। অথচ তারা দীর্ঘদিন পড়াশোনা করে চাকরির জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছেন।

ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, গত দুই দশকে বেশ কয়েকবার দেশ সঙ্কটের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে সৃষ্ট অনিশ্চয়তার কারণে তারা দু’বছর হারিয়েছেন। পরে আরও কয়েকবার নানা কারণে তাদের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। কিন্তু সে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নেয়নি কোনো সরকারই। এবার করোনার কারণে ফের সেই ক্ষতির মুখে তারা।

এ অবস্থায় সামগ্রিকভাবে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করা হলে সবাই উপকৃত হবেন বলে মনে করছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তাদের মতে, এমনিতেই করোনার কারণে অন্তত দু’বছর হারিয়ে যাচ্ছে। আর আগে থেকেই বয়স বাড়ানোর একটি দাবি রয়েছেই। সবমিলিয়ে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়িয়ে ৩৫ বছর করা হলে সবাই উপকৃত হবেন। সে কারণে আবারও দাবি আদায়ে সরব হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের (বাসাছাপ) কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘চাকরিপ্রার্থীরা আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত। এখন করোনার কারণে আবার বড় ক্ষতির মুখে। ফলে, আমরা মনে করি, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করে দিলে উপকারভোগী হবে সবাই।’

তিনি বলেন, ‘সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা শিগগিরই একটি সাংবাদিক সম্মেলন করবো। আমরা এটি সরকারের দৃষ্টিতে আনতে চাই। এছাড়া সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কর্মসূচিও ঘোষণা করবো। দাবিটি যাতে সংসদে আলোচনা হয়, সেজন্য বিষয়টি বাাজেট অধিবেশনে সংসদে তুলতে একজন সংসদ সদস্যের সঙ্গেও আলোচনা করেছিলাম। তবে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হওয়ায় সে সুযোগ তৈরি হয়নি।’

জানা গেছে, চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিতে ২০১২ সালে আন্দোলন শুরু হয়। এরপর ২০১৯ সালে দাবি মানার মতো পরিস্থিতি তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। তারপরও চাকরিপ্রার্থীরা বিক্ষিপ্তভাবে আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে গেছেন।

সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে ৪ দফা দাবিতে গণঅনশনে বসেন চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলন করা চাকরিপ্রত্যাশীরা। তাদের ৪ দফা দাবি হলো- চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীত করা; চাকরির আবেদন ফি কমিয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা; চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়া ও চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

এরপর করোনা মহামারি শুরু হওয়ায় আর কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেননি চাকরিপ্রত্যাশীরা। তবে করোনার কারণে তারা যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তাতে সরকারের নিকট থেকে এ ব্যাপারে ইতিবাচক ঘোষণার আশা করছেন তারা। সে জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই ফের সক্রিয় হচ্ছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা।

চাকরিপ্রার্থী সোহরাব নাজমুল দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ‘প্রায় তিন বছর ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছি। চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় শুরুও হয়েছে। এখন করোনার কারণে সব শেষ হয়ে গেল, নতুন বিজ্ঞপ্তিও আসছে না। সরকার যদি বয়স না বাড়ায়, তাহলে জীবনে এর চেয়ে বড় ধাক্কা আর কিছু হবে না। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার, জনবান্ধব সরকার। আমরা আশা করি, তারা আমাদের এই আকুল দাবি শুনবেন।

করোনা পরিস্থিতির মধ্যে চাকরির বাজারে এই বিশাল অনিশ্চয়তা তৈরির প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, ‘চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩০ বছর অনুযায়ী নিয়োগ হবে। করোনার কারণে বৃদ্ধি করার এখতিয়ার আমাদের নেই। তা করতে গেলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে।’ তবে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতা আছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

আর জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে যাদের বয়স পার হয়েছে, বিষয়টি বিবেচনা করতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠাবে মন্ত্রণালয়। শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ প্রস্তাব পাঠানো হবে। করোনা সঙ্কটের মধ্যে যারা বয়স হারিয়েছেন তাদের জন্য কী করা যায়, সেই চিন্তা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।


সর্বশেষ সংবাদ