সরকারি চাকরির পেছনে ছুটতে বেকাররা ব্যয় করেন চার লাখ টাকা!

  © প্রতিকী ছবি

দেশের লাখ লাখ তরুণের শিক্ষাজীবন শেষে শুরু হয় সরকারি চাকরির পেছনে ছোটা। প্রতিনিয়ত এ সংখ্যা বাড়ছে। চাকরির পেছনে ছুটে বছরে শত কোটি টাকা ব্যয় করছেন তারা। অথচ চাকরি পাওয়ার সংখ্যা একেবারেই নগণ্য। এই অবস্থায় বেকারদের আর্থিক চাপ কমাতে নানা পরামর্শ দিয়েছেন শ্রমবাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৬-১৭ বর্ষের খানা জরিপ অনুযায়ী, দেশে বেকারের সংখ্যা ২৬ লাখ ৭৭ হাজার। এদের মধ্যে ৪০ শতাংশ উচ্চশিক্ষিত। সে হিসাবে দেশে বর্তমানে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিক্ষিত বেকার রয়েছে। প্রতি বছর প্রায় পাঁচ লাখ তরুণ শিক্ষা শেষে চাকরি বাজারে আসছে। তারমধ্যে মাত্র ৫০ হাজার তরুণ সরকারি চাকরিতে যোগ দেন।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এদেশের মানুষ অনেক কষ্টে পড়ালেখা করান সন্তানদের। রাষ্ট্রের দায়িত্ব তাদের কাজ দেওয়া। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র সেটি না করে পরিবারের ওপর বেকারত্বের চাপ সৃষ্টি করছে। মেধা তালিকায় স্থান পেয়েও মোটা অঙ্কের উৎকোচ দিয়ে কর্মজীবনে যেতে হচ্ছে। চাকরি পদ্ধতির সংস্কারের পাশাপাশি আবেদন ও পরীক্ষা অনলাইনভিত্তিক করা প্রয়োজন।’

চাকরির পেছনে ছোটা কয়েকজন জানিয়েছেন, বছরে তারা গড়ে ১৫টি করে পরীক্ষা দিয়েছেন। এসব পরীক্ষার আবেদন, প্রিন্ট, অনলাইন বিল, কুরিয়ার বিল, ব্যাংক ড্রাফট, পোশাক, কোচিং খরচ, পরীক্ষা দিতে ঢাকায় আসা-যাওয়াসহ সবমিলিয়ে চার হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় হয়ে যায়।

লিখিত পরীক্ষা ও সাক্ষাৎকারের জন্যও বাড়তি ব্যয় রয়েছে। সে হিসেবে বছরে শিক্ষিত বেকারকে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হচ্ছে। এভাবে চাকরির বয়স ৩০ বছর শেষ হওয়ার আগ পর্যন্তও অনেককে ব্যয় করতে হচ্ছে। সবমিলিয়ে ৬/৭ বছরে জনপ্রতি চার লাখ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, ‘বর্তমান নিয়োগ পদ্ধতির পরিবর্তন করে ন্যূনতম যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকরির অফার দিতে হবে। চাকরি প্রার্থীকে ঢাকায় আনার প্রবণতা কমাতে হবে। এছাড়া অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতিতে টাকা নেওয়ার কোনো পদ্ধতিই রাখা যাবে না।’

সরকারি চাকরি না পেয়ে অনেকে বেসরকারি চাকরি, ব্যবসা, উচ্চতর শিক্ষার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন।চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা যে অর্থ ব্যয় করছেন, যা পরিবারের ওপরও চাপ সৃষ্টি করছে। সর্বশেষ ৪০তম বিসিএসে আবেদন করেন ৪ লাখ ১২ হাজার ৫৩২ জন। প্রতি প্রার্থী ৭০০ টাকা ফি হিসেবে আবেদন থেকে ২৮ কোটি ৮৭ লাখ ৭২ হাজার ৪০০ টাকা পেয়েছে পিএসসি।

জানা গেছে, সরকারি চাকরিতে আবেদনের জন্য ৫০ থেকে ১৫০০ টাকা কিংবা তারও বেশি দিতে হয়।চাকরি পেতে কোচিংও করেন অনেকে। এছাড়া অনলাইন বিল, প্রিন্ট, কুরিয়ার, যাতায়াত বাবদ অন্তত এক হাজার টাকা খরচ হয়। ঢাকার বাইরে যারা থাকেন তাদের খরচ ও বড় ধরনের ঝক্কি পোহাতে হয়।এভাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ খরচ করছেন বেকাররা।

এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতি বছর চাকরিপ্রার্থী বাড়ায় ব্যবস্থাপনা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। বেকারদের খরচ কমাতে ঢাকার বাইরে কেন্দ্র করার কথা ভাবা হচ্ছে। তবে প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঝুঁকি রয়েছে। তবে কীভাবে চাকরিপ্রাপ্তি সহজ করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছে সরকার।’


সর্বশেষ সংবাদ