মায়েদের ছবি এঁকে ছেলের সোনা জয়, দেখে যেতে পারেননি মা!

  © সংগৃহীত

গ্রামের কেউ সাদা জামা আর লাল স্কার্ট পরে বারান্দায় ঝাড়ু দিচ্ছেন, ঠিক সে সময়ই অন্য একজন কিছু দূরে পোষা গরুদের সামলানোর চেষ্টা করছে, আবার গ্রামের অন্য কোনো প্রান্তে দুপুর বেলা চাষের জমি নিয়ে ব্যস্ত দুই নারী। এঁরা সবই মা। একটা গ্রামে সারাদিন ধরে বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকা মায়েরা। নিজের গ্রামের মায়েদের বিভিন্ন রূপ রং-তুলির ক্যানভাসে তুলে ধরে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম হল ১৪ বছরের এক কিশোর।

তবে প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কার যার জন্য, যে মাকে মনে করে তার এই ক্যানভাস সেই মা-ই তার পুরস্কৃত হওয়াটা দেখতে পেলেন না। তার আগেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার। যে ছবিটি সে ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে, সেটা নয় বছর বয়সে এঁকেছিল অনুজাত সিন্ধু বিনয়লাল নামের ওই কিশোর।

ভারতের কেরলের ত্রিশূর জেলায় জন্ম অনুজাতের। কোনো প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্যে তার ছবি আকার নয়। নিজের মায়ের প্রতি ভালবাসাতেই সে মায়ের জন্য এই ছবি এঁকেছিল। গ্রামের বিভিন্ন মায়েদের বিভিন্ন রূপ রং-তুলির ক্যানভাসে তুলে ধরে আসছিল সে। তার সবসময় আঁকার প্রতি খুব আগ্রহ। ছোট থেকেই সে তার চারপাশে যা দেখতো, ক্যানভাসে সেটাই ফুটিয়ে তুলত।

তার ছবি আঁকার হাতটা প্রশিক্ষণ ছাড়াই সে খুব ভাল ছবি আঁকত। এজন্য তার মা- বাবা তার ছবি আঁকার জন্য আলাদা করে কোনো প্রশিক্ষণ দেয়ার প্রয়োজন বোধ করেননি। তার ছবি আঁকার মধ্যে যেমন তার বইয়ের দিকে হেঁটে আসছে পিঁপড়ের দল, বাগানে ঢুকে ফল খেয়ে ফেলছে ছাগল... এ রকম নিত্যদিন ঘটে চলা নানা বাস্তব চিত্র সুন্দর করে রঙে ভরিয়ে তুলত সে।

তার গ্রামের মায়েদের ক্যানভাসটাও ঠিক এমন ছিল। ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক মানের আঁকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছিল দিল্লিতে। একটি বই প্রকাশনী সংস্থা এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। ছেলে অনুজাতের আঁকা ওই ছবিটা তার বাবা প্রতিযোগিতায় দিয়ে দেন। আর তাতেই ধরা দেয় সাফল্য।
সেই প্রতিযোগিতার ফল জেনেছিল তার মা। তবে মেডেল এবং সার্টিফিকেট দেখে যেতে পারেননি। আগেই মায়ের মৃত্যু হয়েছে।

বর্তমানে ১৪ বছর বয়স অনুজাতের। এর মধ্যে অনেকগুলো পুরস্কার জিতে নিয়েছে সে। ২০১৩ সালে এশিয়ার সবচেয়ে বড় অঙ্কন প্রতিযোগিতায় সে বেস্ট আউটস্ট্যান্ডিং আর্টিস্ট হয়েছে। ২০১৪ সালে কেরল টুরিজমের ক্লায়েন্ট মেমরিয়াল ইন্টারন্যাশনাল পেন্টিং প্রতিযোগিতা জেতে।

এমন ঘটনার পর দেশও তাকে সম্মানিত করেছে। তবে তার পরিবারের কাছে সবচেয়ে গর্বের মুহূর্ত ২০১৬ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে ন্যাশনাল চাইল্ড অ্যাওয়ার্ড নেয়া।

মায়ের মৃত্যুর পর আর কোনো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়নি অনুজাত। সে এখন শুধু নিজের জন্য আঁকে। আর আঁকে তার মায়ের জন্য। অনুজাতের কথায়, “মা আমাকে সব সময় উৎসাহ দিত যাতে আমার প্রতিটা ছবি আগের থেকেও ভাল হয়।”


সর্বশেষ সংবাদ