সরকারি চাকরি পাচ্ছেন সেই তিন্নির ভাই!

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার পথে গত ৩০ অক্টোবর দুপুর দেড়টার শাটল ট্রেনে  হৃদ‌রো‌গ আক্রান্ত হ‌য়ে মারা যান তিন্নি দাশের বাবা মৃণাল দাশ। তিন্নি দাশের বাবার মৃত্যুর ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে তার পরিবারসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে। ইতোমধ্যে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন। শনিবার মুঠোফোনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিন্নি দাশের ভাই সানি দাস।

গত শুক্রবার রাতে সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দিন তিন্নি দাশের মায়ের সঙ্গে কথা বলেন। পাশাপাশি তিন্নি এবং তার ভাই সানি দাশকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকুরির ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন।

সানি দাস আগ্রাবাদ কমার্স কলেজ থেকে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। এবিষয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার রাতে মেয়র সাহেব আমার মায়ের সাথে কথা বলে সান্ত্বনা দিয়েছেন। এসময় আমার যোগ্যতা অনুযায়ী একটি চাকুরির ব্যবস্থা করবেন বলে আমার মাকে আশ্বস্ত করেছেন। মেয়র সাহেবের আশ্বাসে আমরা অনেক খুশি। আসলে কি বলে শোকরিয়া জানাবো তা আমাদের জানা নেই।

প্রসঙ্গত, গত বুধবার (৩০ অক্টোবর) ভর্তি পরীক্ষার ৪র্থ দিন দুপুর দেড়টার শাটল ট্রেনে স্ট্রোক করেন ওই অভিভাবক। প্রত্যক্ষদর্শীরা ঐ অভিভাবককে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান ডাক্তার মোহাম্মদ আবু তৈয়ব বলেন, ধারণা করা হচ্ছে স্ট্রোক করার পর মেডিকেলে আনার পথে তিনি মারা গেছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আমিলাস গ্রামে। বিষয়টি ক’দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তো বটেই, গণমাধ্যমেও বেশ নাড়া দিচ্ছে।

পরবর্তীতে সি ইউনিটের প্রকাশিত ফলে দেখা যায় তিন্নির চান্স হয়নি। তবে মানবিক বিবেচনায় সেই তিন্নির পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ওই ছাত্রীকে বিশেষ বিবেচনায় ভর্তির সুপারিশ করেছেন ফিন্যান্স বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। যাতে প্রাথমিকভাবে সম্মতি দিয়েছেন অনুষদের ডিন। দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে ড. মোহাম্মদ শামীম জানান, ‘মেয়েটার হয়তো চান্স হয়নি। তবে আমরা মানবিক বিবেচনা করছি। আমরা তিন্নিকে শর্তহীনভাবে ভর্তি করানোর চেষ্টা করছি।’

অধ্যাপক শামীম বলেন, ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আমি উত্থাপনি করেছি; যদিও তা চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে অনুষদের ডিন ও সকল বিভাগের চেয়ারম্যানরা রাজি হয়েছে। যেহেতু এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক ভর্তি প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ বডিই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেবেন। মানবিক দৃষ্টিকোন থেকে ওই ছাত্রীটিকে ভর্তি করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি অনুরোধ জানান ওই শিক্ষক।

ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সচিব ডেপুটি রেজিস্ট্রার এস এম আকবর জানান, এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও তাকে কিছু জানানো হয়নি। সিদ্ধান্ত হলে বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।

এদিকে ওই ছাত্রীর ভর্তির বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্তে চবি শিক্ষার্থীদের অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। স্নেহ চৌধুরী লিখেছেন, আলহামদুলিল্লাহ। মেয়েটা জান প্রাণ দিয়ে পড়ে ভবিষ্যৎ এ দেখবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করবে। কেনোনা এখানেই তার বাবার শেষ বিদায় ছিল।’ তিনি আরো লিখেছেন, এটাই হচ্ছে বাবা! মারা যেয়েও সন্তানের মঙ্গল করে গেলো! চোখে পানি চলে আসলো ! (যদিও আমি চান্স পাইনি) তবুও খুব খুশি লাগছে! আল্লাহ যা করেন অবশ্যই ভালোর জন্যই করেন। যেকোনো খবরেই বলতে হয় আলহামদুলিল্লাহ!

সহকারী প্রক্টরের সূত্র দিয়ে একজন লিখেছেন, ‘আল্লাহামদুল্লিল্লাহ মানবতা ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন তিন্নি দাসের বাবার হৃদয়বিদারক মৃত্যুতে মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ডিন স্যারসহ সকল চেয়ারম্যানগণ তিন্নি দাসকে ব্যবসায় অনুষদে যে কোন সাবজেক্টে নিঃশর্ত ভর্তির সুপারিশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

 

 


সর্বশেষ সংবাদ