বিয়ের পূর্বশর্ত বিসিএস ক্যাডার, কী করলেন প্রকৌশলী?

চাকরির বাজারে তরুণদের পছন্দের প্রথমদিকে থাকা বিসিএস ক্যাডার হলেই তাদের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে। এমনই শর্ত জুড়ে দেন ইঞ্জিনিয়ার ইমরান এইচ সম্রাটের প্রেমিকার মা-বাবা। প্রথমে শর্ত শুনে বিব্রত হলেও ঝাঁপিয়ে পড়েন লক্ষ্য অর্জনে। প্রতি সেমিস্টারে অতিরিক্ত সাবজেক্ট নিয়ে দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। অতপর কি হলো, জেনে নেয়া যাক সম্রাটের কাছে থেকে-

বউ যখন আমার প্রেমিকা, তখন আমার বর্তমান শাশুড়ি তার মেয়েকে বিয়ে করার পূর্বশর্ত দিলেন তাড়াতাড়ি গ্রাজুয়েশন শেষ করে বিসিএস ক্যাডার হয়ে তারপর তার কাছে যেতে। কারণ তাদের ফ্যামিলিতে সবাই নাকি বিসিএস ক্যাডার আত্মীয় স্বজন সবাই, কাজেই জামাই বিসিএস না হলে কোনোভাবেই সম্ভব না। বিরাট বিপদে পড়ে গেলাম শর্ত শোনার পরে। আর ঠিক ওই সময় আমি পুরোদমে রাজনীতির সাথে জড়িয়ে মোটামুটি ভার্সিটিতে কয়েকটা বিষয়ে রিটেকও খেয়ে বসে আছি।

এমতাবস্থায় সঠিক সময়ে ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করাটাই বিরাট বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, তারপর আবার ভালো চাকরি, ভালো বেতন, বিসিএস, বিয়ের প্রস্তুতি, দুই পরিবারের সবাইকে ম্যানেজ করা; সব মিলিয়ে মাথায় প্রচন্ড প্রেসার। তবুও মনস্থির করলাম ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেব না।

জয়াকে বুঝিয়ে ধরাবাধা সময় এক বছর থেকে বাড়িয়ে খুব কস্টে তার ফ্যামিলি থেকে ২ বছর পর্যন্ত করলাম। শুরু করলাম এক নতুন যুূদ্ধ। যেই আমি প্রতি সেমিস্টারে কম বিষয় নিয়েও রিটেক খাইতাম, সেই আমিই ডাবল পরিমাণ সাবজেক্ট নিয়ে ভালো রেজাল্ট করে পাস করেছি অনায়াসে।

যেখানে ডিপার্টমেন্টে থেকে ১৬ ক্রেডিটের উপরে দেয় না, সেখানে ১৮-১৯ ক্রেডিট করে নিয়ে তাড়াতাড়ি শেষ করেছি। ইন্টার্নির সময় চাকরি নিয়েছি আবার ইন্টার্নি, রিপোর্ট, ভাইভার হিউজ প্যারাও খেয়েছি। তবুও জীবনে নিজের যোগ্যতায় পাওয়া প্রথম চাকরিটা ছাড়িনি, খুব মায়া লাগতো চাকরিটার প্রতি।

ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লিটেড কিন্তু এখন এমন নন-ডিপার্টমেন্টাল জব তারাতো মেনে নেবেন না, যেটা নিয়ে পড়াশোনা করেছি ওই রিলেটেড ভালো জব লাগবে। চেষ্টা করতে থাকলাম একের পর এক, ওয়েল রিফাইনারি প্লান্টের ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ঢাকা ছেড়ে সুদূর চট্টগ্রামে চলে গেলাম। আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো ছিলো জবটা, কিন্তু এখন পরবর্তী স্টেপ বিসিএস লাগবো তাদের!

এদিকে সময়ও প্রায় শেষ ২ বছরের শেষের দিকে, আমিও নাছোড়বান্দা মানুষ। সব শর্ত পূরন করছি, ৩৮তম বিসিএসে আবেদনও করেছি, কিন্তু তারা পরীক্ষা নিতে দেরি করলে আমার কি দোষ, বিয়ে দুই বছরের ভিতরেই করবো কথা যা কথাই! ফ্যামিলিকে ম্যানেজ করলাম খুব কষ্টে, তারপর ফ্যামিলিগতভাবেই ৫ বছরের প্রেমের অবসান ঘটিয়ে অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ করলাম গার্লফ্রেন্ডকে।

তারপর বউ ছাড়াতো আর ভালোলাগে না, তাকেও পড়াশোনা বাদ দিয়ে চট্টগ্রামেও নিতে পারি না, আবার আমিও চাকরিটা ছেড়ে আসতে পারি না। মহাবিপদ! মন ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না, দিলাম চাকরি ছাইড়া। কিন্তু ইমোশন দিয়ে যে জীবন চলে না, সেইটা চাকরিটা ছাড়ার পরে বুঝতে পারলাম। অনেক কথা শুনলাম অনেকের কাছে। ব্যথিত হয়েছিলাম ঠিকই, তাতে হেরে যাইনি। ঢাকাতেই ১৮ দিনের মাথায় BEXIMCO GROUP এ জয়েন করলাম, যেটা পূর্বের চাইতেও ভালো কোম্পানি নিঃসন্দেহে। আলহামদুলিল্লাহ এখানে যথেষ্ট ভালোই আছি।

যাক এখন মূল কথায় আসি।
সেদিন আমার বউ বলছে ৪০তম বিসিএসটা দিবা না তুমি?
আমি বললাম না, কেন?
সে বললো না আসলে আম্মা জিজ্ঞাসা করছিলো তো তাই!
আমি বললাম, নির্বাচনে জেতার পর কোনদিন কাউকে দেখছো নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে?

ইঞ্জি. ইমরান এইচ সম্রাট, সাবেক শিক্ষার্থী
ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এন্ড টেকনোলজি


সর্বশেষ সংবাদ