ব্যাংকে নিয়োগ: কেউ পায় একাধিক পদে সুযোগ, কেউ পায় না

  © সংগৃহীত

সমন্বিত ব্যবস্থায় সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রত্যাশা করছে চাকরিপ্রত্যাশীরা। রাজনৈতিক প্রভাব কাটিয়ে মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছ নিয়োগ চায় তারা। সমন্বয়হীনতার কারণে কেউ একাধিক পদে চাকরির সুযোগ পেলেও অনেকে সুযোগই পাচ্ছে না। যারা একাধিক পদে সুযোগ পাচ্ছে তারা অপেক্ষাকৃত ভালো বেতনের পদে যোগদান করায় জুনিয়র পদটি শূন্য থাকছে।

আবার ছোটখাটো কোনো ঘটনার জেরে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশ উচ্চ আদালতে রিট করে নিয়োগপ্রক্রিয়ায় স্থগিতাদেশ আরোপ করায় দীর্ঘসূত্রতায় পড়ছে পুরো কার্যক্রম। এসব ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা অতিক্রম করে নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হতে লেগে যাচ্ছে আড়াই থেকে তিন বছর। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে চূড়ান্ত নিয়োগ (পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক) পাওয়ার পরও চাকরিতে যোগদান করতে পারছে না।

নিয়োগসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, যে কেউ ক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে যেতেই পারে। তবে তা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে প্রতিবছর ব্যাংকগুলোতে জনবলের চাহিদা থাকলেও দীর্ঘসূত্রতার কারণে দ্রুত নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। রিটের যৌক্তিকতা বিবেচনা এবং কর্মসংস্থানের বিষয়টি আমলে নিয়ে দ্রুত রিট নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

চাকরিপ্রত্যাশীরা বলছে, ব্যাংকে সিনিয়র পদ থেকে জুনিয়র পদে নিয়োগে ফল প্রকাশে সমন্বয় নেই। চাকরির পরীক্ষায় বসতে ভালো প্রস্তুতিসম্পন্ন প্রার্থী একাধিক পদে সুপারিশ পাচ্ছে, কিন্তু সিনিয়র পদে যোগদান করায় জুনিয়র পদটি শূন্য থাকছে।

তাদের পরামর্শ, সিনিয়র পদগুলোতে আগে ফল প্রকাশ করলে সমন্বয়হীনতা দূর হবে। যে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ সুপারিশ পাবে তাকে বাদ রেখে অফিসার ও ক্যাশ অফিসার পদের ফল প্রকাশ করতে হবে। তাহলে অন্যরা যেমন চাকরির সুযোগ পাবে, তেমনি কোনো পদও শূন্য থাকবে না।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সূত্র জানায়, উচ্চশিক্ষা শেষ করা তরুণ-তরুণীদের বড় অংশের পছন্দের তালিকায় সরকারি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুলসংখ্যক জনবল নিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

উচ্চ আদালতে চাকরিপ্রত্যাশীদের একটি অংশের রিট জটিলতায় আটটি সরকারি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সাত হাজার ৩৭২ পদে নিয়োগের চূড়ান্ত ফল আটকে রয়েছে। রূপালী ও জনতা ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার, অফিসার ও ক্যাশ অফিসার পদে নিয়োগ নিয়ে রিট জটিলতায় এই বিড়ম্বনার সৃষ্টি। প্রায় ছয় মাস আগে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হলেও ফল প্রকাশিত হয়নি। এভাবে ২০ হাজারের বেশি চাকরিপ্রত্যাশী মৌখিক পরীক্ষা শেষ করে বর্তমানে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সূত্র বলছে, সমন্বিত নিয়োগে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ব্যাংকের সমমানের পদগুলো একত্রিত করে একসঙ্গে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নিয়োগ দেওয়া হবে। তবে একই প্রার্থীর একাধিক পদে চাকরি হওয়ায় অপেক্ষাকৃত জুনিয়র পদটি ফাঁকা থেকে যাচ্ছে। সে জন্য প্যানেল তৈরি করে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে শূন্যপদে নিয়োগ দেওয়া হবে।

প্যানেল তৈরিতে জোর তাগিদ:
চাকরিপ্রত্যাশীদের দাবি, বিজ্ঞপ্তির ঘোষিত পদে নিয়োগ সম্পন্ন করে অপেক্ষমাণ তালিকা তৈরি করতে হবে। নিয়োগের সুপারিশ পাওয়ার পরও যোগদান না করলে শূন্যপদের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে নিয়োগ দিতে হবে। বিশেষ করে জুনিয়র পদের নিয়োগ প্যানেল তৈরি খুব জরুরি। এসব পদে নিয়োগের সুপারিশ পেলেও অনেকে সিনিয়র পদের জন্য পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ ক্ষেত্রে জুনিয়র পদ বেশি শূন্য থাকে।

ব্যাংক থেকে চাহিদাপত্র মার্চেই:
রাষ্ট্রমালিকানার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর মার্চ মাসের মধ্যে জনবল নিয়োগের চাহিদাপত্র পাঠায় সিলেকশন কমিটিতে। সব ব্যাংকের পৃথক চাহিদাপত্র একত্রিত করে সমমানের পদে নিয়োগ দিতে একসঙ্গে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তবে অনেক ব্যাংক চাহিদাপত্র দিতে কালক্ষেপণ করে। এতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশে বিলম্ব হয়। নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করতেও সময় লাগে।

প্যানেলের মেয়াদ:
চাকরিতে নিয়োগ পেতে ঘোষিত পদে নিয়োগের বাইরে অপেক্ষমাণদের প্যানেল তৈরি করা হয়। কিন্তু চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পরও চাকরিতে যোগদান না করলে পদটি শূন্য থাকে। এই প্যানেলের মেয়াদ ছয় মাস থেকে এক বছর করার চিন্তা করছে কমিটি। এই সময়ের মধ্যে ব্যাংকের শূন্যপদের তালিকা না এলে প্যানেল ভেঙে দেওয়া হবে। নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হলে সেখানে আবারও প্যানেল তৈরি করা হবে।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের ডিজিএম আরিফ হোসেন খান বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার বিষয়টি আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা বিষয়টি সমন্বিতভাবে করতে কাজ করছি। সে অনুযায়ী সিনিয়র পদের ফল আগে প্রকাশ করা হবে।’

সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, পদ শূন্য হলে ব্যাংক তালিকা দ্রুত পাঠায় না। অনেক সময় ক্ষেপণ করে। দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে শূন্যপদের তালিকা পাঠাতে। তারা দ্রুত তালিকা দিলে প্যানেল থেকে অনেক চাকরিপ্রত্যাশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।