শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নভঙ্গ, শুধু বাঁচতে চান রুমাইনা

  © টিডিসি ফটো

সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল কুড়িগ্রামের রুমাইনা নাসরিনের। এখন হাসপাতালের বেডে শুয়ে জীবন-মৃত্যুর মাঝে অবস্থান করছেন তিনি। এখন শুধু একটু বাঁচার আকুতি।

রুমাইনা নাসরিন কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পৌর এলাকা মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মৃত মিছির আলীর মেয়ে। গত ২২ অক্টোবর দু’চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকের মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য বাসা থেকে বের হন।

ছোট ভাই রোকনকে সঙ্গে নিয়ে উলিপুর থেকে কুড়িগ্রাম সদরে থ্রি-হুইলারযোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসছিলেন তারা। আনন্দবাজার এলাকায় পৌঁছলে থ্রি-হুইলারকে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় একটি বাস। এতে থ্রি-হুইলার থেকে ছিটকে পড়ে মারাত্মক আহত হওয়ার পাশাপাশি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন রুমাইনা। এ সময় তার ছোট ভাই রোকনও আহত হয়। এ সড়ক দুর্ঘটনায় সবকিছু এলোমেলা হয়ে যায় রুমাইনার। ওই দিনই গুরুতর অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে এখনো আশঙ্কামুক্ত নন রুমাইনা।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গুরুতর আঘাতে রুমাইনার মেরুদণ্ডের হাড় ভেঙে গেছে। পাশাপাশি স্পাইনাল কর্ড ছিঁড়ে প্রস্রাব-পায়খানার রাস্তা একত্রিত হয়ে গেছে। সময় মতো উপযুক্ত চিকিৎসা করাতে না পারলে আর কখনো উঠে দাঁড়াতে পারবেন না রুমাইনা। বাকি জীবন তাকে হুইলচেয়ারে বসে কাটাতে হবে।

বর্তমানে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের ১৮নং ওয়ার্ডের ৪৩ নম্বর বেডে ভর্তি রয়েছেন রুমাইনা নাসরিন। নিউরোসার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজকুমার রায়ের তত্ত্বাবধানে রয়েছেন রুমাইনা।

রুমাইনা নাসরিনের মেজো ভাই খোকন আহমেদ বলেন, আমরা অনেক আগেই বাবাকে হারিয়েছি। বৃদ্ধা মা হোসনে আরা বেগম আমাদের সাত ভাই-বোনকে লালন-পালন করেছেন। সাত ভাই-বোনের মধ্যে রুমাইনা ষষ্ঠ। তার মাত্র দেড় বছর বয়সে বাবা মারা যান। এরপর থেকে আমাদের সংসারে অভাব। বসতবাড়ির ভিটা ছাড়া আমাদের কিছুই নেই।

খোকন আহমেদ বলেন, পড়াশোনা করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল রুমাইনা। সংসারে অভাবের মধ্যেও পড়াশোনা চালিয়ে গেছে সে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছে রুমাইনা। এরপর থেকে সরকারি চাকরি খুঁজছিল। এবার প্রাথমিক শিক্ষকের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় রুমাইনা। ২২ অক্টোবর ভাইভার জন্য কুড়িগ্রাম আসার পথে ঘটে গেল দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনায় সব এলোমেলো হয়ে গেল। ভেঙে গেল তার স্বপ্ন।

চিকিৎসকরা বলেছেন, রুমাইনার অপারেশন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রায় ১৫ লাখ টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে তার চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই আমাদের।

তিনি বলেন, এমন অবস্থায় পরিবারের সবাই দিশেহারা হয়ে পড়েছি। এত টাকা আমরা কোথায় পাব জানি না। আমার বোনকে বাঁচাতে সরকার এবং দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতা চাই। একজন অসহায় ভাই হিসেবে আমি সবার কাছে হাত পাতছি, আপনারা আমার বোনের চিকিৎসায় সহায়তার হাত বাড়ান।

রুমাইনা নাসরিনকে সহায়তা পাঠানোর ঠিকানা- অগ্রণী ব্যাংক, রংপুর শাখা, অ্যাকাউন্ট নম্বর (০২০০০১৪৩৫৮০২২)। রুমাইনার ভাইয়ের ব্যক্তিগত বিকাশ নম্বর (০১৫১৬-১৪৪৭৯০), নগদ (০১৯৬২৬৪১৭০৮)।


সর্বশেষ সংবাদ