৩৫ দাবিতে ফের সরগরম মাঠ, আন্দোলনে চাকরিপ্রার্থীরা

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর দাবিতে ফের মাঠে নেমেছে চাকরিপ্রার্থীরা। এজন্য প্রচার-প্রচারণায় ইতোমধ্যেই ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ঘুরছেন তারা। বুঝাচ্ছেন দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামার। তথ্যমতে, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদের ব্যানারে ইতোমধ্যেই মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে একটি প্ল্যাটফর্ম। আগামী ৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ। এজন্য দফায় দফায় বৈঠক করছেন তারা। কাজ করছে সঞ্জয় দাস নেতৃত্বাধীন ৩৫ চাই আন্দোলনকারীদের গ্রুপটিও। তারাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে জনমত গড়ে তুলছেন।

প্রত্যেকটি গ্রুপ বলছেন, ৩৫ চাই দাবিতে সর্বাত্মক আন্দোলন গড়ে তুলতে তাদের সমাবেশ গণজামায়েত রূপ নেবে। জেলাভিত্তিক কর্মসূচিও রয়েছে। আশা করা যায়, সফলতা আসবে।

সূত্রমতে, টানা কয়েক বছর ধরে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। তবে এখন পর্যন্ত শুধু হতাশই হতে হয়েছে তাদের। সম্প্রতি কোটা সংস্কার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখলেও এখনো চলছে ‘৩৫ চাই’ আন্দোলন। চলতি বছরে এসেও কয়েক দফা কর্মসূচি পালন ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে গ্রেফতারের ঘটনাও। জাতীয় সংসদে কণ্ঠভোটে নাকচ হয়েছে ৩৫-এর সব চাওয়া-পাওয়া। তবে আন্দোলন থেকে সরে আসেননি আন্দোলনকারীরা।

এর আগে অবশ্য নেতারা বলেছিলেন, সারাদেশের ৩৫ প্রত্যাশীরা এক হয়েছেন; যেখানে কোন গ্রুপিং নেই। দ্বন্দ্বের সব গ্রুপ মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে বিক্ষোভে নামার পরিকল্পনা করছেন তারা। যদিও সেই রূপ এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। আন্দোলনকারীরা বলছেন, যৌক্তিক এই দাবিতে সবার সম্মতি রয়েছে। তাই শক্তিশালী ও জোরালোভাবে আমাদের চাওয়া উপস্থাপন করতে পারলে শ্রীঘ্রই একটি সুখবর পাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছেও দাবির উপস্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।

আন্দোলনকারীরা বলছেন, চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়স বৃদ্ধি। ২০১১ সালে সরকারি চাকরিতে সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স দুই বছর বাড়িয়ে ৫৯ বছর করা হয়। আর মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যে করা হয় ৬০ বছর। তাহলে চাকরি শুরু করার বয়স বাড়ানো হবে না কেন?

তথ্যমতে, পাকিস্তান আমলে চাকরি শুরুর বয়স ছিল ২৫ বছর। নতুন দেশে সরকারি চাকরি করার জন্যে দক্ষ লোক পাওয়া যাবে না বলে সেটা বাড়িয়ে ২৭ করা হয়েছিল। পরে ১৯৯১ সালে সেটাও তো বাড়িয়ে ৩০ করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্যে বর্তমানে চাকরি শুরু করার বয়স ৩০ হলেও মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, উপজাতি কোটায় এই বয়স ৩২ আর নার্সের চাকরির জন্যে ৩৬।

এদিকে চার দফা দাবিতে গতকাল শুক্রবার আন্দোলন করেছেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদ। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন ও সমাবেশ করে তারা। সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজীর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সুরাইয়া ইয়াসমিন, ইবনে তানজির, দীন মোহাম্মদ, ইতি রহমান, ফেরদৌস জিন্নাহ লেলিন, বিনয় মল্লিক, কুমারী মৌসুমি প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে চার বছরের অনার্স শেষ করতে পাঁচ থেকে সাত বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। যদিও বর্তমান সময়ে এসে এ জট কিছুটা কমেছে। শিক্ষার্থীদের অনেকেই লেখাপড়া শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই তাদের বয়সসীমা শেষ হয়ে যায়। এ অবস্থায় সে চাকরির প্রতিযোগিতার অংশ নেয়ার সুযোগ হারিয়ে ফেলে। বাড়তে থাকে বেকারের সংখ্যা।

ইতি রহমান জানান, চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা ৩৫সহ চার দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে একটি সুষ্ঠু মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হল। পর্যায়ক্রমে জেলাভিত্তিক মানববন্ধনগুলোও অনুষ্ঠিত হবে। তিনি সাধারণ ছাত্রকল্যাণ পরিষদ উত্থাপিত চার দফা দাবি সরকার অনতিবিলম্বে মেনে নিয়ে নিরীহ বেকার যুবসমাজের মুখে হাসি ফোটানোর আহ্বান জানান।

এ বিপুল সংখ্যক বেকারকে বাদ দিয়ে মধ্যম বা উন্নত দেশের স্বপ্ন কখনোই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তাই চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করা সময়ের দাবি। আমরা আশা করব, অনতিবিলম্বে সরকার আমাদের দাবি মেনে নেবে। দাবিগুলো হল : সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা বাড়িয়ে ৩৫ বছরে উন্নীত করা, চাকরির পরীক্ষার আবেদন ফি কমিয়ে ৫০ থেকে ১০০ টাকায় নামিয়ে আনা, নিয়োগ পরীক্ষাগুলো জেলা বা বিভাগীয় শহরে নিয়ে যাওয়া এবং তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করা।


সর্বশেষ সংবাদ