চাকরিতে ৯ম গ্রেডের উপরেও কোটা থাকছে না—মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত

  © ফাইল ফটো

সরকারি চাকরিতে এখন থেকে প্রথম শ্রেণি অর্থাৎ নবম গ্রেড থেকে উপরের সব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে কোনো কোটা থাকবে না। গতবছরের ৪ ফেব্রুয়ারির পরিপত্র অনুযায়ী, নবম গ্রেড (প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগে কোনো কোটা নেই। এর উপরের গ্রেডগুলো অর্থাৎ ১ম থেকে ৮ম গ্রেডের পদগুলোর বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত জানাল সরকার। আজ সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়ে আগের জারি করা পরিপত্র স্পষ্ট করতে মন্ত্রিসভায় প্রস্তাব উপস্থাপন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সংবাদ ব্রিফিংয়ে দেওয়া লিখিত কাগজে বলা হয়, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) নবম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড ছাড়াও অষ্টম গ্রেড বা তার ওপরের গ্রেডের কোনো কোনো পদে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু আগের পরিপত্রে কেবল নবম গ্রেড (প্রথম শ্রেণি) এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেডের (দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বাতিল করা হলেও অষ্টম বা তার ওপরের গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা বণ্টন পদ্ধতি কী হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এ জন্যই পরিপত্রটি সংশোধনের প্রয়োজন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের পর ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সব ধরনের চাকরি থেকে কোটা তুলে দেওয়া হয়। ওই সময় জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, ৯ম গ্রেড অর্থাৎ সাবেক প্রথম শ্রেণি এবং ১০ থেকে নিয়ে ১৩তম গ্রেড অর্থাৎ সাবেক দ্বিতীয় শ্রেণির সব পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ওই সময়ে জারি করা পরিপত্রে যেসব গ্রেড অন্তর্ভুক্ত না করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, পরে তা অন্তর্ভুক্তির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি সরকারের রুলস অব বিজিনেসের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেই ক্ষেত্রে বিষয়টি আজ সোমবার মন্ত্রিসভার অনুমোদন নিয়ে সংশোধন করা হয়েছে।

কোটা বাতিলের বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের স্পষ্টকরণের জন্য বাংলাদেশ সরকারি কর্মকমিশন (পিএসসি) প্রস্তাব পাঠালে সেই প্রস্তাব অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মন্ত্রিসভা বৈঠকে এই প্রস্তাবটি উপস্থাপন করে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয় থেকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি নন ক্যাডার ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হবে নাকি আগের কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে এ বিষয়টি স্পষ্টকরণের জন্য অনুরোধ করা হয়।’

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন ৯ম গ্রেড এবং ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড ছাড়াও ৮ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের কোনো কোনো পদে সরাসরি নিয়োগ দিয়ে থাকে। জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫’ এ শ্রেণির পরিবর্তে গ্রেড উল্লেখ করা হয়েছে এবং আগের ১ম শ্রেণির পদ বলতে ৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেডের পদকে বুঝানো হয়। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে ‘৯ম গ্রেড’ এর স্থলে ‘৯ম ও তদূর্ধ্ব গ্রেড’ উল্লেখ করে পরিপত্রটির সংশোধন প্রয়োজন বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।’

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে ৯ম থেকে যত ওপরের দিকের যাক সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোনো কোটা পদ্ধতি থাকবে না।’

আগের মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে গঠিত কোটা পর্যালোচনা কমিটি ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সুপারিশ জমা দেন। কমিটি ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত নিয়োগের ক্ষেত্রে সবধরনের কোটা উঠিয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। সেই প্রস্তাবটিই অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা।

কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ২ জুলাই কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে সরকার। এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন।

এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের যুগ্মসচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সরকারি চাকরিতে সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি থেকে সব ধরনের কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্রে একটু ভুল আছে। ওই সময় কম সময় নিয়ে কাজ করায় এ ত্রুটি হয়েছে।

বাতিল করা পরিপত্রে নন ক্যাডার প্রধান পরিদর্শক, কম্পিউটার প্রোগ্রামার, সিনিয়র প্রোগ্রামারসহ কারিগরি সেক্টরের কিছু কিছু পদে কর্মরত ৮ম গ্রেডের কর্মরতদের বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। বিষয়টি আমাদের নজরে আসার পর আমরা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করি। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব শিগগিরই মন্ত্রিসভার বৈঠকে উত্থাপন করা হবে।


সর্বশেষ সংবাদ