আমরণ অনশনে অসুস্থ ৩৫ আন্দোলনের নেতা, হাসপাতালে ভর্তি

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৫ আন্দোলনের নেতা মিয়াজী
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৩৫ আন্দোলনের নেতা মিয়াজী  © টিডিসি ফটো

সরকারি চাকরিতে আবেদনের বসয়সীমা ৩৫ বছর করাসহ চার দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা। তাদের এ কর্মসূচীতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আন্দোলনের নেতা ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদের অন্যতম সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী।

রবিবার (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বিষয়টি জানিয়েছেন। সুরাইয়া বলেন, অনশনে থাকায় তিনি না খাওয়া থেকে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। আমরা উনাকে হাসপাতালে নিতে গেলেও প্রথমে রাজি হননি তিনি। পরে আমরা কয়েকজন তাকে জোরপূর্বক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসি।

এছাড়া প্রধান সমন্বয়ক সুরাইয়া ইয়াসমিন এবং রেশমা আক্তারও কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সুরাইয়া বলেন, দিনের পর দিন আল্টিমেটাম, গণঅনশন কিংবা আমরণ অনশনেও নীতিনির্ধারক মহল থেকে আমাদেরকে দেখা হচ্ছে না। আমাদের কথা শুনা হচ্ছে না। রাগ-অভিমান থেকে তিনি আমরণ অনশন কর্মসূচী থেকে মৃত্যুর পথ বেচে নিতে চাচ্ছেন।

এর আগে দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কোন আশ্বাস না পাওয়ায় টানা ১০ দিন গণঅনশন শেষে গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেছে ৩৫ চাই আন্দোলনকারীরা। আমরণ অনশনের ২৩তম দিন চলছে আজ। তারা বলছেন, সরকার ৩৫ চাইদের দাবি না মানায় মৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছি। গত ৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের ব্যানারে কাফন সমাবেশ, গণঅনশন ও আমরণ অনশন চালিয়ে আসছেন ৩৫ প্রত্যাশীরা।

সংগঠনটির অন্যতম সংগঠক রেশমা আক্তার বলেন, আমাদের প্রধান সমন্বয়ক মিয়াজি অসুস্থ হলেও আমরা আমাদের আমরণ অনশন কর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। রাজপথে কর্মসূচীর মাধ্যমে তাদের চাকরি আবেদনের বয়সসীমা ৩৫ করাসহ ৪ দফা দফা দাবি বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান এ সংগঠক।

আমরণ-অনশন

আন্দোলনকারীরা বলেন, সেশনজটে যে ৪ বছর হারিয়েছে কে আমাদের ফিরিয়ে দিবে এই সময়গুলো। আজ বাংলাদেশ মানুষের গড় আয়ু ৫৭ থেকে ৭৩ হয়েছে তবে কেন আবেদনের বয়সসীমা বাড়বে না। বাড়ানো হয়েছে অবসরের বয়সসীমা তবে কেন আবেদনের বয়সসীমা বাড়বে না। বিশ্বের সাথে উন্নয়নের তাল মিলিয়ে চললে তবে কেন আবেদনের বয়সসীমা বাড়বে না।

এর আগে গত শুক্রবার প্রেসক্লাবের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে নিজেদের হাতে সার্টিফিকেট নিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। এসময় ৩৫ প্রত্যাশী সকলের চোখে-মুখে হতাশার ছাপ লক্ষ করা করা গেছে। পাশাপাশি তাদের ‘আমরা সার্টিফিকেট চাই না, চাকরির বয়স ৩৫ করে দিন’ ‘আমাদের মেয়াদ শেষ, আমাদের সুযোগ দিন’ এসব বাক্য বলতে দেখা গেছে।

তাদের ৪ দফা দাবি হলো- চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করে ৩৫ বছরে উন্নীত করা; চাকরির আবেদন ফি কমিয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে নির্ধারণ করা; চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাগুলো জেলা কিংবা বিভাগীয় পর্যায়ে নেওয়া ও চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে সম্পন্ন করা এবং সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা।

আন্দোলনকারী বলছে, বর্তমান সরকারের ইশতিহার অনুযায়ী তাঁরা ক্ষমতায় আসলে চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বৃদ্ধি করবে। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন ‘৩৫’ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা হয়েছে। আলোচনার বিষয়ে তোমাদের দ্রুত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে কোন প্রকার সিদ্ধান্ত না জানিয়ে ৪১ তম বিসিএসের সার্কুলার দিয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। যার কারণে দেশব্যাপী লক্ষাধিক ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী ক্ষুদ্ধ হয়ে পড়েছে।


সর্বশেষ সংবাদ