রাশিয়া প্রথম করোনার টিকা তৈরি করেছে: পুতিন

টিকা নিলেন পুতিন কন্যা

  © ফাইল ফটো

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, তাঁর দেশই প্রথম করোনার টিকা তৈরি করেছে। আজ মঙ্গলবার পুতিন করোনার টিকা সম্পর্কে বলেন, রাশিয়া যে টিকা তৈরি করেছে, তা স্থায়ী বা টেকসই প্রতিরোধী সক্ষমতা দেখাতে সক্ষম। বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, রাশিয়ায় মন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও সম্মেলনে পুতিন টিকার তথ্য জানান। ওই ভিডিও সম্মেলন টেলিভিশনে সম্প্রচার করা হয়।

ভিডিও সম্মেলনে পুতিন বলেন, ‘আজকের সকালে বিশ্বে প্রথম নতুন করোনাভাইরাসের জন্য প্রথম টিকা নিবন্ধন করা হলো।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বর্তমানে বিশ্বে ছয়টি সম্ভাব্য টিকা মানবপরীক্ষার তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি টিকা রাশিয়ার।

এর আগে রয়টার্স জানায়, রাশিয়ায় অনুমোদন পেতে যাওয়া টিকাটি যৌথভাবে তৈরি করেছে দেশটির গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। টিকাটি এতে নিরাপদ হিসেবে প্রমাণিত হলে তা স্বাস্থ্যকর্মী ও দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের প্রথমে প্রয়োগ করা হবে। নিবন্ধন দেওয়ার পর টিকাটি আরও ১ হাজার ৬০০ মানুষের ওপর প্রয়োগ করে এর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা হবে।

স্পুতনিক নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল মাসে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন দেশটির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ওষুধের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার সময় সংক্ষিপ্ত করার আদেশ দেন। এর মধ্যে করোনার টিকার পরীক্ষার বিষয়টিও ছিল। শুরুতে গত ১৭ জুন টিকাটি ৭৬ জন স্বেচ্ছাসেবীর ওপর প্রাথমিক পরীক্ষা হয়। তাঁদের মধ্যে অর্ধেককে তরল টিকা ইনজেকশনের মাধ্যমে পুশ করা হয় আর বাকি অর্ধেককে দ্রবণীয় পাউডার হিসেবে টিকাটি দেওয়া হয়। দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করে, প্রাথমিক পরীক্ষার ফলাফলে দেখা গেছে, পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির শরীরে প্রতিরোধী সক্ষমতা তৈরি হয়েছে। এ টিকার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা তাসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রাশিয়ার শিল্পমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমরা টিকাটির ব্যাপক উৎপাদনে যাওয়ার জন্য সময় গুনছি।’

গত মঙ্গলবার অবশ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে রাশিয়াকে টিকা তৈরিতে সব ধরনের নীতিমালা মানার আহ্বান জানানো হয়। মস্কো দ্রুত টিকা তৈরির পরিকল্পনা জানানোর পর এর নিরাপত্তা কার্যকারিতা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হওয়ায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানানো হয়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ান লিন্ডমেয়ার জেনেভায় জাতিসংঘের এক আয়োজনে বলেছেন, প্রতিষ্ঠিত নীতিমালা ও চর্চা আছে। টিকা খুঁজে পাওয়া বা টিকা কীভাবে কাজ করে, তা জানা ও টিকা তৈরির সব কটি ধাপের মধ্য দিয়ে যাওয়ার মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে।

গামেলিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকা ছাড়াও রাশিয়ার ভেক্টর স্টেট রিসার্চ সেন্টার অব ভাইরোলজি অ্যান্ড বায়োটেকনোলজির পক্ষ থেকেও টিকা তৈরির কথা জানানো হয়েছে।

টিকা তৈরি ও পরীক্ষা করতে যেখানে কয়েক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়, সেখানে অনেকটা রাতারাতিই শতভাগ সফল টিকা তৈরি নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নিউইয়র্ক পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্কোতে কিছু স্বাস্থ্যকর্মী ও সরকারি কর্মকর্তাকে টিকা নেওয়ার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাশিয়ার দাবি, এটা বিশ্বের প্রথম কোভিড-১৯ টিকা। ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় এটি নিরাপদ প্রমাণিত হওয়ার পর তা গ্রহণে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মস্কোভিত্তিক গামেলিয়া ইনস্টিটিউটের তৈরি টিকাটি গ্রহণের জন্য একটি হাসপাতাল স্বাস্থ্যকর্মীদের তালিকা করেছে। স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে সরকারি কর্মকর্তারাও টিকা গ্রহণের চিঠি পাওয়ার কথা বলেছেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, আগামী অক্টোবরে জনগণের বড় অংশের মধ্যে টিকা প্রয়োগের প্রস্তুতি নিচ্ছে রাশিয়া। দেশটির সরকার এমন তথ্য জানিয়েছে। রাশিয়ার শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ডেনিস মানতুরভ দেশটির তাস সংবাদ সংস্থাকে জানান, ২০২১ সালের মধ্যে প্রতি মাসে তাঁরা কয়েক লাখ টিকার ডোজ তৈরি করবেন বলে আশা করছেন।


সর্বশেষ সংবাদ